বন্দি বাবা, তবু উৎফুল্ল জায়রা
ছোট্ট ফুটফুটে একটা বাচ্চা। এখনো ভালো করে কথা বলতে পারে না। কিন্তু চোখ আর ঠোঁট দিয়ে রাজ্যের সব ভাববিনিময় সেরে নিতে কোনো অসুবিধা হয় না তার। আদর করার অনুভূতির যেন সবটুকুই বোঝে সে। সামনে যে কেউ হাত বাড়িয়ে দিলেই উড়ে আসতে চায়। বাবা-মা হলে তো কথাই নেই।
কত দিন বাবাকে দেখে না জায়রা আফরিন। অথচ আজ বাবাকে কাছে পেয়েও তার কোলে যেতে পারছে না। কিন্তু তাতে কী? বাবার কোলে যাওয়ার জন্য কান্নাকাটি নেই। বাবা দাঁড়িয়ে আছে সামনের লালসালু ঘেরা আদালতের কাঠগড়ায়। একটু দূরে মায়ের কোলে বসে বন্দি বাবার মুখের দিকে অনিমেষ চেয়ে আছে জায়রা। চোখে-মুখে আনন্দের ঝিলিক, উৎফুল্ল ভাব। যেন বাবা বন্দিমুক্ত হলেই কোলে তুলে নেবে তাকে, সেই আশায়।
গতকাল মঙ্গলবার জায়রা আফরিন মায়ের কোলে করে এসেছিল ঢাকার অতিরিক্ত মুখ্য বিচারিক হাকিম মারুফ চৌধুরীর আদালতে। সেই আদালতেই চলছে তার বাবা-মায়ের বিচ্ছেদের মামলা। যা এখনকার সমাজের কোনো অস্বাভাবিক ঘটনা নয়। জায়রা তো আর এত কিছু বোঝে না। সে শুধু অনেক দিন ধরে না দেখা বাবাকে দেখছে।
শুনানি শেষে জায়রার বাবা মনসুর উদ্দিনকে আপসের শর্তে জামিন দিয়েছেন আদালত। কাঠগড়া থেকে বেরিয়ে এসে মনসুর মেয়ে জায়রাকে কোলে তুলে নেন। চুমু খান। অবুঝ মেয়েটিও যেন ততক্ষণে বুঝে গেছে, বাবা মুক্ত। জগতের সবকিছু বাদ দিয়ে বাবার সঙ্গে খুনসুটিতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে সে। তখন আদালত প্রাঙ্গণে এক আবেগঘন পরিবেশ তৈরি হয়।
আদালতের সরকারি কৌঁসুলি আনোয়ারুল কবির বাবুল এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘ঢাকার মুখ্য বিচারিক হাকিমের আদালতে গত সপ্তাহে জায়রার নানু ইদ্রিস আলী ২০ লাখ টাকা প্রতারণার অভিযোগে মামলা করেন। সে মামলায় আদালত থেকে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করলে জায়রার বাবা মনসুর উদ্দিন আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিনের আবেদন করেন। শুনানি শেষে বিচারক মনসুর উদ্দিনকে কারাগারে পাঠান। সে মামলায় আদালতে জামিনের আবেদন করলে মনসুরকে আদালতে হাজির করে পুলিশ। পরে বিচারক আপসের ভিত্তিতে জামিন দেন।’
মনসুর উদ্দিন ইসলামী ব্যাংক চাকতাই শাখার সহকারী কর্মকর্তা হিসেবে কর্মরত। মনসুর তাঁর স্ত্রীকে তালাক দেওয়ার পরে প্রতারণার অভিযোগে মামলা করা হয়।
মামলার আইনজীবী মাহফুজ আহমদ বলেন, ‘ছোট্ট মেয়েটি মামলা বোঝে না, আদালত বোঝে না, উকিলবাবুদের তর্কাতর্কি বোঝে না; শুধু বোঝে বাবা-মায়ের আদর। ওর বাবা-মায়ের প্রায় নড়বড়ে সংসারে শান্তি আসুক। সে তার বাবা-মায়ের স্নেহ পাকা, সেটাই প্রত্যাশা করি।’