আফরোজা হত্যা মামলায় স্বামীসহ তিন স্বজন গ্রেপ্তার
গাজীপুর মহানগরীর ভাওরাইদে পোশাককর্মী আফরোজা খাতুনকে (২৫) হত্যার পর সেপটিক ট্যাংকে লাশ গুমের ঘটনায় স্বামী, মামাতো ভাইসহ তিন স্বজনকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব। বৃহস্পতিবার ঢাকার ডেমরা থেকে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।
র্যাব-১ এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. সারওয়ার-বিন-কাশেম জানান, চলতি মাসের ৪ জানুয়ারি গাজীপুর মহানগরীর ভাওরাইদ উত্তরপাড়া এলাকায় স্ত্রী আফরোজাকে পারিবারিক কলহের জেরে স্বামী শাহজাহান মিয়া (২৮) শ্বাসরোধ করে হত্যা করেন। পরে মুকুল (আফরোজারমামাতো ভাই) ও খোকনের (মুকুলের শ্যালক) সহায়তায় বাড়ির পাশের সেপটিক ট্যাংকে লাশ গুম করে। যা পরদিন ৫ জানুয়ারি সেপটিক ট্যাংক থেকে লাশ উদ্ধার করা হয়। এই ঘটনায় জয়দেবপুর থানায় একটি মামলা করা হয়। এ ঘটনার মূল আসামি নিহতের স্বামী শাহজাহান ও অপর দুই সহযোগী বন্ধু খোকন ও মুকুলকে বৃহস্পতিবার রাতে ডেমরা থেকে আটক করা হয়েছে।
নিহত আফরোজা খাতুন গাইবান্ধা সদর উপজেলার জিকাবাড়ি এলাকার বিল্লাল হোসেনের মেয়ে।
গত ৫ জানুয়ারি আফরোজার লাশ উদ্ধারের পর তাঁর মামা একামত হোসেনসহ স্থানীয়রা জানান, গাজীপুর মহানগরীর ভাওরাইদ উত্তরপাড়া এলাকায় জমি কিনে বাড়ি করে স্বপরিবারে থাকেন বিল্লাল হোসেন। সাত-আট বছর আগে বিল্লালের মেয়ে আফরোজার সঙ্গে জামালপুরের সানন্দবাড়ির মন্ডলপাড়া এলাকার শাহজাহান মিয়ার বিয়ে হয়। তাদের সংসারে ছয় বছরের একটি মেয়ে রয়েছে।
গাজীপুরে পৃথক ডাকাতির ঘটনায় বিভিন্ন মালামালসহ ছয় ডাকাত সদস্যকে আটক করেছে র্যাব। ছবি : এনটিভি
সন্তানকে নিয়ে শাহজাহান মিয়া ও আফরোজা স্থানীয় মুকুল মিয়ার বাড়িতে ভাড়া থাকতেন। আফরোজা গাজীপুরের সালনা এলাকার শ্যামলী পোশাক কারখানায় চাকরি করতেন। তাঁর স্বামী শাহজাহান জোলারপাড় এলাকার একটি স্টিল মিলে চাকরি করেন। আফরোজা ৪ জানুয়ারি শুক্রবার রাত ৮টার দিকে কারখানা থেকে বাসায় ফেরেন। রাতে আফরোজার সঙ্গে তাঁর স্বামীর বাকবিতণ্ডা হয়। এ সময় তাদের মেয়ে বাসায় ছিল না।
এরপর রাত সাড়ে ১২টার দিকে শাহজাহানকে বাসা সংলগ্ন সেপটিক ট্যাংকের ঢাকনা খুলে আফরোজার লাশ ফেলতে দেখেন নিহতের মামাতো ভাই মুকুল ও মুকুলের শ্যালক খোকন। তাঁরা বিষয়টি স্থানীয় ২৩ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মঞ্জুর হোসেনকে জানান। পরে স্থানীয়রা ওই ট্যাংক থেকে আফরোজার লাশ উদ্ধার করেন।
খবর পেয়ে পুলিশ ৫ জানুয়ারি শনিবার ভোরে সেপটিক ট্যাংক থেকে লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ মর্গে পাঠায়।
জানা যায়, আফরোজা সৌদি আরবে দুই বছর চাকরি শেষে তিন-চার মাস আগে দেশে ফিরে পোশাক কারখানায় চাকরি নেন।
গাজীপুর সদর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মো. রিয়াজ জানান, নিহতের গলায় শ্বাসরোধ করে হত্যার আলামত রয়েছে।
পুলিশের ভাষ্যমতে, বিদেশ ফেরত আফরোজা সম্প্রতি পরকীয়ায় জড়িয়েছে এমন সন্দেহে কিছুদিন ধরে স্বামী-স্ত্রীর মাঝে দাম্পত্য কলহ চলে আসছিল। এর জেরে হত্যাকাণ্ডের এ ঘটনা ঘটতে পারে। হত্যার পর নিহতের স্বামী শাহজাহান মিয়া পালিয়ে যান।
ছয় ডাকাত আটক
এদিকে পৃথক ডাকাতির ঘটনার শুক্রবার বিকেলে বিভিন্ন মালামালসহ ছয় ডাকাত সদস্যকে আটক করেছে র্যাব সদস্যরা। তারা হলেন প্রদীপ পোদ্দার (৪১), মো. দুলাল হোসেন (৩০), মো. রাসেল (২২), মো. জাকির হোসেন (২৬), কোকিলা বেগম ওরফে প্রেরণা ও হাজেরা বেগম ওরফে আজান। র্যাব-১ এর সদস্যরা গোপন সংবাদের ভিত্তিতে গাজীপুর জেলার বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে তাদের আটক করে। এ সময় ডাকাত সদস্যদের কাছ থেকে ডাকাতি করা ৬২ দশমিক ৭৫ গ্রাম (৫ ভরি ৬ আনা) স্বর্ণের অলংকার, চারটি মোবাইল সেট, ১১ হাজার টাকা, স্বর্ণ যাচাই ক্যামিকেল ২ বোতল, সিটি গোল্ডের চুড়ি ১১ জোড়া, সিটি গোল্ডের কানের দুল ৭ জোড়া, সিটি গোল্ডের গলার নেকলেছ দুটি ও একটি কষ্টি পাথর উদ্ধার করা হয়।