শপথ নেওয়ার পর কে কী বললেন?
বিএনপি ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নির্বাচিত সংসদ সদস্যদের শপথ নেওয়া উচিত বলে মনে করেন আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ নেতারা। যারা একইসঙ্গে একাদশ জাতীয় সংসদের সদস্যও। আর দ্বিধাবিভক্তি ভুলে দেশকে উন্নয়নের পথে এগিয়ে নিতে সবাই একসঙ্গে কাজ করবেন বলে জানিয়েছেন তরুণ সংসদ সদস্যরা। জাতীয় পার্টির সদস্যরা বিরোধী দলের চেয়ে মহাজোটের সঙ্গেই থাকতে চান বলে জানিয়েছেন দলের মহাসচিব মসিউর রহমান রাঙ্গা।
সংসদ সদস্য হিসেবে শপথ নিতে আজ বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ৯টা থেকেই জাতীয় সংসদ ভবনে আসতে থাকেন নবনির্বাচিত সংসদ সদস্যরা। বেলা ১১টার কিছু সময় পর শপথ নেন তাঁরা। এরপর আওয়ামী লীগের সংসদীয় দলের সভা শেষে দুপুর ২টা নাগাদ একে একে সংসদ ভবন থেকে বেরিয়ে আসেন তাঁরা।
এ সময় আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘এক্সপেরিয়েন্স এবং এনার্জির একটা ভালো সংমিশ্রণ হবে এবারের সংসদে। এই দুইয়ের সমন্বয়ে একটি কার্যকর সংসদ হবে, এটাই প্রত্যাশা।’
প্রতিপক্ষ লিগ্যাল ব্যাটলে যেতে পারে বলে উল্লেখ করে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে।’
আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য তোফায়েল আহমেদ বলেন, ‘আমরা মনে করি, যারা নির্বাচিত হয়েছেন, সকল দলেরই প্রতিনিধিরা, তাদের সংসদ সদস্যদের সংসদে আসা উচিত।’
চট্টগ্রাম-৮ আসন থেকে নৌকা প্রতীকে নির্বাচিত সংসদ সদস্য বাংলাদেশ জাসদের কার্যকরী সভাপতি মঈন উদ্দিন খান বলেন, ‘নির্বাচনোত্তর জাতির মধ্যে এই যে দ্বিধাবিভক্তি, যেটা বর্তমানেও অব্যাহত রয়েছে, এটা কাটিয়ে তোলাটাই হবে বর্তমান সংসদের প্রধান কাজ।’
বিকল্পধারা বাংলাদেশের যুগ্ম মহাসচিব ও মুন্সীগঞ্জ-১ আসন থেকে নৌকা প্রতীকে নির্বাচিত সংসদ সদস্য মাহী বি. চৌধুরী বলেন, ‘জনগণ তাদের ভোট দিয়েছেন। এখন তারা যদি যত তাড়াতাড়ি সম্ভব শপথ গ্রহণ না করেন, তাহলে জনগণের এই রায়ের সঙ্গে প্রতারণা করা হবে।’
এ সময় তাদের অনেকের কাছে সাংবাদিকদের প্রশ্ন ছিল জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থীরা শপথ না নেওয়ায় কারা হচ্ছেন এবারের সংসদের বিরোধী দল। সঙ্গে মন্ত্রিসভা কবে নাগাদ গঠন হবে আর থাকছেনই বা কারা।
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও কুষ্টিয়া-৩ আসন থেকে নির্বাচিত সংসদ সদস্য মাহবুব-উল-আলম হানিফ বলেন, ‘ক্যাবিনেট সভায় কে কে থাকবে সেটা প্রাইম মিনিস্টারের একান্ত ব্যক্তিগত ব্যাপার। তিনি চাইলে কারো সঙ্গে কথা বলতেও পারেন অথবা উনি নিজেই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিবেন।’
কুষ্টিয়া-২ আসন থেকে নির্বাচিত সংসদ সদস্য জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) সভাপতি হাসানুল হক ইনু বলেন, ‘মন্ত্রিসভা গঠন এবং মন্ত্রিসভার যাত্রা শুরুর সবকিছু মাননীয় শেখ হাসিনার এখতিয়ারভুক্ত ব্যাপার।’
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য শেখ সেলিম বলেন, ‘জাতীয় পার্টির সরকার গঠনে আসার দরকার নেই, কারণ তারাই বিরোধীদল হচ্ছে। সুতরাং আমাদের তরফ থেকে আমরা মনে করি, তারা বিরোধীদলে থাকলে ভালো হবে।’
বিকল্পধারা বাংলাদেশের যুগ্ম মহাসচিব মাহী বি. চৌধুরী, জাতীয় পার্টির মহাসচিব মসিউর রহমান রাঙ্গা, আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এনামুল হক শামীম, নতুন সংসদ সদস্য শেখ সারহান নাসের তন্ময় ও ব্যারিস্টার সেলিম আলতাফ জর্জ এবং স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য মজিবুর রহমান নিক্সন (ওপরে বাঁ থেকে)। ছবি : এনটিভি
তবে বেলা আড়াইটা নাগাদ সংসদ ভবন থেকে বেরিয়ে এসে জাতীয় পার্টির মহাসচিব বলেন, বিরোধী দল হিসেবে নয়, সরকারের সাথেই সংসদে থাকতে চান তারা।
জাতীয় পার্টির মহাসচিব ও নবনির্বাচিত সংসদ সদস্য মসিউর রহমান রাঙ্গা বলেন, ‘মহাজোটের সঙ্গে আমরা বিগত দিনেও ছিলাম, এখনো আছি। আগামী দিনেও আমরা মহাজোটের সঙ্গেই থাকব। সরকারি দলে বা বিরোধী দলে কোথাও থাকতে আমাদের কোনো আপত্তি নাই।’
রাঙ্গা বলেন, ‘তবে আমাদের সংসদ সদস্যদের কথা হচ্ছে, যেহেতু দেশের মানুষ মহাজোটকে ২৮৮ আসনে নির্বাচিত করেছে সরকার গঠনের জন্য। সুতরাং আমাদের সংসদ সদস্যরা তাদের এলাকার উন্নয়নের জন্য, দেশের উন্নয়নের জন্য তারা মহাজোটের সঙ্গে থাকতে আগ্রহী এবং সেটাই সিদ্ধান্ত হয়েছে।’
আর এবারই প্রথমবারের মতো নির্বাচিত হওয়া তরুণ সংসদ সদস্যরা প্রতিশ্রুতি দিলেন নিজ নিজ এলাকার ও মানুষের জীবনমান উন্নয়নের।
শরীয়তপুর-২ আসন থেকে প্রথমবারের মতো নির্বাচিত সংসদ সদস্য আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এনামুল হক শামীম বলেন, ‘আমার সাধ্যমতো চেষ্টা করব, আমার এলাকার জনগণসহ সারা দেশের মানুষের কল্যাণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখার জন্য।’
বাগেরহাট-২ আসনের সংসদ সদস্য শেখ সারহান নাসের তন্ময় বলেন, ‘সারা দেশে সাধারণ জনগণ স্বতঃস্ফূর্তভাবে ভোট দিতে এসেছে। অনেক আশা-আকাঙ্ক্ষা নিয়ে এসেছেন তারা। এ আশা আকাঙ্ক্ষার জায়গাটা ধরে রাখা হবে আমার এবং আমাদের সবার মূল কাজ।’
কুষ্টিয়া-৪ আসনের সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার সেলিম আলতাফ জর্জ বলেন, ‘উন্নয়নের যেসব কার্যক্রম বর্তমানে আছে এবং ভবিষ্যতে যেগুলো আছে সেগুলো অব্যাহতভাবে এগিয়ে নিয়ে যাওয়াই প্রধান লক্ষ্য।’
ফরিদপুর-৪ আসনে স্বতন্ত্রভাবে পুনরায় নির্বাচিত সংসদ সদস্য মজিবুর রহমান নিক্সন বলেন, ‘আমার তিন থানাকে মাদকমুক্ত করব। বিগত দিনের যে উন্নয়ন সে উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখব।’
এবারের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের দেওয়া ইশতেহার পূরণে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে যার যার পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ চেষ্টা করবেন বলেও জানান সবাই।