রায়ের সার্টিফায়েড কপি কবে দেবে, জানে না ইসি!
হাসি কান্নার ভেতর দিয়ে গত তিনদিন রিটার্নিং কর্মকর্তাদের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে করা আপিল আবেদন নিষ্পত্তি করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এতে প্রার্থিতা ফিরে পেয়েছেন ২৪৩ জন। ৩০০ জনের আপিল আবেদন নামঞ্জুর হয়েছে।
প্রার্থিতা ফিরে না পাওয়ায় কেউ কেউ উচ্চ আদালতে রিট করবেন। তবে তাঁরা আপিল শুনানির রায়ের সার্টিফায়েড কপি না পেয়ে আদালতে যেতে পারছেন না। এতে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন মনোনয়নপত্র দাখিলকারী অনেকে। রিট করতে পারবেন কি না- এ নিয়ে শঙ্কাও প্রকাশ করেছেন।
গত ২৮ নভেম্বর মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ দিন পর্যন্ত তিন হাজার ৬৫টি মনোনয়নপত্র জমা পড়েছিল। ২ ডিসেম্বর মনোনয়নপত্র বাছাইয়ে দুই হাজার ২৭৯টি মনোনয়নপত্র বৈধ ও ৭৮৬টি বাতিল ঘোষণা করেন সংশ্লিষ্ট রিটার্নিং কর্মকর্তারা। এরমধ্যে রিটার্নিং কর্মকর্তাদের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে গিয়ে ৫৪৩টি আপিল আবেদন জমা পড়ে ইসিতে। তিনদিন আপিল শুনানিতে মোট ৩০০ জনের আপিল নামঞ্জুর করে ইসি।
ইসির সিদ্ধান্ত ছিল শুনানি শেষ হলে একে একে সবাইকে রায়ের সার্টিফায়েড কপি দিয়ে দেবে। কিন্তু সেটা পারেনি। গত শুক্রবার সন্ধ্যার আগ পর্যন্ত কাউকেই রায়ের কপি দিতে পারেনি নির্বাচন কমিশন। পরে প্রার্থী ও তাদের সমর্থকরা বিক্ষোভ শুরু করেন ইসির অভ্যর্থনা ডেস্কের সামনে। পরে পুলিশ এসে তা ঠাণ্ডা করে। এভাবে দফায় দফায় ভিড় করতে থাকেন বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আসা মনোনয়প্রত্যাশী ও তাঁদের সমর্থকরা।
শুক্রবার কেউই রায়ের সার্টিফায়েড কপি পাননি। পরের দিনও তাদের খালি হাতে ফিরে যেতে হয়। সর্বশেষ রোববার কেউ কেউ রায়ের কপি হাতে পেয়ে হাইকোর্টে রিট আবেদন করেছেন। যারা পাননি তারা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।
ইসি সূত্রে জানা যায়, আজ পর্যন্ত ৩০০টির মধ্যে ১২০টির মতো নামঞ্জুর হওয়া আপিল আবেদনের রায়ের কপি প্রস্তুত করেছে ইসি। এদের ভেতরে রায়ের কপি দেওয়া হয়েছে ১১০টি। বাকিদের রায়ের কপি এখনো প্রস্তুত করতে পারেনি তারা। এই রায়ের কপি সবাইকে কবে নাগাদ দিতে পারবে সেটাও জানে না ইসি। তবে দু-একদিনের ভেতরেই সবাই পেয়ে যাবে বলে আশা প্রকাশ করেন তারা।
রায়ের কপি না পেয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে এক প্রার্থীর ফুপাত ভাই শাহানুর এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘আমি শনিবার থেকে এই রায়ের কপির জন্য অপেক্ষা করছি। কিন্তু এখনো পাইনি। ইসি আমাকে অবৈধ হিসেবে ঘোষণা করল। আমি ইসির এই রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে আপিল আবেদন করতে চাই। রায়ের কপি না পেয়ে তো আমি উচ্চ আদালতে যেতে পারছি না। আমি আশাবাদী, উচ্চ আদালত আমার পক্ষে রায় ঘোষণা দেবে।’
নারায়ণগঞ্জ-৩ আসনে নির্বাচন করতে চান মো. মোশারফ হোসেন। তাঁর চাচাতো ভাই রফিকুল হায়দার শনিবার ইসিতে এসেছিলেন রায়ের কপি নিতে। তিনি এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘শুনানির দ্বিতীয় দিন শুক্রবার আমার আপিল আবেদন নামঞ্জুর করে ইসি। শনিবার সকাল থেকে রাত ২টা পর্যন্ত আমি রায়ের কপির জন্য অপেক্ষা করেছিলাম। কিন্তু কপি পাইনি। আজ সকালে আবার এসেছি। কিন্তু আজ বিকেল পর্যন্ত নির্বাচন কমিশন রায়ের কপি দেয়নি।’
রাজশাহী-২ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থীর ছোট ভাই সাইফুল ইসলাম রায়ের কপি নিতে এসেছিলেন ইসিতে। গতকাল ফিরে গিয়ে আজ আবার এসেছিলেন। তিনি বলেন, আগামী ১০ ডিসেম্বর থেকে প্রার্থীরা প্রচার শুরু করবেন। অথচ আজ সন্ধ্যা পর্যন্ত কোনো খোঁজ নেই রায়ের কপির। আমরা কপি নেব কখন আর আপিল করব কখন? হাইকোর্টে এর শুনানি হবে কখন আর আমি রায় পাব কখন?’
শুধু রফিকুল হায়দার কিংবা সাইফুল ইসলাম নন, রায়ের সার্টিফায়েড কপি না পেয়ে অনেকেই অপেক্ষা করছেন ইসিতে। রায়ের কপি পাওয়ার পরই তারা উচ্চ আদালতের দারস্থ হবেন বলে কয়েকজন এনটিভি অনলাইনকে জানান। তারা জানান, রায়ের কপি না পেয়ে তারা শঙ্কিত। উচ্চ আদালত থেকে রায় আসতে আসতে তো ভোটই হয়ে যাবে!
এসব ব্যাপারে জানতে চাইলে ইসির অতিরিক্ত সচিব মো. মোখলেসুর রহমান কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। এ ছাড়া ইসির অতিরিক্ত সচিব (আইন) মো. শরীফ হোসেন হায়দারও এই ব্যাপারে কথা বলতে রাজি হননি।
এই ব্যাপারে জানতে চাইলে ইসির নির্বাচন পরিচালনা শাখার উপসচিব মো. মতিয়ার রহমান বলেন, ‘কবে সব রায়ের কপি দিতে পারব জানি না। তবে কাজ চলছে, রেডি হলেই একে একে দিয়ে দিচ্ছি আমরা। সারা রাত কাজ করছি, তবু পারছি না। কারণ এবার আপিলকারীর সংখ্যা বেশি থাকায় এই ঝামেলা হচ্ছে।’
ইসির আইন শাখার একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘এই পর্যন্ত মোট ১২০টির মতো রায়ের কপি রেডি করেছি আমরা। বাকিগুলো রেডি হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে দিয়েই দেব। এত দ্রুত আসলেই দেওয়া মুশকিল।’