১৫ ফিটের নৌকা নিয়ে হামলা করতে আসে : মঞ্জু
নির্বাচনী প্রচারণায় বাধা দেওয়ার অসংখ্য অভিযোগ জানিয়েছেন খুলনা-২ আসনের বিএনপির প্রার্থী ও কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক নজরুল ইসলাম মঞ্জু।
শুক্রবার আওয়ামী লীগের কর্মীরা নৌকা নিয়ে তাঁর কর্মীদের ওপর হামলা করতে আসে বলেও অভিযোগ করেছেন তিনি। এছাড়া শুক্রবার রাত থেকে শনিবার সকাল পর্যন্ত ৪৬ জন কর্মীকে আটক করা হয়েছে বলেও অভিযোগ করেন মঞ্জু।
শনিবার দুপুরে খুলনা মহানগর বিএনপি কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে মঞ্জু এসব কথা বলেন।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন খুলনা-৩ আসনের প্রার্থী রকিবুল ইসলাম বকুল, সাবেক সিটি মেয়র মনিরুজ্জামান মনি, সাহরুজ্জামান মোর্ত্তজা প্রমুখ।
নজরুল ইসলাম মঞ্জু বলেন, ‘গতকাল বিশ্বাসপাড়ায় আমার ১৬ নম্বর ওয়ার্ডে গণসংযোগ ছিল। আমি প্রার্থী, আমি যেই বিশ্বাসপাড়ায় ঢুকেছি, সেখানে ১৫ ফিটের একটা নৌকা, যেটা আচরণবিধির লঙ্ঘন, সেই নৌকা বানিয়ে ঢেলাগাড়ির ওপর নিয়ে আমার সামনে এসে আমার কর্মীদের ওপরে হামলায় উদ্যত হয়। সেখানে আওয়ামী লীগের নেতারাও ছিলেন উপস্থিত। তাঁরা পরে ঠেকিয়ে দিয়েছে। চিত্র ভিন্ন। আমাদের মহিলাদলের কর্মী মুর্শিদা, তাঁর বাড়িতে হামলা করেছে। বুলু বিশ্বাস আওয়ামী লীগ নেতা।
‘আমার নারী কর্মীকে পিটিয়েছে, তাঁর ভাইকে পিটিয়েছে’
বিএনপির প্রার্থী মঞ্জু বলেন, আমি আমার ১৬টি ওয়ার্ডের মধ্যে নয়টির কথা সব সময় আমার বক্তব্যে বলে থাকি। তার মধ্যে ২১ নম্বর ওয়ার্ডে নব্য এরশাদ সিকদার জন্ম নিয়েছে। এবং সেটি হচ্ছে মিয়া স্বপন। কাউন্সিলর মিয়া স্বপন। এই এলাকায় আমরা দুই সপ্তাহ পরে গত পরশু দিন ঢুকেছিলাম। আমি প্রার্থী, আমি মিছিল করতে গিয়েছিলাম। তারপরে আমরা, আমাদের মহিলা কর্মী এবং কর্মীদেরকে লিফলেট বিতরণের জন্য পাঠিয়েছিলাম। গতকাল আমার একজন মহিলা কর্মীকে অর্ধ উলঙ্গ করে পিটিয়েছে। এবং তাতে ঠেকাতে গিয়ে তাঁর ভাই সেলিম খানকে কুপিয়ে মাথা ফাটিয়েছে। তারপরেও আজকে আমরা আবার আমাদের কর্মী পাঠিয়েছি। একটু আগেও আমরা পুলিশকে বলেছি, হুমকি দিচ্ছে এখনই যান। ওই যে বললাম, সবই আছে। কিন্তু নির্দেশনামা হচ্ছে ভিন্ন রকম।
‘ভ্রাতুষ্পুত্রের পোস্টার লেগে যাচ্ছে, আমাদেরটা লাগছে না’
বৃষ্টিতে আমাদের সব পোস্টার পড়ে গেছে। আমরা গত দুইদিন সেগুলো লাগানোর জন্যে কাজ করছি। ভ্রাতুষ্পুত্রের পোস্টার লেগে গেছে, আমাদের পোস্টার লাগাতে দিচ্ছে না।
হেলমেট বাহিনী শহরের মোড়ে মোড়ে রাস্তায় টহল দিচ্ছে। আমাদের পোস্টার লাগাতে বাধা দিচ্ছে। এবং পোস্টার ছিনিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। আমরা লিখিত কমপ্লেইন করেছি গত পরশু দিন। থানায় আমি নিজে বলেছি। কিন্তু সজল বাড়ৈ বেপরোয়া। কারণ তিনি হচ্ছেন তালুকদার সাহেবের লোক। ছাত্রলীগের বড় নেতা। এবং তাঁর ভাই, বিএনপি কর্মী খুনের মামলার আসামি। ৩০ নম্বর ওয়ার্ডের শিহাব, বাপ্পী আমাদের কর্মীদেরকে ঢুকতে দিচ্ছে না। ২৫ নম্বর ওয়ার্ডে কাউন্সিলর টিপু আমাদের নেতাদেরকে সরাসরি টেলিফোনে হুমকি দিচ্ছে। যে ৩০ তারিখে দেখে নেওয়া হবে, তোমরা যদি এলাকায় থাকো। বলছিলেন বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক নজরুল ইসলাম মঞ্জু।
‘মাইক্রোবাসে করে সন্ত্রাসীরা ঘুরে বেড়াচ্ছে’
আমরা লক্ষ্য করছি, এই শহরের চাঞ্চল্যকর, কতগুলো মামলা, সেই মামলার আসামিরা সব শহরে ফিরে এসেছে। সর্বহারার বড় বড় খুনিরা এই শহরে ফিরে এসছে। এবং তারা আওয়ামী লীগের দুই প্রার্থীর অঞ্চলে অবস্থান করছে। এবং মাইক্রোবাসে করে তারা শহরে অস্ত্র-টস্ত্র নিয়ে ঘুরাফিরা করছে। এর ইঙ্গিত ভালো নয়। আমরা এই ধরনের, বিপদজনক খুনিদের, তাদের গাড়ি তল্লাশি এবং তাদের গ্রেপ্তারের আমরা জোর দাবি জানাচ্ছি।
‘একেকটা ওয়ার্ডের দায়িত্ব নিয়েছেন একেকজন দারোগা’
গত কয়েকদিনে পুলিশ নতুন টেকনিক অবলম্বন করেছে। পুলিশের থানার অফিসাররা, আমাদের কর্মীদের বাড়িতে বাড়িতে যাচ্ছে, ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে যাচ্ছে। কারণ খুলনা থানায় এখন ২৫ জন দারোগা। আমার থানায় হচ্ছে ১৬টা ওয়ার্ড। একটা ওয়ার্ডের দায়িত্ব নিয়েছেন একজন দারোগা। এবং সে তালিকা বানিয়ে বাড়ি বাড়ি জিজ্ঞেস করছে, উনি কই? উনি কয়বার জেলখানায় গিয়েছেন? মামলা আছে কিনা? পরিবারদেরকে ভীতিসন্ত্রস্ত করার জন্য। থানার সোবহান, উত্তম এবং খুলনা সদর থানার কয়েকজন দারোগা এই কাজগুলো করছেন। এবং মাঠপর্যায়ের কর্মীদেরকে ভীতি সঞ্চার করে, এলাকা ত্যাগ করার জন্য তাঁরা বলছেন।
সেনাবাহিনীতেই আমরা বিশ্বাসী এবং আল্লাহই আমাদের সহায়
বিএনপির প্রার্থী মঞ্জু বলেন, আমাদের কাছে আরো খবর আছে। খবরগুলো খুবই বিপদজনক। সেগুলো আমরা আপনাদেরকে এখনই বলতে পারছি না। ভবিষ্যতে বলব, আমাদের বলতেই হবে। ঢাকা শহর থেকে আসা বিভিন্ন অচেনা মুখ গাড়িতে করে ঘুরে বেড়াচ্ছে। আমরা গাড়ির নম্বরগুলো কালেকশান করার চেষ্টা করছি। ভয়ংকর খুনিরা কিন্তু এখন খুলনায়। সেনাবাহিনী ২৪ তারিখে মোতায়েনের পরেই আমরা সেনাবাহিনীর কাছে এই তালিকা জমা দেব। আমরা পুলিশকে র্যাবকে বিশ্বাস করি না। একমাত্র দেশপ্রেমী সেনাবাহিনীতেই আমরা বিশ্বাসী এবং আল্লাহই হচ্ছে আমাদের সহায়।
এ সময় প্রচারণায় নানাভাবে বাধা দেওয়ার অভিযোগ জানিয়ে মঞ্জু বলেন, ‘আমাদের এই শহরের আমরা ২ এবং ৩ খুলনা বিএনপি শহর, ধানের শীষের শহর, এই শহরে কোনো অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনে আমরা হারি নাই। সেই শহরে নির্বাচনী প্রচারাভিযানে আমরা, বারবার বাধাগ্রস্ত হচ্ছি। হামলা, মামলা, হুমকি, পোস্টার ছিঁড়ে নেওয়া, লিফলেট ছিনিয়ে নেওয়া, মহিলা কর্মীদের ওপরে আক্রমণ, গ্রেপ্তার। কি ভয়াবহ চিত্র আমরা দেখতে পাচ্ছি। আমরা বারবার দাবি জানাচ্ছি, পুলিশ প্রশাসনের কাছে, যে আপনারা নিরপেক্ষ থাকুন। জনগণের নির্বাচনে যাতে ভোট শান্তিপূর্ণ হয়, তার জন্য চেষ্টা করুন। কিন্তু আমরা কি দেখছি। সরকারি দলকে পাহারা দিয়ে বিরোধী দলকে দমন করার যে সাঁড়াশি অভিযান, এই ঘৃণিত অভিযানের আমরা তীব্র নিন্দা জানাই। এটি কোনো ভোট নয়…। তারপরেও, আমাদের ঐক্যফ্রন্টের ড. কামাল সাহেব বলেছেন, শেষ পর্যন্ত আমরা নির্বাচনে থাকব।’
তবে, এসব অভিযোগ অস্বীকার করে পাল্টা সংবাদ সম্মেলন করেছেন এই আসনের আওয়ামী লীগের প্রার্থী আবদুস সালাম মুর্শেদী।
সালাম মুর্শেদী বলেন, ‘আমাকে সামাজিকভাবে হেয় করার চেষ্টায় লিপ্ত। আপনারা জানেন, আমি দেশের একজন প্রতিষ্ঠিত শিল্পউদ্যোক্তা। আমি বহু বছর আগে থেকেই আমার এলাকায়, বিভিন্ন সামাজিক কর্মকাণ্ড চালিয়ে আসছি। নির্বাচনী প্রচারণা শুরুর আগে পরে আমার নির্বাচনী এলাকা রূপসা, তেরখাদা ও দীঘলিয়ায় দলীয় নেতাকর্মী ছাড়াও সাধারণ মানুষের মধ্যে আমাকে নিয়ে ব্যাপক আগ্রহ তৈরি হয়েছে। বিশেষ করে নারী ভোটার ও নতুন ভোটারদের মধ্যে ব্যাপক সারা পড়েছে আমাকে নিয়ে। এলাকার প্রবীণরাও আবেগ আপ্লুত হয়ে আমাকে জড়িয়ে ধরছে। আমার বিশ্বাস আমি এই নির্বাচনে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী হিসেবে বিপুল ভোটে বিজয়ী হব।’