ভোট ঘিরে ঢাকা হলো ফাঁকা
একদিকে, টানা তিনদিনের ছুটি। অন্যদিকে, যানবাহন চলাচলে নির্বাচন কমিশনের নিষেধাজ্ঞা। সব মিলিয়ে ভোট দিতে রাজধানী ঢাকা ছেড়ে এখন গ্রামের বাড়িতে লোকজন। রয়ে গেছেন মূলত এখানকার ভোটাররাই।
এদিকে, আগামীকাল রোববারের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে আজ শনিবার দিবাগত রাত ১২টা থেকে বন্ধ হচ্ছে যানচলাচল।
আজ রাজধানীর বিভিন্ন জায়গা ঘুরে দেখা যায়, মানুষের মতো ঢাকার আন্তঃযোগাযোগ পরিবহনের সংখ্যাও অনেক কম। অন্যদিকে, ভিড় জমেছে, বাস, ট্রেন ও লঞ্চ স্টেশনগুলোতে। তবে, নিজ এলাকার পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিতে আগেই বাড়ি ফিরেছেন কেউ কেউ।
আজ রাজধানীর সায়েদাবাদ, যাত্রাবাড়ী, শ্যামলী, কল্যাণপুর, গাবতলী ও মহাখালী বাস টার্মিনাল ঘুরে এমন চিত্র দেখা যায়।
আজ কথা হয়, আমির হোসেন (৫২) নামের এক ব্যক্তির সঙ্গে। দুই মেয়ে তাসফিয়া, জেরিন ও স্ত্রী জামিনা খাতুনকে নিয়ে উঠেছেন ট্রেনের ছাদে। টিকিট নেই, নেই ট্রেনের ভেতরে দাঁড়ানোর ঠাঁই। বাধ্য হয়ে উঠতে হয়েছে ট্রেনের ছাদে। ভোট দিতে ছুটেছেন বাড়ি নেত্রকোনার মোহনগঞ্জ উপজেলায়।
গতকাল গাবতলী, মহাখালী ও সায়েদাবাদ বাস টার্মিনালে কোথাও পা রাখার কোনো জায়গা ছিল না। বাস কাউন্টারগুলোতে বাসের জন্য যাত্রীদের দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে দেখা গেছে। তবে উত্তরবঙ্গ ও দক্ষিণবঙ্গে যেতে চন্দ্রা, বাইপাইল, জয়দেবপুর, নবীনগর, কালিয়াকৈর, মির্জাপুর ও এলেঙ্গাসহ মহাসড়কে বিভিন্ন পয়েন্টে যাত্রীবাহী বাসগুলো ধীরে ধীরে চলেছে। বিশেষ করে ঢাকা-টাঙ্গাইল ও ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের কোনো কোনো স্থানে যানজটের সৃষ্টি হয়েছিল।
মহাখালী বাস টার্মিনালে আজ সকাল থেকেই ছিল বাস যাত্রীদের উপচে পড়া ভিড়। ময়মনসিংহ, জামালপুর, টাঙ্গাইল, শেরপুর, বগুড়া, রংপুর, সিরাজগঞ্জ প্রভৃতি জেলায় যেতে এ টার্মিনালে যাত্রীরা ভিড় করেন।
সায়েদাবাদ বাস টার্মিনাল ঘুরে দেখা গেছে, বিভিন্ন রুটের পর্যাপ্ত বাস না থাকায় যাত্রীদের ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে।
এ ব্যাপারে ঢাকা-কোম্পানীগঞ্জ রুটের তিশা বাস সার্ভিসের পরিচালক ওমর ফারুক খন্দকার বলেন, ‘ঈদের চার থেকে পাঁচ দিন আগে টিকেটের যেমন চাপ থাকে, নির্বাচন উপলক্ষে ঠিক তেমন চাপ যাচ্ছে। বৃহস্পতিবার ও শুক্রবারের সব টিকেট কয়েকদিন আগেই বিক্রি হয়ে গেছে।’
গাবতলী বাসস্ট্যান্ডে অপেক্ষমান যাত্রী রবিউল ইসলাম জানান, গত মঙ্গলবার এসে বৃহস্পতিবার রাতের টিকেট কাটার চেষ্টা করেছেন তিনি। পরে না পেয়ে শুক্রবারের টিকেট কাটেন।
হানিফ পরিবহনের কাউন্টার ম্যানেজার সুমন ইসলাম বলেন, ‘ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) পক্ষ থেকে ঈদের মতো করে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। সেই নির্দেশনা অনুযায়ী বাস চলাচল করছে।’
এবারের ভোটের দিন পড়েছে সপ্তাহের প্রথম কর্মদিবসে। ফলে ভোটের আগের দুদিনের সাপ্তাহিক ছুটিসহ একটানা তিন দিন ছুটি মিলেছে। এর সঙ্গে কেউ কেউ আগের দুদিন বুধ ও বৃহস্পতিবার ছুটি নিয়েছেন। তাঁরা বড়দিনের ছুটিসহ ছয়দিন নিজ নিজ বাড়িতে থাকার সুযোগ পেয়েছেন। আবার অনেকে তিনদিনের সঙ্গে ভোটের পর আরো কয়েকদিন ছুটি নিয়ে দীর্ঘসময় বাড়ি থাকার ব্যবস্থা করে গেছেন।
জাতিসংঘের ওয়ার্ল্ড আরবানাইজেশন প্রসপেক্টের তথ্য অনুযায়ী, ঢাকা শহরের জনসংখ্যা বর্তমানে এক কোটি ৭০ লাখ। অন্যদিকে ঢাকা মহানগরসহ ঢাকা জেলায় এবার মোট ভোটার ৭৭ লাখ ৩০ হাজার। মহানগরীর বাইরে আরো পাঁচটি আসন রয়েছে। সেই হিসেবে ঢাকা মহানগরের ১৫টি আসনে যদি ৬০ লাখ ভোটারও থাকেন, তাহলে রাজধানীর এক কোটি ১০ লাখ মানুষ ভোটার নন। ভোটকে কেন্দ্র করে গ্রামমুখো মানুষের সংখ্যাও তাই অনেক।
এদিকে, আজ রাত ১২টা থেকে আগামীকাল রাত ১২টা পর্যন্ত সারাদেশে যান চলাচলে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। তবে নির্বাচনের কাজে জড়িতদের ক্ষেত্রে এ নির্দেশ প্রযোজ্য হবে না।
নির্বাচন কমিশন বলেছে, নির্বাচনের দিন কোনো প্রাইভেট গাড়ি ব্যবহার করা যাবে না। নির্বাচন কমিশন অনুমোদিত স্টিকার ব্যবহার করে গণমাধ্যমসহ সংশ্নিষ্টদের যানচলাচল করতে পারবে। স্টিকার ব্যবহার না করলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী আটকাতে পারবে। তবে জরুরি সেবা যেমন- অ্যাম্বুলেন্স, ফায়ার সার্ভিস, পত্রিকার বাহন গাড়ি, শিশু খাদ্য, আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ব্যবহারকারীদের জন্য যানচলাচলে নিষেধাজ্ঞা শিথিল করা হয়েছে। তবে, যান্ত্রিক যান না চললেও রিকশা-ভ্যান ব্যবহার করা যাবে।