রঙে বোঝা যাবে রেস্তোরাঁর মান
রাজধানীর রেস্তোরাঁগুলোতে প্রবেশের সময় চোখে পড়বে বিভিন্ন রঙের স্টিকার। আর ওই স্টিকার দেখেই জানা যাবে ওই রেস্তোরাঁর ভেতরের পরিবেশ কেমন, রান্নাঘরের কী ধরনের দূষণ বা কতটা স্বাস্থ্যসম্মত খাবার রয়েছে।
সবচেয়ে ভালো মানের রেস্তোরাঁর সামনে লাগানো থাকবে সবুজ রঙের স্টিকার। আর সবচেয়ে খারাপ মানের রেস্তোরাঁর সামনে থাকবে কমলা রঙের স্টিকার। আর মাঝামাঝি অবস্থানের জন্য নীল ও হলুদ। এসব রঙের অবস্থানের ওপরই নির্ভর করবে ব্যবসার লাইসেন্স।
আজ রোববার রাজধানীর একটি হোটেলে বিভিন্ন রেস্তোরাঁর গ্রেডিং পদ্ধতির প্রবর্তন কার্যক্রমের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে এসব তথ্য দেওয়া হয়। বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ ওই গ্রেডিং পদ্ধতি চালুর উদ্যোগ নিয়েছে।
সবুজে ভালো, কমলায় অনিরাপদ
অনুষ্ঠানে আয়োজকরা জানান, রেস্তোরাঁয় সবুজ স্টিকার দেখলে বুঝতে হবে এখানকার মান এ+ (এ প্লাস) অর্থাৎ উত্তম। কমলা রঙের স্টিকার দেখলে বুঝতে হবে এটি অনিরাপদ। কমলা স্টিকারযুক্ত রেস্তোরাঁগুলো এক মাসের মধ্যে মান ভালো না করলে বাতিল হবে তাদের লাইসেন্স। ভোক্তা ও ভোজনরসিকদের স্বার্থে ‘এ+’, ‘এ’, ‘বি’, ‘সি’ এই চার ক্যাটাগরিতে তালিকাভুক্ত করা হয়েছে ঢাকা মহানগরীর হোটেল ও রেস্তোরাঁকে। গ্রেডিং সিস্টেমের আওতায় খাবারের মান, বিশুদ্ধতা, পরিবেশ, ডেকোরেশন, মনিটরে রান্নাঘরের পরিবেশ দেখা যাওয়ার ব্যবস্থা ও ওয়েটারদের স্বাস্থ্য সুরক্ষার ভিত্তিতে রেস্তোরাঁগুলোতে চার ক্যাটাগরিতে চিহ্নিত করা হবে। এসব বিচারে ৯০ নম্বরের বেশি স্কোর হলে সবুজ বর্ণের স্টিকার ‘এ+’, স্কোর ৮০-এর ঊর্ধ্বে হলে নীল বর্ণের স্টিকার বা ‘এ’; ৫৫ থেকে ৭৯ পর্যন্ত স্কোর হলে হলুদ বর্ণের ‘বি’ এবং ৪৫ থেকে ৫৫ স্কোর হলে কমলা বর্ণের ‘সি’ ক্যাটাগরি পাবে। ‘এ+’ এর মানে হচ্ছে রেস্তোরাঁটি উত্তম, এ মানে ভালো, ‘বি’ মানে গড়পড়তা ভালো এবং ‘সি’ মানে গ্রেড পেন্ডিং।
সবুজ রং আর নীল স্টিকারযুক্ত রেস্তোরাঁর মান নিয়ে ক্রেতাদের কোনো প্রশ্ন থাকতে পারে না। কিন্তু হলুদ স্টিকারধারী রেস্তোরাঁকে আপাতত তিন মাসের সময়সীমা বেঁধে দেওয়া হবে তাদের মান ও গ্রেড উন্নতির জন্য। একইভাবে কমলা বর্ণের রেস্তোরাঁকে গ্রেডিং বাড়ানোর জন্য এক মাস সময় দেওয়া হবে। এ সময়ের মধ্যে তা বাস্তবায়ন করা না হলে, হোটেল-রেস্তোরাঁর লাইসেন্স বাতিল করা হবে।
২০১৮ সালের এপ্রিলের ২ তারিখে কস্তুরী হোটেলে স্টিকার লাগিয়ে এই কার্যক্রমের পরীক্ষার উদ্বোধন করে বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ। প্রাথমিকভাবে রাজধানীর মতিঝিল, দিলকুশা, পল্টন ও সচিবালয় এলাকায় পাইলট প্রকল্প হিসেবে এই উদ্যোগ চালু করা হয়েছে। অনুষ্ঠানে এসব এলাকার মোট ১৮টি ‘এ+’ এবং ৩৯টি ‘এ’ গ্রেডের স্টিকার দেওয়া হবে।
‘সবার মধ্যে সচেতনতা বাড়াতে হবে’
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার। তিনি বলেছেন, ‘নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করতে হলে শুধু খাদ্য মন্ত্রণালয়ের একার পক্ষে তা সম্ভব নয়। কৃষি ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়সহ সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। সবার মধ্যে সচেতনতা বাড়াতে হবে।’
খাদ্যমন্ত্রী বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ধারণ করে লোভ সংবরণ করে যদি আমরা আমাদের দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করতে পারি তাহলে আমরা আমাদের উদ্দেশ্য অর্জন করতে সক্ষম হবো এবং জনগণের নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করা সম্ভব হবে। রেস্তোরাঁর ভালো মান বজায় রাখতে হবে। এখন যদি ব্যবসায়িক লোভ ত্যাগ না করতে পারি তাহলে নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করা অনেকটাই কঠিন হবে।’
বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ মাহফুজুল হক বলেন, ‘এটি একটি আন্তর্জাতিক মানসম্মত গ্রেডিং পদ্ধতি। বিশ্বের উন্নত দেশগুলোতে এই পদ্ধতি অবলম্বন করা হয়। রেস্তোরাঁ মালিকরা বারবার মোবাইল কোর্ট কার্যক্রমে জরিমানা দেওয়ার ফলে আমাদের কাছে স্থায়ী সমাধান চেয়েছেন। আমরা তাদের জন্য এই সিস্টেম এনেছি। এতে রেস্তোরাঁ মালিকরাও খুশি হয়েছেন। ভবিষ্যতে দেশব্যাপী রেস্তোরাঁগুলোকে এই গ্রেডিংয়ের আওতায় আনা হবে।’
খাদ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব শাহাবুদ্দিন আহমদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা দক্ষিন সিটি করপোরেশনের মেয়র সাঈদ খোকন, সাবেক খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম, বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের চেয়ারমান মাহফুযুল হক, বাংলাদেশ রেস্তোরাঁ মালিক সমিতির মহাসচিব রেজাউল করিম সরকারসহ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ ও খাদ্য মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।