এবার পাল্টা অভিযোগ নিক্সন সমর্থকদের
ফরিদপুর-৪ (ভাঙ্গা, চরভদ্রাসন ও সদরপুর) আসনে গত কয়েক দিনের সহিংসতার ব্যাপারে পাল্টা অভিযোগ করলেন বিজয়ী স্বতন্ত্র প্রার্থী মজিবুর রহমান চৌধুরী নিক্সন ও তাঁর সমর্থকরা। নির্বাচনের পর থেকে বাড়িঘরে হামলা, ভাঙচুর, লুটপাটের সঙ্গে নৌকার পরাজিত প্রার্থী কাজী জাফরউল্লাহ ও তাঁর সমর্থকরা জড়িত বলে অভিযোগ করেন তাঁরা।
কাউলীবেড়া ইউনিয়নের খাট্টা গ্রামের নিক্সন সমর্থক শাহিন মোল্লা বলেন, ‘আমাদের বাড়ির পাশে নির্বাচনী কেন্দ্রে দুপুরের দিকে ইউনিয়নের চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে তাঁর লোকজন নিয়ে নৌকার পক্ষে ভোট কাটতে এলে প্রশাসন ও আমরা বাধা প্রদান করি। এতে সে ক্ষিপ্ত হয়ে আমার বাড়িসহ এলাকার ১০/১২টি বাড়িতে ব্যাপক ভাঙচুর চালায়। এর মধ্যে আমার বাড়িতে হামলা, ভাঙচুর, লুটপাট চালায় ব্যাপকভাবে। হামলাকারীরা বাড়িতে থাকা টাকা-পয়সা, সোনা-গয়না ও মূল্যবান জিনিস নিয়ে যায়।’ তিনি বলেন, ‘আমার মোটরসাইকেলটি ভাঙচুর ও বাড়ির দুটি টিউবওয়েল পর্যন্ত উঠিয়ে ফেলে। এ ছাড়া আমার পরিবারের নারীদের ওপর তারা চড়াও হয়।’
ওই ওয়ার্ডের ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য মো. শহিদ মিয়া বলেন, ‘নির্বাচনের দিন দুপুরের দিক চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে নৌকার সমর্থকরা আমার বাড়িসহ আশপাশের ১০/১২টি বাড়িতে ব্যাপক ভাঙচুর ও লুটপাট চালায়।’ তিনি আরো বলেন, ‘চেয়ারম্যানের সঙ্গে আমাদের আগে যে পূর্বশত্রুতা ছিল, সে ঘটনা থেকেই তারা নির্বাচনের দিন মোক্ষম সুযোগ বুঝে হামলা ও লুটপাট চালায় আমাদের ওপর।’
স্বতন্ত্র প্রার্থীর সমর্থক ভাঙ্গা উপজেলার চেয়ারম্যান শাহাদাৎ হোসেন বলেন, ‘নৌকার সমর্থকরা আমাদের নেতাকর্মীদের ৯০টি বাড়িঘর ভাঙচুর করে। আর এসব ব্যাপারে আমাদের কোনো সমর্থক জড়িত নয়।’ তিনি জানান, ভোট কারচুপি করতে গিয়েছিল নৌকার লোকজন, এটা প্রতিহত করায় তাদের নামে মিথ্যা কথা বলা হচ্ছে।
এদিকে গণমাধ্যমে বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদ ভবনে বিজয়ী স্বতন্ত্র প্রার্থী মজিবুর রহমান চৌধুরী নিক্সন জানান, তাঁর এলাকায় নৌকার পক্ষ থেকে হামলা করা হয়েছে তাঁর সমর্থকদের পর। এসব ঘটনায় তদন্ত হচ্ছে। তদন্তেই প্রমাণ হবে কারা দোষী।
এ ব্যাপারে কাউলীবেড়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান রেজাইল হাসনাত দুদুর সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করলে তিনি সব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘আমি সকাল থেকেই ইউনিয়নের নয়টি ভোটকেন্দ্রে গিয়েছি পরিদর্শনে। এটা দেখে অনেকে বলতে পারে যে আমি জড়িত। আসলে প্রতিপক্ষের কিছু লোকজন মিথ্যা অপবাদ দিচ্ছে আমার নামে। এটা মোটেও সঠিক নয়। তারাই আরো আমাদের সমর্থকদের বাড়িঘরে হামলা চালিয়েছে।’
ভাঙ্গা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কাজী সাইদুর রহমান জানান, এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ, এপিবিএন, বিজিবি মোতায়েন রাখা হয়েছে যেকোনো পরিস্থিতি এড়াতে। আর এসব ঘটনায় উভয় পক্ষ থেকে মামলা করা হয়েছে বেশ কিছু। আটক করা হয়েছে আজিমনগর ইউনিয়নের চেয়ারম্যানসহ প্রায় ২০ জনকে। তিনি বলেন, ‘আমাদের চেষ্টার কারণে বড় কোনো ঘটনা ঘটাতে পারেনি হামলাকারীরা।’
এদিকে এসব ঘটনার সৃষ্ট পরিস্থিতি সরেজমিনে পরিদর্শনে করে যান মানবাধিকার কমিশনের সচিব হিরন্ময় বাড়ৈ। তিনি গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুর থেকে বিকেল পর্যন্ত ভাঙ্গা উপজেলার কাউলীবেড়া ইউনিয়নের ঘাটরা গ্রাম, নাসিরাবাদা ইউনিয়নের ভদ্রকান্দা ও কালামৃধা ইউনিয়নের কালামৃধাসহ বেশ কয়েকটি এলাকা সরেজমিনে পরিদর্শন করেন।