পিতৃহত্যার বিচারের দাবিতে রাজপথে শিশু তামান্না
সমকাল সাংবাদিক আবদুল হাকিম শিমুল হত্যার বিচারের দাবিতে কালো পোশাক গায়ে, কালো পতাকা হাতে রাজপথে মিছিল করেছে তাঁর মেয়ে দ্বিতীয় শ্রেণির ছাত্রী তামান্না ফাতেমা (৬)।
রোববার সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরে শিমুলের দ্বিতীয় হত্যা বর্ষিকীতে সাংবাদিক, পেশাজীবীসহ সর্বস্তরের মানুষের অংশগ্রহণে হওয়া শোক মিছিলের নেতৃত্বে ছিল শিশু তামান্না।
বাবা হত্যার বিচার চেয়ে স্লোগান দিতে দিতে প্রায় দেড় কিলোমিটার পথ হেঁটে যায় তামান্না। সড়কের দুপাশের মানুষ শোক আর সহানুভূতি নিয়ে তাকিয়ে ছিল ছোট্ট শিশুটির দিকে।
তামান্নার দাবি, তার বাবাকে যারা গুলি করে হত্যা করেছে তাদের ফাঁসি দেওয়া হোক। হত্যাকাণ্ডের দুই বছর পেরিয়ে গেলেও এখনো কেন হত্যাকারীদের বিচার হয়নি, এ ব্যাপারে বাবার সহকর্মীদের কাছে প্রশ্ন তোলে সে।
মিছিল শেষে মা ও ভাইকে নিয়ে বাবার প্রতিকৃতিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানায় তামান্না। এ সময় উপস্থিত সবার চোখ ভিজে ওঠে।
তামান্নার মুখোমুখি হলে কান্না জড়ানো কণ্ঠে সে বলে, ‘বাবা এখন আর আমাকে আদর করে না। আমাকে ডাকেও না। বাবাকে আর দেখি না। ওরা আমার বাবাকে গুলি করে মেরেছে। আমি এর বিচার চাই।’
তামান্নার মা নুরুন্নাহার বেগমও স্বামী হত্যার বিচার দাবি করে বলেন, ‘গত দুই বছরেও আমার স্বামীর হত্যার বিচার না হওয়ায় দুটি নাবালক সন্তান নিয়ে উৎকণ্ঠার মধ্যে আছি। মামলার প্রধান আসামি শাহজাদপুর পৌরসভার মেয়র হালিমুল হক মীরু কারাগারে থাকলেও তাঁর ভাই হাবিবুল হক মিন্টুসহ অভিযোগপত্রভুক্ত অন্য ৩৭ আসামি জামিনে মুক্ত আছে। তারা বিভিন্ন সময় আমাকে হুমকি দিচ্ছে। মীরুও জামিনে মুক্ত হওয়ার চেষ্টা করছে। সে মুক্ত হলে হয়তো আর বিচারই পাব না।’
মামলাটি বর্তমানে কী অবস্থায় আছে জানতে চাইলে শাহজাদপুর প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক শফিকুজ্জামান শফি বলেন, ‘সাংবাদিকদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে গত বছর জেলা প্রশাসক কামরুন নাহার সিদ্দিকা মামলাটি দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে স্থানান্তরের জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সুপারিশ করেন। কিন্তু আজও এ ব্যাপারে মন্ত্রণালয়ের অনুমতি পাওয়া যায়নি। আমাদের একটাই দাবি, মামলাটি দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে স্থানান্তর করা হোক।’
এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনাটিকে নানাভাবে অবহেলা করা হচ্ছে অভিযোগ করে শাহজাদপুর প্রেসক্লাবের সভাপতি বিমল কুণ্ডু বলেন, ‘ঘটনার সময় আসামি মিরুর কাছ থেকে ৪২ রাউন্ড গুলি উদ্ধার করা হয়। অথচ পুলিশ এ ব্যাপারে কোনো মামলা করেনি।’ তিনি এ ব্যাপারে অস্ত্র আইনে মামলার দাবি জানান।
শাহজাদপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (তদন্ত) রাকিব হোসেনের কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমি নতুন এসেছি। যদি ৪২ রাউন্ড গুলি উদ্ধারের বিষয়ে কোনো মামলা না হয়ে থাকে, তবে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে পরবর্তী ব্যবস্থা নেব।’
উপজেলার ভারপ্রাপ্ত ইউএনও আবদুল হাসিব সরকার শিমুল হত্যাকাণ্ড ও তাঁর পরিবারের ব্যাপারে প্রশাসন বরাবরই সহানুভূতিশীল দাবি করে বলেন, ‘আমরা এ মামলার বিষয়ে সব সময় আন্তরিক। আমাদের পক্ষ থেকে নানা সময় সাংবাদিক শিমুলের পরিবারকে বিভিন্ন সহায়তা দিয়ে যাচ্ছি। প্রয়োজনে আগামীতে আরো সহযোগিতা দেওয়া হবে।’
২০১৭ সালের ২ ফেব্রুয়ারি শাহজাদপুরে ছাত্রলীগের দুইপক্ষের সংঘর্ষের সময় পেশাগত দায়িত্ব পালনকালে পৌরমেয়র হালিমুল হক মিরুর গুলিতে গুরুতর আহত হন শিমুল। পরে তাঁকে বগুড়ার শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজে ভর্তি করা হলে অবস্থার অবনতি ঘটে। ওই অবস্থায় ঢাকায় নেওয়ার পথে ৩ ফেব্রুয়ারি মারা যান শিমুল।