উপজেলা নির্বাচনের তফসিল আজ
পঞ্চম উপজেলা নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হবে আজ রোববার। মোট পাঁচ ধাপে উপজেলা নির্বাচনের ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠানের পরিকল্পনা আছে সির্বাচন কমিশনের (ইসি)। প্রথম ধাপের ভোট গ্রহণ মার্চের দ্বিতীয় সপ্তাহে অনুষ্ঠিত করতে চায় ইসি।
তবে ইসির একটি দায়িত্বশীল সূত্র বলছে, ১০ মার্চ প্রথম ধাপের ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হতে পারে।
এরই ধারাবাহিকতায় গত বৃহস্পতিবার মাঠ অফিসগুলোতে ভোটকেন্দ্র চূড়ান্ত করতে চিঠি পাঠিয়েছে ইসি। চিঠিতে ভোটকেন্দ্রের তালিকা প্রস্তুত করার পাশাপাশি আপত্তি নিষ্পত্তি সাপেক্ষে আগামী ৭ ফেব্রুয়ারির মধ্যে ইসিতে তথ্য পাঠাতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
এদিকে প্রত্যেক সদর উপজেলায় ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) ব্যবহারের লক্ষ্যে বিধি চূড়ান্ত করছে ইসি। এ পর্যন্ত ইসির কাছে ইভিএম প্রস্তুত আছে ২৫ হাজারের বেশি। তবে প্রথম ধাপের সব সদর উপজেলায় ইভিএমে ভোট গ্রহণ করা সম্ভব হবে না বলে জানিয়েছেন একজন নির্বাচন কমিশনার।
নির্বাচন কমিশনার মো. রফিকুল ইসলাম এনটিভি অনলাইনকে বলেন, সংসদ নির্বাচন ও উপজেলা নির্বাচন দুটি দুই মেয়াদে হলেও কাছাকাছি সময়ে হয়ে আসছে। ফলে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতির সঙ্গে একত্রে এ নির্বাচনের প্রস্তুতি নিয়ে থাকে কমিশন। অতীতের মতো এবারও একই নিয়ম অনুসরণ করেছে কমিশন। ফলে নির্বাচনী সামগ্রী কেনাকাটা একটি জটিল প্রক্রিয়া হলেও তা অনেকটা সেরে ফেলেছে কমিশন।
রফিকুল ইসলাম বলেন, ভোট গ্রহণ কর্মকর্তাদের যে প্যানেল করা আছে সংসদ নির্বাচনের জন্য সেই প্যানেল দিয়েই উপজেলায় ভোট গ্রহণ করা হবে। তবে বদলিসহ অন্যান্য কারণে কিছু যুক্ত হবে, আবার বাদও পড়বে।
রফিকুল ইসলাম জানান, প্রথম ধাপের নির্বাচনে সব উপজেলা সদরে ইভিএমে ভোট নেওয়া সম্ভব হবে না। তবে পরের সব ধাপের নির্বাচনে সব সদর উপজেলায় ইভিএমে ভোট করবে ইসি। প্রতি ভোট কক্ষে পুরুষ ভোটার ৫০০ আর নারী ভোটার ৪০০ রাখার পরিকল্পনা আছে ইসির।
সারা দেশের কয়েকজন আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা ও জেলা নির্বাচন কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা হয় এনটিভি অনলাইনের। তারা জানান, ভোটকেন্দ্র নতুন করে করার প্রয়োজন নেই। সংসদ নির্বাচনের যে কেন্দ্রগুলো ছিল তার ওপর ভিত্তি করে উপজেলা নির্বাচন সম্পন্ন করা হবে। সংসদ নির্বাচনের ভোট কেন্দ্র ৪০ হাজার ১৯৩টি হলেও উপজেলায় এই সংখ্যা কমে আসবে। কারণ সারা দেশে ১১টি সিটি করপোরেশন রয়েছে, সেখানকার কেন্দ্রগুলো উপজেলার সংখ্যা থেকে বাদ পড়বে।
তারা আরো জানান, সংসদ নির্বাচনের তুলনায় ভোটকেন্দ্র কমলেও কক্ষের সংখ্যা বেড়ে যেতে পারে। সংসদ নির্বাচনে ভোটকেন্দ্রের বিপরীতে কক্ষ ছিল প্রায় তিন লাখ। এবার উপজেলায় এ সংখ্যা ছাড়িয়ে যেতে পারে। উপজেলার ভোটে কক্ষপ্রতি ভোটার সংখ্যা নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে ৩০০ থেকে ৪০০ জন। তবে সব জায়গায় এই নিয়ম মেনে কাজ করাটা মুশকিল। কোথাও কম বেশি হবে হয়তো। এ হিসেবে কেন্দ্র না বাড়লেও কক্ষ বাড়াতে হবে।
সংসদ নির্বাচনের ভোটকেন্দ্রের নীতিমালায় বলা ছিল, গড়ে দুই হাজার ৫০০ ভোটারের জন্য একটি করে ভোটকেন্দ্র এবং গড়ে ৬০০ পুরুষ ভোটারের জন্য ও ৫০০ নারী ভোটারের জন্য একটি করে ভোটকক্ষ নির্ধারণ করতে হবে। এখন পর্যন্ত দেশে ভোটার ১০ কোটি ৪১ লাখ ৪২ হাজার ৩৮১ জন। এ ভোটার ধরেই সংসদের ভোটকেন্দ্রের সংখ্যা নির্ধারণ করা হয়েছিল।
এদিকে পঞ্চম উপজেলা নির্বাচনও সংসদের প্রণীত ভোটার তালিকানুযায়ী হবে। এ বছর নির্বাচনের কারণে ভোটার তালিকা হালনাগাদ না হওয়ায় বিদ্যমান তালিকার আলোকে ভোট হবে। নীতিমালায় বলা আছে, ভোটকেন্দ্র স্থাপনে প্রার্থী এবং ঝুঁকিপূর্ণ কিংবা যোগাযোগ ব্যবস্থা সমুন্নত রেখে কেন্দ্র স্থাপনের পরিকল্পনা করতে হবে। কিন্তু সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুত করা কেন্দ্র অনুযায়ী নির্বাচন হওয়ায় এ সুযোগ কম।
এদিকে আজ নির্বাচন কমিশন থেকে এ নির্বাচনে ভোটের তারিখ ঘোষণা তথা তফসিল ঘোষণার সব প্রস্তুতি নেওয়া আছে। আজই নির্ধারিত হবে প্রথম ধাপের ভোটগ্রহণের দিনক্ষণ। ৪৯৩টি উপজেলায় এই নির্বাচন সম্পন্ন হবে। এর বেশির ভাগ সদয় উপজেলায় ইভিএমে ভোট নেওয়ার সিদ্ধান্ত রয়েছে। সেই হিসেবে প্রস্তুত করা হচ্ছে ইভিএম। এরই মধ্যে কমিশনের কাছে ২৫ হাজার ইভিএম এসে পৌঁছেছে। আরো তিন হাজার ৮০০ কোটি টাকার ইভিএম প্রকল্পের মধ্যে ৫০০ কোটি টাকা ছাড় পেয়েছে। তিন দফায় ইভিএম কেনা হবে। এসব কেনা ইভিএম দিয়ে উপজেলাসহ অন্য ভোট হবে।
১৯৮৫ সালে বাংলাদেশে প্রথমবার, ১৯৯০ সালে দ্বিতীয়বার ও ২০০৯ সালে তৃতীয়বারের মতো উপজেলা পরিষদ নির্বাচন হয়। ওই বছর একই দিনে ৪৭৫টি উপজেলায় এ নির্বাচন হয়। আর ২০১৪ সালে ধাপে ধাপে উপজেলা নির্বাচন করা হয়।