শেষ হলো ভোট, ফলের অপেক্ষা
সারা দেশে ১৫ জনের প্রাণহানি, অর্ধশতাধিক প্রার্থীর মাঝপথে ভোটের মাঠ থেকে সরে যাওয়া, হামলা, এজেন্টদের বের করে দেওয়াসহ নানা অনিয়ম আর অভিযোগের মধ্য দিয়ে শেষ হয়েছে ২৯৯ আসনে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোটপর্ব।
আজ রোববার সকাল ৮টা থেকে শুরু হয়ে বিকেল ৪টা পর্যন্ত একযোগে দেশের ১০ কোটি ৪২ লাখ ৩৮ হাজার ৬৭৭ জন ভোটার ৪০ হাজার ১৮৩টি নির্বাচনী কেন্দ্রে তাঁদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করেন। ৩০০ আসনের মধ্যে একজন প্রার্থীর মৃত্যুজনিত কারণে ২৯৯ আসনে ভোট গ্রহণ করা হবে। স্থগিত হওয়া গাইবান্ধা-৩ আসনে ভোট গ্রহণ করা হবে ২৭ জানুয়ারি।
যদিও নির্বাচন কমিশন ও ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, দু-একটি স্থানে ‘বিচ্ছিন্ন, বিক্ষিপ্ত ঘটনা’ ছাড়া সারা দেশে সার্বিকভাবে শান্তিপূর্ণভাবে ভোট অনুষ্ঠিত হয়েছে। বিপরীতে বিএনপি নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট আর ২০ দলীয় জোটের পক্ষ থেকে ভোট শুরুর পর থেকেই এজেন্টদের বের করে দেওয়ার অভিযোগ ছিল।
২০০৮ ও ২০১৪ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে টানা দুবার জিতে ক্ষমতায় আসে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দল ও মহাজোট। এবার টানা তৃতীয়বারের মতো ক্ষমতায় আসার জন্য লড়ছে আওয়ামী লীগ। অন্যদিকে এক দশক পর জাতীয় নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দল ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। ধারণা করা হচ্ছে, ভোটারদের আগ্রহের শীর্ষে রয়েছে এ দুই জোটের প্রার্থীরা।
আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন জোটই পুনরায় ক্ষমতায় প্রত্যাবর্তন করবে, নাকি পরিবর্তন ঘটিয়ে বিএনপি হারানো ক্ষমতায় ফিরে আসবে—সেই প্রশ্নেরই মীমাংসা দিয়েছেন ভোটাররা। এখন শুধু ফলের অপেক্ষা। যে দল বা জোটই জিতুক, তারা আগামী পাঁচ বছর দেশ শাসন করবে।
এবারই প্রথম ছয়টি আসনের সব ভোটার ইভিএমের মাধ্যমে ভোট দিয়েছেন। ভোটের এই প্রক্রিয়া নিয়ে ভোটারদের ইতিবাচক প্রতিক্রিয়ার পাশাপাশি নির্বাচন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের কাছে অভিযোগও দিয়েছেন প্রার্থীরা। এই ছয়টি আসন হলো ঢাকা-৬, ঢাকা-১৩, রংপুর-৩, খুলনা-২, সাতক্ষীরা-২ ও চট্টগ্রাম-৯। ধারণা করা যায়, এই ছয়টি আসনেই সবার আগে ভোটের ফল প্রকাশ পাওয়া যাবে।
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ভোট শুরুর আগে-পরে ঝরে গেছে ১৫ প্রাণ। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও নির্বাচন-সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের পক্ষ থেকে নিহতের বিষয়ে জানানো হয়েছে।
এর মধ্যে চট্টগ্রামের বাঁশখালী ও পটিয়ায় দুজন, কুমিল্লার চান্দিনা ও নাঙ্গলকোটে দুজন, লক্ষ্মীপুর সদরে, নাটোরের নলডাঙ্গা, রাঙামাটির কাউখালী, রাজশাহীর মোহনপুর ও কক্সবাজারের পেকুয়া, নরসিংদীর শিবপুর এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সদর উপজেলায় একজন করে নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন আরো বেশ কয়েকজন।
এ নির্বাচনে রেকর্ডসংখ্যক প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। উচ্চ আদালতের আদেশের পর বেশ কয়েকজনের প্রার্থিতা বাতিলের পর এখন মোট প্রার্থী এক হাজার ৮৬১ জন। এর মধ্যে ১২৮ জন স্বতন্ত্র প্রার্থী, বাকিরা দল মনোনীত।
দেশে ৩৯টি রাজনৈতিক দলের নিজস্ব প্রতীক থাকলেও এ নির্বাচনে জোটের মেরুকরণে অর্ধেক সংখ্যক দলই দুই মেরুতে ভিড়েছে। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ তাদের জোটসঙ্গী বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি, জাসদ, বিকল্পধারা ও তরীকত ফেডারেশনের ১৪ জনকে নৌকা প্রতীক বরাদ্দ দিয়েছে। আওয়ামী লীগ তাদের মহাজোটের শরিক জাতীয় পার্টির জন্য ২৬টি আসন ছেড়ে দিয়েছে। এ ছাড়া জাতীয় পার্টি ১৪৮টি আসনে মুক্তভাবে দলীয় লাঙ্গল প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করছে।
আর বিএনপি ধানের শীষ প্রতীক দিয়েছে গণফোরাম, জেএসডি, নাগরিক ঐক্য, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ, এলডিপি, খেলাফত মজলিস, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম, বিজেপি, বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি, এনপিপি ও পিপিবির ৪৩ প্রার্থীকে। এর বাইরে জোটে থাকা অন্য দলগুলো নিজ নিজ প্রতীকে তাদের প্রার্থী দিয়েছে।