স্বাধীনতার পর এই প্রথম মন্ত্রিসভায় কিশোরগঞ্জের কেউ নেই
যেন একে একে নিভে যাচ্ছে সব আলো। আজ রোববার নতুন মন্ত্রিসভার নামের তালিকা ঘোষণার পর এমনটা বলেই আক্ষেপ করছেন কিশোরগঞ্জের মানুষ। স্বাধীনতার ৪৮ বছর পর দীর্ঘ সময়ে এই প্রথম কোনো মন্ত্রিসভায় এই জেলার কেউ নেই।
প্রধানমন্ত্রীর উক্তি মতে হীরার টুকরা খ্যাত কিশোরগঞ্জ কিছুদিন আগেও সত্যিকারের তারার মতো চোখ ধাঁধানো আলো ঝলমল করত। চোখ ঝলসানো সে আলো যেন কিশোরগঞ্জকে সারা দেশের মধ্যে ঈর্ষণীয় করে তুলেছিল। কী ছিল না বা কিসের অপূর্ণতা ছিল কিশোরগঞ্জে? এরই মধ্যে একই সঙ্গে একই সময়ে বাংলাদেশের আকাশ আলোকিত করা তারকাদের মধ্যে ছিলেন মহামান্য রাষ্ট্রপতি থেকে শুরু করে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় (এলজিআরডি) মন্ত্রী, প্রধান বিচারপতি, সেনাপ্রধান, পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি), শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী; যা বাংলাদেশের ইতিহাসে নজিরবিহীন। এ ছাড়া মন্ত্রণালয়ের সচিব ও অধিদপ্তরের মহাপরিচালক পদেও ছিলেন কয়েকজন। দেশজুড়ে ছড়িয়ে দেওয়া সেই কীর্তিমানদের সুনামে যেন মুগ্ধ ও ধন্য হতো কিশোরগঞ্জের মানুষ।
মৃত্যু ও অবসরজনিত কারণ, বাদ পড়া এবং সর্বশেষ আজ মন্ত্রিসভা ঘোষণার পর চোখ ধাঁধানো সেই আলো যেন ম্রীয় থেকে ম্রীয়মান হয়ে পড়ল। এর মাঝে শুধু রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ যেন একমাত্র টিকে থাকা তারা হিসেবে সবেধন নীলমনি হয়ে রইলেন।
কিশোরগঞ্জবাসীর গর্বের ধন, জনপ্রশাসন ও সাবেক স্থানীয় সরকারমন্ত্রী, আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও সাবেক সাধারণ সম্পাদক, টানা পাঁচবার নির্বাচিত স্থানীয় সংসদ সদস্য সৈয়দ আশরাফুল ইসলামকে ব্যথাতুর চিত্তে জানাজার মাধ্যমে চির বিদায় জানানোর পর পরই সাধারণ মানুষ শুনলেন আরেক দুঃসংবাদ। কিশোরগঞ্জের মানুষ জানলেন নতুন মন্ত্রিসভায় জেলার কেউ নেই। এটা শোনার পর থেকে কেউ মেনে নিতে পারছেন না।
কিশোরগঞ্জ থেকে দায়িত্ব পালনকারী মন্ত্রীদের মধ্যে ১৯৭৩ সালে প্রথম সংসদে সৈয়দ নজরুল ইসলাম সংসদ উপনেতা ও শিল্পমন্ত্রী, মনোরঞ্জন ধর আইন, সংসদ ও বিচার বিষয়ক মন্ত্রী এবং আসাদুজ্জামান খান পাটমন্ত্রী ছিলেন। ১৯৭৫ সালে খন্দকার মোশতাক আহমদের মন্ত্রিসভায় আসাদুজ্জামান খান বন্দর, নৌবাহিনী ও অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন মন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন।
১৯৭৯ সালে দ্বিতীয় সংসদে ডা. ফজলুল করিম স্বাস্থ্য, গৃহায়ণ ও গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৮৬ সালে তৃতীয় সংসদে হাবিবুল হক ভূঁইয়া আইন, বিচার ও সংসদ মন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৮৮ সালে চতুর্থ সংসদে মো. মুজিবুল হক চুন্নু ভূমি মন্ত্রণালয়ের উপমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৯১ সালে পঞ্চম সংসদে এ বি এম জাহিদুল হক বন্দর, জাহাজ ও নৌচলাচল উপমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন।
১৯৯৬ সালের সপ্তম সংসদে বর্তমান রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ ডেপুটি স্পিকার এবং প্রয়াত জিল্লুর রহমান স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী এবং সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। ২০০১ অষ্টম সংসদে ড. এম ওসমান ফারুক শিক্ষামন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। ২০০৮ সালে নবম সংসদে বর্তমান রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ স্পিকার এবং সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন।
২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিল আবদুল হামিদ প্রথম মেয়াদে রাষ্ট্রপতি এবং ২০১৮ সালের ৭ ফেব্রুয়ারি দ্বিতীয় মেয়াদে রাষ্ট্রপতি হিসেবে পুনরায় নির্বাচিত হন। ২০১৪ সালে দশম জাতীয় সংসদে পুনরায় সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রীর দায়িত্ব পান। পরে ২০১৫ সালের ৯ জুলাই থেকে এক মাস এক সপ্তাহ দপ্তরবিহীন মন্ত্রী থাকার পর ১৬ জুলাই জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব লাভ করেন। একই সংসদে মহাজোটের শরিক হিসেবে জাতীয় পার্টি থেকে মো. মুজিবুল হক চুন্নু শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
এ নিয়ে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে কিশোরগঞ্জ থেকে মন্ত্রিসভায় কাউকে অন্তর্ভুক্তি করতে প্রধানমন্ত্রীর সুদৃষ্টি কামনা করেছেন জেলার পেশাজীবী নেতাসহ ও সামাজিক নেতারা। তাদের মধ্যে আছেন কিশোরগঞ্জ জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট এম এ রশীদ, জেলা পাবলিক লাইব্রেরির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মোজাম্মেল হক খান, পূজা উদযাপন পরিষদের জেলা সভাপতি অ্যাডভোকেট ভুপেন্দ্র ভৌমিক দোলন, জেলা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির আহ্বায়ক লেলিন রায়হান শাহিন, চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি মজিবুর রহমান বেলাল, মানবাধিকার নাগরিক ফোরামের সভাপতি আহমাদ ফরিদ, নাগরিক অধিকার সুরক্ষা মঞ্চের আহ্বায়ক শেখ সেলিম কবীর ও সম্মিলিত নাগরিক ফোরামের সভাপতি এনায়েত করিম অমি।
এক প্রতিক্রিয়ায় তাঁরা বলেন, স্বাধীনতার পর প্রতিটি মন্ত্রিসভায় এ জেলার এক বা একাধিক সদস্য ছিলেন। কিশোরগঞ্জ থেকে যোগ্য জনপ্রতিনিধির অভাব কখনো হয়নি। বর্তমান প্রধানমন্ত্রী অন্যদের চেয়ে বেশি করে এই মূল্যায়ন করেছেন। তাই জেলার উন্নয়নের স্বার্থে অতীতের ধারাবাহিকতা বজায় রেখে কিশোরগঞ্জ থেকে কাউকে মন্ত্রিসভায় অন্তর্ভুক্ত করা হবে বলে কিশোরগঞ্জের মানুষ আশা করছে।