রনি মদ্যপান করেছিলেন, সঙ্গে পিস্তলও ছিল
‘সাক্ষীদের সাক্ষ্য, তদন্ত কর্মকর্তাদের তদন্ত প্রতিবেদন পর্যালোচনায় দেখা যায়- ঘটনার দিন রনি মদ্যপান করেছিলেন। তাঁর সঙ্গে পিস্তল ছিল। তিনি স্বাভাবিক ছিলেন না।’
রাজধানীর নিউ ইস্কাটনে জোড়া খুনের দায়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য পিনু খানের ছেলে বখতিয়ার আলম রনির রায়ের পর্যবেক্ষণে বিচারক এ কথা বলেন। রনিকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত।
আজ বুধবার বিকেল ৩টায় ঢাকার দ্বিতীয় অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ মঞ্জুরুল ইমাম আসামির উপস্থিতিতে এ আদেশ দেন। রায়ের আগে বেলা ৩টায় বিচারক অন্য মামলার শুনানি শেষ করে রায় প্রকাশ করা শুরু করেন। ওই সময় আদালতের লোহা বিশিষ্ট তৈরি কাঠগড়ায় রনিকে হাজির করে পুলিশ।
আদালত রায় পড়া শুরুর সময় বিচারক মামলার বিবরণ পড়ে শোনান। এরপর বিচারক পর্যবেক্ষণে বলেন, ‘সাক্ষীদের সাক্ষ্য, তদন্ত কর্মকর্তাদের তদন্ত প্রতিবেদন পর্যালোচনায় দেখা যায়- ঘটনার দিন রনি মদ্যপান করেছিলেন। তাঁর সঙ্গে পিস্তল ছিল। তিনি স্বাভাবিক ছিলেন না। তার শিশু সন্তান হাসপাতালে ভর্তি ছিল। ঘটনাস্থলের সিসি ক্যামেরায় দেখা যায়, রাতে রনির মাইক্রোবাস মগবাজারের দিকে যায়, এর ১০ মিনিটের মাথায় উল্টো পথ দিয়ে আবার ইস্কাটনের দিকে আসে।’
আদালত পর্যবেক্ষণে বলেন, ‘রনির গাড়ির চালক ইমরান ফকির ওই দিন তার সঙ্গে থাকা কামাল মাহমুদ, টাইগার কামাল এবং জাহাঙ্গীর আলম আদালতে ১৬৪ ধারায় সেদিনের ঘটনার জবানবন্দি দেন। সাক্ষীদের সাক্ষ্য পর্যালোচনায় দেখা যায়, বখতিয়ার আলম রনি তার পিস্তল দিয়েই গুলি ছোড়েন। এই গুলিতেই রিকশাচালক হাকিম ও সিএনজি অটোরিকশা চালক ইয়াকুব গুলিবিদ্ধ হয়ে হাসপাতালে মারা যান।’
আদালত বলেন, ‘রনি যে পিস্তল ব্যবহার করেছেন তার লাইসেন্স ছিল কি না সেই মূল কপি আদালতের কাছে উপস্থাপন করা হয়নি। কতটি গুলি আসামি ব্যবহার করতে পারবেন সেই হিসাবের বিবরণও আদালতের কাছে দেওয়া হয়নি। তবে পুলিশ ২১টি গুলি আসামির কাছ থেকে উদ্ধার করেছিলেন।’
এরপর বিচারক রায় দিয়ে বলেন, ‘রনির পিস্তল থেকে ছোড়া গুলিতে দুটি নিষ্পাপ প্রাণ ঝরে গেছে, এর দায় আসামি রনি এড়াতে পারেন না। তাই আসামিকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে দণ্ডিত করা হলো। পাশাপাশি ৫০ হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরো ছয় মাসের কারাদণ্ড দেওয়া হলো।’
রনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমাকে যাবজ্জীবন দেওয়ায় রায়ে আমি মোটেও চিন্তিত নই। উপরওয়ালা যা নির্ধারণ করেছেন তাই হয়েছে।’ এ সময় রনিকে হাস্যোজ্জ্বল দেখা যায়।
২০১৫ সালের ২১ জুলাই পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের (ডিবি) উপপরিদর্শক (এসআই) দীপক কুমার দাস ইস্কাটনে জোড়া খুনের মামলায় রনিকে একমাত্র আসামি করে তাঁর গাড়িচালক ইমরানের অব্যাহতি চেয়ে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। এরপর ২০১৬ সালের ৬ মার্চ রনির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন আদালত।
নথি থেকে জানা যায়, রনি ২০১৫ সালের ১৩ এপ্রিল রাত পৌনে ২টার দিকে রাজধানীর নিউ ইস্কাটনে গাড়ি থেকে এলোপাতাড়ি গুলি ছোড়েন। ওই সময় অটোরিকশাচালক ইয়াকুব আলী ও রিকশাচালক আবদুল হাকিম আহত হন। পরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তাঁরা মারা যান।
ওই ঘটনায় ১৫ এপ্রিল নিহত হাকিমের মা মনোয়ারা বেগম অজ্ঞাতপরিচয় কয়েকজনকে আসামি করে রমনা থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।
পরে ঘটনায় জড়িত সন্দেহে ৩০ মে বখতিয়ার আলম রনিকে এলিফ্যান্ট রোডের বাসা থেকে আটক করে ডিবি পুলিশ। তিন দফায় ১০ দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয় তাঁকে। রিমান্ড শেষে রনিকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন আদালত। এরপর থেকে তিনি কারাগারেই আছেন।
গত বছরের ৮ মে ঢাকার প্রথম অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আদালতে মামলাটির রায় হওয়ার কথা থাকলেও আসামিপক্ষের আবেদনে তা বদলি করা হয় দ্বিতীয় অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আদালতে। নতুন আদালতের বিচারক মঞ্জুরুল ঈমাম অধিকতর যুক্তিতর্ক ও শুনানির প্রয়োজন বোধ করায় রায় পিছিয়ে যায়। এরপর আজ পুনরায় রায়ের দিন নির্ধারণ করা হলে আবারও তা পেছানো হয়।