‘আমি ভালো নেই। খুব অসুস্থ। পিঠে অনেক  ব্যথা পেয়েছি। ব্যথা কমেছেই না।  রক্তে  জীবাণু ছড়িয়ে গেছে।  এমআরআই করা হয়েছে। রিপোর্ট আসলে বোঝা যাবে কী হয়েছে।’-কথাগুলো এনটিভি অনলাইনকে বলেছেন অভিনেত্রী অহনা রহমান।

সড়ক দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত  এই অভিনেত্রীর  শারীরিক  অবস্থা  সংকটাপূর্ণ। রাজধানীর উত্তরার ক্রিসেন্ট হাসপাতাল থেকে তাঁকে গত সোমবার বসুন্ধরার অ্যাপোলো হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে। সেখানে  অর্থোপেডিক্স চিকিৎসক অমিত কাপুরের তত্ত্বাবধানে আছেন এই অভিনেত্রী।

দুর্ঘটনাকে কেন্দ্র  করে  সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে  অনেকের  মন্তব্য চোখে পড়েছে অহনার। এ বিষয়ে অহনা বলেন, “অনেকে বাজে মন্তব্য করেছে, এটা দুঃখজনক।  রাতে আমি যদি ক্লাব থেকে আসি তাহলে আমি সালোয়ার কামিজ পরব না।  আমার তো পরিবার আছে। পারিবারিক অনুষ্ঠান থাকতে পারে। আর অনেক কাজই থাকতে পারে। যারা মন্তব্য করেছে অহনা মদ খেয়ে গাড়ি চালিয়েছে। তারা কি আসল সত্যিটা জানে?  মদ আমি খাইনি। ট্রাক চালক মাদকাসক্ত ছিল।  আবার অনেকে বলেছে, অহনা বাজে ব্যবহার করেছে। ভাই, গাড়িটা তো আমার। ভিডিওতে  যা দেখেছেন সেটা দুর্ঘটনার শুরুর সময় মাত্র।  এর পর কী হয়েছে সেটা না জেনে মন্তব্য করা কি ঠিক হরো? আমি ওভারটেক করিনি। সিসিটিভির ফুটেজ আছে। আমাকে বলা হচ্ছে, কেন আপনি ট্রাকে উঠেছেন? আরে আমি যদি ট্রাক না উঠি তাহলে তো ট্রাক আমার উপর দিয়ে উঠে যায়। আমি ট্রাকে সাধে ঝুলিনি।  যখন আমার বোনকে ভিডিও বন্ধ করে পুলিশকে কল করতে বলেছিলাম তখনই ট্রাকচালকের চেহারা বদলে গিয়েছিল।  তখন সে বলেছিল, ‘পুলিশ ডাকছে, দেখাচ্ছি।’ এই বলে ট্রাক চালানো শুরু করে। ঝুলন্ত অবস্থায় আমি শুনেছিলাম চালকের হেল্পার বলেছিল, ‘এটা নায়িকা এটাকে যদি বাঁচায় দেন আমরা ফাইসা যাব।’ ফেসবুকে একজন মন্তব্য করেছেন  ‘নাটক করে তো এজন্য এ রকম হয়েছে। মরে গেলে ভালো হতো।’ এই জায়গায় যদি তার মা, বোন ও প্রেমিকা থাকত তাহলে সে এরকম  বলতে পেত। আপনারা কি জানেন, আমি নামাজ পরি কিনা! আমি পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ি। পাপ পূণ্যের বিচার আল্লাহ করবেন। আপনারা কারা? দেখুন, আমার সাথে একই ঘটনা যদি আবারও ঘটে আমি প্রতিবাদ করব।”

অহনা আরো বলেন, ‘অনেকে মর্মাহত হয়েছেন। আমার জন্য দোয়া করেছেন, তাঁদের ধন্যবাদ।’

এদিকে, অহনা রহমান সড়ক দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত হওয়ার ঘটনায় করা মামলায় গ্রেপ্তার ট্রাকচালক সুমন মিয়া স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।

সুমন জবানবন্দিতে বলেছেন, গত ৯ জানুয়ারি ভোর ৪টায় পাথরবোঝাই ট্রাকটির চালক ছিলেন তিনি। ওই সময় বেপরোয়া গতিতে এসে একটি ব্যক্তিগত গাড়িকে ধাক্কা দেন। এ সময় গাড়িচালক অহনা রহমান গাড়ি চালাচ্ছিলেন। গাড়ি থেকে নেমে তিনি প্রতিবাদ করে তাঁকে (ট্রাকচালক) নিচে নামতে বলেন। চালক সুমন না শুনে অহনার সঙ্গে তর্কে লিপ্ত হন।

চালক জবানবন্দিতে আরো বলেন, এরপর অহনা রহমান ট্রাকের পাশের দরজায় উঠে ট্রাকচালককে আবারও নামতে বলেন। কিন্তু ট্রাকচালক তাঁর কথা না শুনে তাঁকে দরজায় ঝুলন্ত অবস্থায় রেখেই ট্রাক ছেড়ে দেন। এ সময় অহনার চিৎকারে স্থানীয় লোকজন এগিয়ে এলে ট্রাকচালক জোরে ব্রেক করেন। এতে ট্রাকটি উল্টে যায়। অহনা ছিটকে রাস্তায় পড়ে আহত হন। এরপর ট্রাকচালক ও তাঁর সহকারী পালিয়ে যান।

এভাবে রোববার ঢাকার মহানগর হাকিম আবু সুফিয়ান মো. নোমানের আদালতে ট্রাকচালক সুমন এ স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন।

আদালতের সাধারণ নিবন্ধন কর্মকর্তা শওকত আকবর এ বিষয়ে এনটিভি অনলাইনকে জানান, উত্তরা পশ্চিম থানার উপপরিদর্শক (এসআই) হুমায়ুন কবীর চালক সুমনকে ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিমের আদালতে হাজির করে ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৪ ধারা মোতাবেক স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি রেকর্ড করার আবেদন করেন। ওই আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকার মহানগর হাকিম আবু সুফিয়ান মো. নোমানের আদালতে তিনি স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। এরপর তাঁকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন বিচারক।

রোববার সকালে ঢাকার সাভার এলাকায় অভিযান চালিয়ে ট্রাকচালক সুমন মিয়া ও তাঁর সহকারী রোহানকে গ্রেপ্তার করে উত্তরা পশ্চিম থানা পুলিশ।

গত ৯ জানুয়ারি উত্তরা পশ্চিম থানায় অভিনেত্রী অহনাকে দুর্ঘটনায় আহত করার ঘটনায় মামলা করেন অহনার খালাতো বোন লিজা ইয়াসমীন মিতু।

মিতু এনটিভি অনলাইনকে বলেন, বুধবার রাতে পুরান ঢাকা থেকে অহনা ব্যক্তিগত গাড়ি চালিয়ে উত্তরার বাসায় ফিরছিলেন। এ সময় তিনি অহনার সঙ্গে ছিলেন। পুরান ঢাকা থেকে রাত সোয়া ৩টার দিকে উত্তরার ৭ নম্বর সেক্টরে লেকড্রাইভ রোডে আসেন তখন পাথরবোঝাই একটি ট্রাক তাঁদের গাড়িকে ধাক্কা দেয়। গাড়ি থেকে বের হয়ে অহনা ট্রাকচালককে নামতে বললে উল্টো তাঁকেই দোষারোপ করেন চালক। এরপর চালক ইচ্ছে করে তাঁদের গাড়ির পেছনে আবার জোরে ধাক্কা দেন। এতে গাড়ির অনেক বেশি ক্ষতি হয়। এরপর অহনা ক্ষুব্ধ হয়ে ট্রাকচালকের পাশের দরজায় উঠে যান। চালক অহনাকে নিয়েই ট্রাক চালানো শুরু করে দেন। ট্রাকের দরজার জানালা ধরে ঝুলতে থাকেন অহনা। আর তিনি ট্রাকের পেছন পেছন দৌড়াতে থাকেন। ট্রাকটি ১২ নম্বর সেক্টরে জোরে বাঁক নেওয়ার সময় উল্টে যায়। অহনা ছিটকে পড়েন রাস্তার ওপর।

পরে ট্রাক ফেলেই চালক ও সহকারী পালিয়ে যায়। এরপর তিনি অহনাকে দ্রুত হাসপাতালে ভর্তি করান। অহনা কোমরের হাড়ে ও পিঠে অনেক ব্যথা পেয়েছেন।’

টিভি নাটকে নিয়মিত অভিনয় করেন অহনা। এর পাশাপাশি বেশকিছু চলচ্চিত্রেও অভিনয় করেছেন তিনি। তাঁর অভিনীত সর্বশেষ চলচ্চিত্র ‘চোখের দেখা’ মুক্তি পায় ২০১৭ সালে।