বারান্দায় স্বামীর ঝুলন্ত লাশ, দ্বিতীয় স্ত্রী গ্রেপ্তার
নওগাঁ শহরের উকিলপাড়া এলাকায় আব্দুল লতিফ (৪৫) নামের এক ব্যক্তির ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। মরদেহ বাড়ির বারান্দার গ্রিলে ঝুলন্ত অবস্থায় ছিল। বুধবার দিবাগত রাত ২টার দিকে এ ঘটনা ঘটে।
এ ঘটনায় নিহতের দ্বিতীয় স্ত্রী মৌসুমী আক্তারসহ (৩৫) অজ্ঞাত তিন-চারজনের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। মামলা করেছেন নিহতের প্রথম স্ত্রীর বড় মেয়ে লাবনী আক্তার। এরপর মৌসুমী আক্তারকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
নিহতের মেয়ে লাবনীর বরাত দিয়ে নওগাঁ সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আব্দুল হাই জানান, এক বছর আগে বদলগাছী উপজেলা সদরের মৌসুমী আক্তারের সঙ্গে লতিফের বিয়ে হয়। বিয়ের পর তাঁরা দুজনে নওগাঁ শহরের উকিলপাড়া এলাকায় বসবাস করতে শুরু করেন। কিন্তু বিয়ের কিছুদিন পর থেকেই দুজনের মধ্যে পারিবারিক কলহ শুরু হয়। এক পর্যায়ে মৌসুমী আক্তার দেনমোহরের চার লাখ টাকা দিয়ে তাঁকে তালাক দেওয়ার জন্য চাপ দিতে থাকেন। দেনমোহরের টাকা না দিলে নারী নির্যাতনের মামলা করবেন বলেও একাধিকবার স্বামীকে হুমকি দেন তিনি। এ নিয়ে গত রোববার দুজনের মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়। একপর্যায়ে হাতাহাতি হয় তাদের মধ্যে। এতে লতিফের গাল ও ঠোঁট কেটে যায়।
ওসি জানান, বুধবার সন্ধ্যায় মৌসুমী তাঁর স্বামী লতিফকে ফোন করে তাঁর উকিলপাড়ার ভাড়া বাড়িতে ডাকেন। রাতে মৌসুমী ও তাঁর সহযোগীরা মিলে লতিফকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে। পরে বিষয়টিকে ধামাচাপা দেওয়ার জন্য বাড়ির বারান্দার গ্রিলের সঙ্গে ফাঁস লাগিয়ে ঝুলিয়ে রাখে। খবর পেয়ে রাত ২টার দিকে পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে লাশ উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যায়।
নওগাঁ পৌরসভার ৩ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর একেএম নজমুল হক বলেন, ‘মৌসুমী এর আগেও তিন/চারটি বিয়ে করেছিলেন। তিনি একজন প্রতারক ধরনের মেয়ে। বিয়ের সময় বড় অঙ্কের দেনমোহর বাধেন। পরে নানা ছুঁতোয় স্বামীর কাছ থেকে তালাক নিয়ে দেনমোহরের টাকা হাতিয়ে নেন। নওগাঁ শহরেই তিনি আরো দুটি বিয়ে করেছিলেন। নারী নির্যাতনের মামলার ভয় দেখিয়ে তাঁদের কাছ থেকেও মোটা অঙ্কের দেনমোহরের টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন।’
এ ব্যাপারে নওগাঁর সদর থানার পরিদর্শক (অপারেশন) ফয়সাল বিন আহসান বলেন, ‘খবর পেয়ে রাতেই পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে ঝুলন্ত অবস্থায় লাশ উদ্ধার করে। গলায় ছাড়া লাশের দেহে অন্য কোনো আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায়নি। নওগাঁ সদর হাসপাতালে মরদেহের ময়নাতদন্ত শেষে লাশ তাঁর স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন পেলে বোঝা যাবে, এটা আত্মহত্যা, না হত্যা। প্রাথমিক তদন্তে মনে হচ্ছে, আসামি মৌসুমী আক্তার একজন প্রতারক চক্রের সদস্য। মোটা অঙ্কের দেনমোহরের শর্তে বিয়ে করার পর, নারী নির্যাতনের মামলার ভয় দেখিয়ে দেনমোহরের টাকা উদ্ধার করাই তাঁর কাজ।’
নিহত আব্দুল লতিফ নওগাঁ শহরের পুরাতন মাছ বাজার এলাকায় মেসার্স ইত্যাদি সিরামিকস নামের একটি দোকানের কর্মচারী ছিলেন। তাঁর পৈত্রিক বাড়ি জেলার পত্নীতলা উপজেলার শিয়াড়া ইউনিয়নের ডাঙ্গাপাড়া গ্রামে। ছয়-সাত বছর থেকে তিনি পরিবার নিয়ে নওগাঁ শহরে বসবাস করছেন। তিনি প্রথম স্ত্রী ও সন্তানদের নিয়ে নওগাঁ পৌরসভার মাস্টারপাড়া এলাকায় একটি বাড়িতে ভাড়া থাকতেন। আর দ্বিতীয় স্ত্রী মৌসুমী আক্তার পৌরসভার উকিলপাড়া এলাকার একটি বাড়িতে ভাড়া থাকতেন।