বদি ও টেকনাফের ওসির বিরুদ্ধে বিএনপি প্রার্থীর অভিযোগ
কক্সবাজার-৪ (উখিয়া-টেকনাফ) আসনে নির্বাচনী প্রচারণায় বাধা দেওয়ার অভিযোগ তুলেছেন বিএনপি মনোনীত প্রার্থী শাহজাহান চৌধুরী। তিনি অভিযোগ করেছেন, প্রচারণায় বাধাসহ বিএনপির কর্মীদের বাড়িতে হামলা, মামলা ও বাড়িছাড়া করা হচ্ছে। ভয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন কর্মীরা।
আজ শুক্রবার বেলা সাড়ে ১১টায় জেলা বিএনপি কার্যালয়ে এক জরুরি সংবাদ সম্মেলনে শাহজাহান এসব অভিযোগ করেন।
সম্মেলনে শাহজাহান বলেন, ‘উখিয়া ও টেকনাফে সরকার দলীয় সংসদ সদস্য আবদুর রহমান বদি ও টেকনাফ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) প্রদীপ কুমারের নেতৃত্বে বিএনপি নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা ও পরিকল্পিত হামলা অব্যাহত রয়েছে। কিন্তু প্রশাসনের সব জায়গায় নালিশ করেও কোনো প্রতিকার পাওয়া যাচ্ছে না। রিটার্নিং কর্মকর্তা, সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা এবং প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কেউ বিএনপি নেতাকর্মীদের ওপর নির্যাতনের প্রতিকার করছেন না। প্রতিকার না পেয়ে হামলা ও মামলার ভয়ে বিএনপি নেতাকর্মীরা এলাকা ছেড়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছে।’
শাহজাহান জানান, গত ১৮ ডিসেম্বর তাঁর একটি নির্বাচনী পথসভা ছিল উখিয়া থানার ২০০ গজের মধ্যে। কিন্তু পথসভা শুরুর আগেই নৌকার প্রার্থী শাহীন আকতার (বদির স্ত্রী) ও সাংসদ বদির আত্মীয়স্বজন এবং ছাত্রলীগ যুবলীগের নেতাকর্মীরা প্রকাশ্যে তাঁর মঞ্চ, চেয়ার, টেবিল ভাঙচুর করে। কিন্তু এই ঘটনার রেশ ধরে ১৭ ডিসেম্বরের ঘটনা দেখিয়ে বিএনপি নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে একটি মিথ্যা মামলা করেছে পুলিশ।
‘এক মাসের জন্য বাড়ি ছেড়ে চলে যাওয়ার নির্দেশ’
সংবাদ সম্মেলনে শাহজাহান অভিযোগ করে বলেন, ‘সাবরাংয়ে বিএনপি নেতা সোলতান আহমদ মেম্বারের বাড়িতে গিয়ে তাঁকে এক মাসের জন্য বাড়ি ছেড়ে চলে যেতে নির্দেশ দিয়েছেন টেকনাফ থানার ওসি। এই বিষয়ে সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে অভিযোগ করায় সোলতান মেম্বার ও টেকনাফ উপজেলা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মোহাম্মদ হাশেম মেম্বারসহ আট নেতাকে আটক করে চোখ বেঁধে থানায় নিয়ে যায় পুলিশ। দুদিন থানায় আটকে মামলা ছাড়াই তাদেরকে আদালতে পাঠানো হয়।’
‘আটকদের খোঁজ পাওয়া যায়নি’
শাহজাহান বলেন, ‘ওসি প্রদীপ কুমার দাশ ও সংসদ সদস্য বদি নিজে গিয়ে শামলাপুরের ছাত্রদল নেতা রাসেল এবং জসিমকে ধরে নিয়ে গেছে। এখনও কোনো খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না তাদের। যুবদল নেতা ফয়সালকে আটক করা হলেও তাঁকে এখনো আদালতে পাঠানো হয়নি। উখিয়া উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান সোলতান মাহমুদ চৌধুরীকে মিথ্যা মামলায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে।’
‘টেকনাফে ৬ মামলায় ৬০০ নেতাকর্মী’
শাহজাহান বলেন, ‘টেকনাফে বিএনপি নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে ছয়টি মিথ্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে। এসব মামলায় ছয় শতাধিক নেতাকর্মীকে আসামি করা হয়েছে। গ্রেপ্তার করা হয়েছে ৩২ নেতাকর্মীকে। উখিয়া থানায় চারটি মিথ্যা মামলায় পাঁচ শতাধিক নেতাকর্মীকে আসামি করা হয়েছে। গ্রেপ্তার করা হয়েছে ২৫ নেতাকর্মীকে। টেকনাফ উপজেলা বিএনপির সভাপতি মো. জাফর আলমকে মিথ্যা মামলায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সাধারণ সম্পাদক মো. আব্দুল্লাহ বদির মিথ্যা মামলায় পালিয়ে বেড়াচ্ছে।’
দুবাইয়ে বসে ফেসবুক পোস্ট, হ্নীলায় ভাঙচুর
শাহজাহান চৌধুরী দাবি করে বলেন, ‘টেকনাফে বিএনপি নেতাকর্মীদের বাড়ি লুটপাট এবং পুলিশের পোশাকে ডাকাতি হচ্ছে। হ্নীলায় এক দুবাই প্রবাসী যুবক সাংসদ বদির হুমকির বিরুদ্ধে ফেসবুকে মতামত প্রকাশ করে। ওই রাতেই পুলিশ গিয়ে তাঁর বাড়িতে ভাঙচুর ও লুটপাট করেছে।’
জাতীয় সংসদের সাবেক এই হুইপ অভিযোগ করে বলেন, ‘প্রথম দিকে এমপি আবদুর বদি হুমকি দিলেও বর্তমানে তিনি ও পুলিশ নেতাদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে হুমকি দিচ্ছেন।’
এছাড়াও কক্সবাজার-৪ আসনে নির্বাচন কর্মকর্তাদের নিয়োগ বিষয়েও প্রশ্ন তোলেন শাহজাহান চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘উখিয়া ও টেকনাফ উপজেলার যে সমস্ত প্রিজাইডিং ও সহকারী প্রিজাইডিং এবং পোলিং অফিসারের তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে, সেখানে যারা আওয়ামী লীগ সমর্থিত ও আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী, তাদেরই দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। কোনো নিরপেক্ষ কর্মকর্তা বা কর্মচারীকে তালিকায় রাখা হয়নি। শুরুর দিকে অভিযোগ শুনলেও এখন তাৎক্ষণিক অভিযোগ জানাতে রিটার্নিং কর্মকর্তাকে ফোন করলে তিনি ফোনও ধরেন না। অভিযোগের কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছেন না।’
রিটার্নিং কর্মকর্তা, প্রধান নির্বাচন কমিশনার, পুলিশ সুপারসহ প্রশাসনের সবাই এখন নীরব ভূমিকা পালন করছে বলে দাবি করেন শাহজাহান চৌধুরী।
শাহজাহান জানান, গত বৃহস্পতিবারও জেলা প্রশাসক ও রিটার্নিং কর্মকর্তার সঙ্গে বৈঠক করেন তিনি। কিন্তু কোনো প্রতিকার পাওয়া যায়নি।
এসব বিষয়ে জানতে আজ ফোন করা হলেও ফোন রিসিভ করেননি ওসি প্রদীপ কুমার দাস। তবে দুদিন আগে তাঁর কাছে একই বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে, তিনি জানান, আইন অনুযায়ীই কাজ করছে পুলিশ। নির্বাচন কমিশনের নির্দেশ মোতাবেকই কাজ হচ্ছে বলে তিনি জানান।