‘২৭ বছর পর বিরোধীদলীয় নেতার পদে পুরুষ’
দীর্ঘ ‘২৭ বছর পর’ জাতীয় সংসদে বিরোধীদলীয় নেতার আসনে বসলেন একজন পুরুষ রাজনীতিবিদ। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দ্বিতীয় সংখ্যাগরিষ্ঠতায় বিরোধীদল এখন জাতীয় পার্টি। তাই এবারের বিরোধীদলীয় নেতা জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ।
আজ রোববার দুপুর ১২টায় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর কাছে শপথ গ্রহণ করেন এরশাদ। এরপর বিরোধীদলের নেতার কক্ষে কথা বলেন তিনি।
তখনই বিষয়টি উল্লেখ করে জাতীয় পার্টির মহাসচিব মসিউর রহমান রাঙ্গা দলের চেয়ারম্যান এরশাদকে উদ্দেশ করে বলেন, ‘স্যার, দীর্ঘ ২৭ বছর পর আপনিই কোনো পুরুষ বিরোধীদলের নেতা হলেন।’
১৯৯০ সালে স্বৈরশাসক হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের পতনের পর এ পর্যন্ত সাতটি জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এর মধ্যে ছয়টিতেই ধারাবাহিকভাবে কখনো আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা, আবার কখনো বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া বিরোধীদলীয় নেতা হিসেবে দায়িত্বে ছিলেন। সবশেষ দশম জাতীয় সংসদে বিরোধীদলীয় নেতা হিসেবে ছিলেন জাপার জ্যেষ্ঠ কো-চেয়ারম্যান রওশন এরশাদ।
১৯৯১ সালে পঞ্চম জাতীয় সংসদে বিরোধীদলীয় নেতা ছিলেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা, ১৯৯৬ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি ষষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচন হয়। সে নির্বাচনে আওয়ামী লীগ অংশ নেয়নি। সেই সংসদে বিএনপি ২৭৮টি আসনে জয়লাভ করেছিল, একটি আসনে জিতেছিল ফ্রিডম পার্টি। আর ১০টি আসনে জিতেছিল স্বতন্ত্র প্রার্থীরা। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিল আনার পর পরই সেই সংসদ বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়েছিল।
(জাতীয় সংসদের সরকারি ওয়েবসাইটে ষষ্ঠ জাতীয় সংসদের বিরোধীদলীয় নেতার কোনো নাম নেই। সেখানে পঞ্চম সংসদে শেখ হাসিনা ও সপ্তম সংসদে খালেদা জিয়ার নাম বিরোধীদলের নেতা হিসেবে লেখা হয়েছে। মাঝখানে ষষ্ঠ জাতীয় সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা হিসেবে কারো নাম লেখা নেই। তবে বিরোধী দলের নেতাদের নামের টেবিলের নিচে নোট দিয়ে বলা হয়েছে, প্রথম ও ষষ্ঠ জাতীয় সংসদে কোনো বিরোধী দলনেতা নেই।)
পরে ১৯৯৬ সালেরই জুনে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে সপ্তম জাতীয় সংসদ নির্বাচন হলে তাতে বিজয়ী হয় আওয়ামী লীগ। সেই সংসদে বিরোধীদলীয় নেতা হন বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। এরপর ২০০১ সালে অষ্টম জাতীয় সংসদে বিএনপি ফের ক্ষমতায় ফেরে আর আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বিরোধীদলের নেতা হন। নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচন হয় ২০০৮ সালে। তখন খালেদা জিয়া বিরোধীদলীয় নেতা হন।
এরপর ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন বর্জন করে বিএনপি। সেই সংসদে আওয়ামী লীগ টানা দ্বিতীয়বারের মতো ক্ষমতায় ফেরে। সংসদে বিরোধীদলীয় নেতা হন জাতীয় পার্টির নেতা রওশন এরশাদ। যদিও জাতীয় পার্টির তিনজন সংসদ সদস্য সরকারের মন্ত্রিপরিষদেও ছিলেন।
২০১৮ সালে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নিরঙ্কুশ বিজয় হয়। আর এবারের সংসদে বিরোধীদলীয় নেতা এলেন এরশাদ।
এর বাইরে চতুর্থ জাতীয় সংসদের বিরোধীদলের নেতা ছিলেন জাসদ নেতা আ স ম আবদুর রব, তৃতীয় জাতীয় সংসদের ছিলেন শেখ হাসিনা, দ্বিতীয় সংসদের ছিলেন আসাদুজ্জামান মিয়া।
গত ৩০ ডিসেম্বরের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন জোট বিশাল বিজয় অর্জন করেছে। জাতীয় সংসদের ঘোষিত ফলাফলে ২৯৮ আসনের মধ্যে আওয়ামী লীগ একাই পেয়েছে ২৫৭টি আসন। মহাজোটভুক্ত জাতীয় পার্টি জিতেছে ২২টি সংসদীয় আসনে। আগামীকাল সোমবার মন্ত্রিপরিষদ গঠিত হবে।