প্রধানমন্ত্রীর চা-চক্রে যোগ দিয়ে যা বললেন নেতারা
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চা-চক্রে যোগ দিয়েছেন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা। আজ শনিবার বিকেলে গণভবনের দক্ষিণ লনে আয়োজিত এ চা-চক্র রূপ নেয় দেশের রাজনীতিবিদদের মিলনমেলায়। তবে আমন্ত্রণ পেয়েও এতে যোগ দেননি জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতারা।
প্রধানমন্ত্রীর এই চা-চক্রকে রাজনীতির জন্য ইতিবাচক মনে করছেন রাজনীতিবিদরা। সরকারি দলের নেতারা জানান, ভবিষ্যতে এ আয়োজন অব্যাহত থাকবে।
প্রধানমন্ত্রীর চা-চক্রে যোগ দিতে আজ দুপুরের পর থেকেই গণভবনে আসতে থাকেন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা। এ আয়োজনে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সংলাপে অংশ নেওয়া দলগুলোকে।
পড়ন্ত বিকেলে গণভবনের সবুজ চত্বরে অতিথিদের সঙ্গে কুশল বিনিময় করেন প্রধানমন্ত্রী। আমন্ত্রিত অতিথি জাতীয় পার্টির জ্যেষ্ঠ কো-চেয়ারম্যান বেগম রওশন এরশাদসহ জাতীয় পার্টি নেতৃবৃন্দ্, ১৪ দলীয় জোটের নেতৃবৃন্দ, বিকল্পধারা নেতৃত্বাধীন যুক্তফ্রন্টের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. একিউএম বদরুদ্দোজা চৌধুরী, বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট অ্যালায়েন্স (বিএনএ) নেতা ব্যারিস্টার নাজমুল হুদাসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাদের কাছে গিয়ে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন শেখ হাসিনা। তবে চা-চক্রে অংশ নেয়নি বিএনপি ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতারা।
গণভবনে চা-চক্র অনুষ্ঠানে আজ শনিবার বিকেলে সবার খোঁজ-খবর নেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ছবি : পিআইডি
চা-চক্র সেরে বের হওয়ার সময় আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম বলেন, ‘একজন নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী, যারা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছে, যারা গণতান্ত্রিক ধারাকে এগিয়ে নেওয়ার ব্যাপারে সাহায্য করেছে, তাদেরকে তিনি (প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা) আমন্ত্রণ জানিয়ে শুভেচ্ছা বিনিময় করেছেন এবং ধন্যবাদ দিয়েছেন। এটি একটি ভালো, অত্যন্ত আন্তরিক পরিবেশে তিনি আমাদের সঙ্গে কথা বলেছেন। সবার সঙ্গে তিনি মতবিনিময় করেছেন। আশা করি এই রাজনৈতিক ধারা অব্যাহত থাকবে।’
বিকল্পধারা নেতৃত্বাধীন যুক্তফ্রন্টের নেতা অধ্যাপক ডা. একিউএম বদরুদ্দোজা চৌধুরী বলেন, ‘আনুষ্ঠানিক, অনানুষ্ঠানিক বা রাজনৈতিক কোনো বক্তব্য ছিল না। তিনি (প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা) কুশল বিনিময় করলেন। অনেকদিন পর দেখা হলো, সেজন্য উনি খুশি হয়েছেন বললেন। আর আমাদের শুভকামনা করলেন, আমরাও তাঁর শুভকামনা করেছি। শেষের দিকে দেখা হলে তিনি বললেন, রাজনীতিতে মতভেদ থাকতে পারে, দেশের ব্যাপারে আমরা যেন সবাই ঐক্যবদ্ধ থাকি। ওবায়দুল কাদের সাহেব বললেন, এটাই শেষ নয়। ভবিষ্যতেও এরকম হতে পারে।’
চা-চক্র প্রসঙ্গে নিজেদের অবস্থান তুলে ধরেন বিরোধী দল জাতীয় পার্টির নেতারা। জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান জিএম কাদের বলেন, ‘এটা একটা নিজেদের মধ্যে ভ্রাতৃত্ববোধ, আন্ডারস্ট্যান্ডিং ভালো করা, একজন আরেকজনের সঙ্গে দেখা-সাক্ষাৎ হওয়া, পরিচিত হওয়া বা যাদের সঙ্গে পরিচয় আছে তাদের সঙ্গে সম্পর্ক ঝালাই করে নেওয়া। এটাই উদ্দেশ্য, এক কথায় সুসম্পর্ক গড়ে তোলা। সে উদ্দেশ্যেই তিনি (প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা) এই আয়োজন করেন। সবাই খোলামেলা আলাপ-আলোচনা করছিলেন, সব বিষয়ে। এবং আমি মনে করি ভবিষ্যতের রাজনীতিতে এটি একটি ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে।’
গণভবনে চা-চক্র অনুষ্ঠানে আজ শনিবার বিকেলে সবার খোঁজ-খবর নেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ছবি : ফোকাস বাংলা
চা-চক্রে যোগ দেন জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী, আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ নেতা সাবেক শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু, সাবেক কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী, সাবেক গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন, শেখ ফজলুল করিম সেলিম, সাবেক শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী ফারুক খান, আবদুল মতিন খসরু, কৃষিমন্ত্রী ড. আবদুর রাজ্জাক, তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন, গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম, শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি, জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান ও সাবেক বিরোধী নেত্রী রওশন এরশাদ, জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান জিএম কাদের, মহাসচিব মশিউর রহমান রাঙ্গা, রুহুল আমিন হাওলাদার, জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু, আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, মুজিবুল হক চুন্নু, সুনীল শুভ রায়, জেপি (মঞ্জু) সভাপতি আনোয়ার হোসেন মঞ্জু, জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু ও সাধারণ সম্পাদক শিরিন আখতার, জাসদ (আম্বিয়া) নেতা মঈন উদ্দীন খান বাদল ও নাজমুল হক প্রধান, ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন ও সাধারণ সম্পাদক ফজলে হোসেন, বিকল্পধারা বাংলাদেশের মহাসচিব মেজর (অব.) আবদুল মান্নান, মাহি বি. চৌধুরী, শমসের মবিন চৌধুরী, ইসলামী ঐক্যজোটের সভাপতি আলহাজ মিসবাহুর রহমান চৌধুরী, তরীকত ফেডারেশনের চেয়ারম্যান সৈয়দ নজিবুল বশর মাইজভান্ডারী, সাম্যবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক দিলীপ বড়ুয়া ও বিএনএ সভাপতি ব্যারিস্টার নাজমুল হুদাসহ আওয়ামী লীগ ও ১৪ দলীয় জোটের অন্যান্য নেতা, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা ও প্রধানমন্ত্রীর সংশ্লিষ্ট সচিবরা।
অনুষ্ঠান উপলক্ষে গণভবনের দক্ষিণ লনকে বাহারি সাজে সাজানো হয়। সেই সঙ্গে ছিল দেশাত্মবোধক গান। আমন্ত্রিত অতিথিদের চটপটি, ফুচকা, মুড়ি, মোয়া, নাড়ু, কদমা, মুরালি, ভাপা পিঠা, চিতই পিঠা, পাটিসাপটা, পুলি পিঠা, জিলাপি, কাবাব ও নানসহ নানা ঐতিহ্যবাহী খাবার ও পিঠা দিয়ে আপ্যায়ন করা হয়।