চা-চক্রের আয়োজন বিবেকহীন আনন্দের সমতুল্য : রিজভী
গণভবনে গতকাল শনিবার বিকেলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চা-চক্রের সমালোচনা করেছেন বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। তিনি বলেছেন, গোটা জাতির সঙ্গে নির্লজ্জ মহাতামাশার নির্বাচনের পর উল্লসিত সরকারের চা-চক্রের আয়োজন বিবেকহীন আনন্দেরই সমতুল্য।
আজ রোববার বেলা সাড়ে ১১টায় রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন রিজভী এসব কথা বলেন।
বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব বলেন, বাংলাদেশ এখন গণতন্ত্রশূন্য। গণতন্ত্রহীনতায় বাংলাদেশের জনগণ এখন রাষ্ট্রদাসত্ব করছে। রাষ্ট্র এখন এক ব্যক্তি ও এক দলের কব্জায়। একদলীয় শাসনে রাষ্ট্র জনগণকে দাসে পরিণত করে। গণতন্ত্র মৃত্যু যন্ত্রণায় ধুকতে ধুকতে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করে। বর্তমানেও সেই দশা বিরাজমান। এক ব্যক্তির একদলীয় শাসন নিরাপদ করতেই দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় নেত্রী ও তিনবারের প্রধানমন্ত্রী দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে কারাগারে আটকানো হয়েছে। কোনো কারণ ছাড়াই হাজার হাজার মিথ্যা মামলায় বিএনপির লক্ষ লক্ষ নেতাকর্মীকে জড়ানো হয়েছে। হাজার হাজার নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গায়েবি মামলায় এমন মানুষদের জড়ানো হয়েছে যা শুধু অদ্ভুতই নয়, এটি নিষ্ঠুর তামাশা। কবরে শায়িত লাশ, পক্ষঘাতগ্রস্ত রোগী, হজব্রত পালনরত ব্যক্তি, বহুদিন ধরে বিদেশে অবস্থানরত প্রবাসী ছাড়াও সাম্প্রতিক সময়ে নজিরবিহীনভাবে মামলার আসামি করা হয়েছে শারীরিক প্রতিবন্ধী তারা মিয়া, টাঙ্গাইলের ঘাটাইলে শামসুল হক যিনি মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণের কারণে অচল এবং তিনি কানেও শোনেন না; ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বর্গাচাষি মিলন মিয়া, ঢাকার আতর বিক্রেতা হাতকাটা ইউসুফসহ এ ধরনের অসংখ্য হতদরিদ্র ও শারীরিকভাবে অক্ষম ব্যক্তিদের। এরা নাকি রাষ্ট্রের চোখে অপরাধী। যে রাষ্ট্র এত বিবেকহীন, মনুষ্যত্বহীন ও নিষ্ঠুর রক্তপিপাসু কেবল সেই রাষ্ট্রেই উল্লিখিত ব্যক্তিদের অপরাধী বানানো হয়। সুতরাং সেই রাষ্ট্র পরিচালকদের অর্থাৎ অবৈধ সরকারের পতনে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করা ন্যায়সঙ্গত।
রুহুল কবির রিজভী বলেন, জনগণকে ফাঁকি দিয়ে ভুয়া ভোটের নির্বাচন অনুষ্ঠান নিশ্চিত করার জন্যই সরকার গায়েবি মামলায় বিএনপির লাখ লাখ নেতাকর্মীকে জড়িয়ে উল্লিখিত হতদরিদ্র দুর্দশাগ্রস্ত সাধারণ মানুষদেরও মামলা দিতে দ্বিধা করেনি। এদের কারো কারো নামে ১০ থেকে ১২টি মামলা। ক্ষমতাসীনরা ভোগ লালসায় অস্থির হয়ে ক্ষমতা আঁকড়ে রাখতে গিয়ে তালবেতাল হয়ে অমানবিকতার পথ অবলম্বন করছে। এরা মানবিক বিবেচনাগুলো পদদলিত করছে। সেইজন্য ক্ষমতা-আধিপত্যের রঙিন সম্প্রসারণে মেতে উঠেছে।
রিজভী বলেন, গতকাল গণভবনে নির্বাচন পরবর্তী ‘২৯ ডিসেম্বর রাতের ভোটের’ প্রধানমন্ত্রীর চা-চক্রে শেখ হাসিনার সদাহাস্য চেহারা ও সরকারের আনুকূল্য পাওয়া উৎফুল্ল উচ্ছিষ্ট রাজনীতিবিদ চেহারা দেখে মনে হয়েছিল তারা আনন্দে মাতোয়ারা। মহাভোট ডাকাতির পর অনুশোচনাহীন সরকারের চা-চক্রের এই আনন্দায়োজন দেখে একটি বিখ্যাত উক্তি মনে পড়ল, সেটি হলো- Pleasure without conscience মানে বিবেকহীন আনন্দ। এই আনন্দ একটি সামাজিক পাপ। গোটা জাতির সঙ্গে নির্লজ্জ মহাতামাশার নির্বাচনের পর উল্লসিত সরকারের চা-চক্রের আয়োজন বিবেকহীন আনন্দেরই সমতুল্য। জনগণের সঙ্গে প্রতারণাকারী সরকারের জয় উল্লাসের চা-চক্রে দেশের গণতন্ত্রমনা, গণতান্ত্রিক আন্দোলনে অংশগ্রহণরত কোনো রাজনৈতিক দলই অংশগ্রহণ করেনি। যারা জনগণের ভোট লুট করেছে তাদের সঙ্গে গণতন্ত্রপ্রেমী কোনো ব্যক্তি, দল, গোষ্ঠী সেই লুটের আনন্দের পাপে অংশগ্রহণ করেনি। এটাই জনগণের বিজয়।
সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শওকত মাহমুদ, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবদুস সালাম, বিএনপির প্রশিক্ষণ বিষয়ক সম্পাদক এ বি এম মোশারফ হোসেন, সহ-দপ্তর সম্পাদক তাইফুল ইসলাম টিপু, মুনীর হোসেন প্রমুখ।