বিচার বিভাগ প্রার্থিতা বাতিল করছে, এটাকে কী বলব, প্রশ্ন ফখরুলের
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘এই নির্বাচন এরই মধ্যে প্রহসনে পরিণত হয়েছে। এরই মধ্যে সবার কাছে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে, আদৌ এ নির্বাচন ঠিকভাবে হবে কি না। লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড এখন একটা প্রহসন।’
আজ শুক্রবার সকালে রাজধানীর গুলশানে বিএনপির চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে দলের মহাসচিব এসব কথা বলেন।
এ সময় মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘প্রশাসন ও নির্বাচন কমিশন গণতন্ত্রকে ধ্বংস করার জন্য একজোট হয়েছে। এ কথাটি আমরা দায়িত্ব নিয়েই বলছি। এখন এ নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হওয়ার কোনো লক্ষণ দেখছি না।
‘বিচার বিভাগ আমাদের যে হারে প্রার্থিতা বাতিল করছে, সেগুলোকে আমরা কী বলব? একই আদালত একজনের পক্ষে এক রায় দিচ্ছে, আবার অন্যজনের পক্ষে দিচ্ছে ভিন্ন রায়। হাইকোর্ট থেকে আমি সুবিচার পাচ্ছি, সেটি কী করে বলব?’
মির্জা ফখরুল এ ব্যাপারে আরো বলেন, ‘যেখানে আমার দলের প্রার্থিতা আমি কাকে দেব, সেটি হাইকোর্ট দিচ্ছে। আজ দুর্ভাগ্য এ জাতির, যেসব সরকারি প্রতিষ্ঠানের ওপর জাতির আস্থা-বিশ্বাস রয়েছে, সে প্রতিষ্ঠানগুলো একে একে সরকারি দল নিজেদের প্রতিষ্ঠানে পরিণত করেছে।’
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘আমরা আশা করি, শেষ সময়ে হয়তো এ নির্বাচন কমিশন সম্বিত ফিরে পাবে, প্রশাসন তার সম্বিত ফিরে পাবে। আগামী ২৪ তারিখ থেকে মোতায়েন হওয়া সেনাবাহিনী, পুলিশ, প্রশাসন, নির্বাচন কমিশন সবাই তাদের দেশপ্রেমের পরিচয় দেবেন।’
৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচন মানুষের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘এ নির্বাচন রাষ্ট্রের কাঠামো, মানুষের অধিকার থাকবে কি থাকবে না, তার সিদ্ধান্ত গৃহীত হবে। এই নির্বাচন নির্ধারণ হবে দেশের মানুষ গণতান্ত্রিক দেশে নাকি স্বৈরাচারী দেশে বাস করবে। সিদ্ধান্ত গৃহীত হবে, একাত্তর সালের স্বাধীনতা অর্জন করেছি তা রক্ষা করতে পারব কি না। আমাদের প্রজন্মকে সুখী-সমৃদ্ধ আবাস দিতে পারব কি না। আমরা স্বাধীনভাবে প্রতিনিধি নির্বাচন করতে পারব কি না।’
প্রতিপক্ষ হয়ে দাঁড়িয়েছে পুলিশ
বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘আমাদের প্রতিপক্ষ হয়ে দাঁড়িয়েছে পুলিশ। তিনি বলেন, কথাটি আমি স্পষ্ট করেই বলছি। আমাদের মিটিং বন্ধ করা, নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার করা সব করছে প্রতিপক্ষের মতো। আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা নিজেদের অফিস ভেঙে দিচ্ছে। আর মামলা দিচ্ছে আমাদের নেতাকর্মীদের নামে।’
‘২০১৪ সালে সরাসরি বিনা ভোটে ক্ষমতা দখল করেছে। এবার আইন-আদালত, রাষ্ট্রের সব প্রতিষ্ঠানকে ব্যবহার করে ক্ষমতা দখল করার পাঁয়তারা করছে। আমাদের একটা ভরসা ছিল রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ আদালত, যেখানে আমরা ন্যায়বিচারের আশা করেছিলাম। এখন সেখানেও পক্ষপাতমূলক আচরণ করছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যেখানে ইচ্ছা সভা-সমাবেশ করছে, কথা বলছে, কোনো সমস্যা হচ্ছে না। কিন্তু যত সমস্যা সব আমাদের বেলায়।’
বিএনপির মহাসচিব আরো বলেন, ‘আমরা বিশ্বস্ত সূত্রে জানতে পেরেছি, ভোটের আগের দিন রাতে ব্যালট বাক্স পুরো করবে। আবার একতরফা ক্ষমতায় যাওয়ার পাঁয়তারা করছে। কিন্তু এসবে আর কাজ হবে না, জনগণ জেগে উঠেছে।’
মির্জা ফখরুল আরো বলেন, ‘সন্ত্রাস আমরা করছি না। নির্বাচনের এই কয়দিনে তারা যে সন্ত্রাস করেছে, তা নজির হয়ে থাকবে। একদিকে আওয়ামী লীগের সন্ত্রাস, অন্যদিকে রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস। এ দুই সন্ত্রাস মিলে গণতন্ত্রকে ধ্বংস করছে।’
নির্বাচন কমিশন নিয়ে বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘দেশে কি নির্বাচন কমিশন আছে? তাদের কাছে আমরা হাজার হাজার অভিযোগ দিয়েছি, কিন্তু তার কোনোটার কোনো সুরাহা হয়নি।’