আলটিমেটাম দিয়ে তালা খুললেন মিলনের সমর্থকরা
১২ ঘণ্টার আলটিমেটাম দিয়ে রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের তালা খুলে দিয়েছেন সাবেক শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী আ ন ম এহছানুল হক মিলনের অনুসারীরা। বেঁধে দেওয়া এই ১২ ঘণ্টার মধ্যে চাঁদপুর-১ আসনের মনোনয়ন পরিবর্তন করে মিলনকে প্রার্থী করার দাবিতে আজ শনিবার দুপুর সোয়া ২টায় গেটের তালা খুলে দেওয়া হয়।
এর আগে দুপুর পৌনে ১টার দিকে মিলনের কর্মী-সমর্থকরা নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে তালা ঝুলিয়ে দিয়েছিল মিলনের সমর্থকরা। বিএনপির এই আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদককে চাঁদপুর-১ (কচুয়া) আসনে দলীয় মনোনয়ন না দেওয়ায় ক্ষুব্ধ কর্মী-সমর্থকরা এই ঘটনা ঘটায়।
এ সময় তারা বিভিন্ন স্লোগান দিয়ে মিলনকে বিএনপির মনোনয়ন দেওয়ার দাবি জানায়। সেখানে উপস্থিত ছিল চাঁদপুরের কচুয়া থানা বিএনপি, যুবদল ও ছাত্রদলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীরা।
সাবেক শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী আ ন ম এহছানুল হক মিলনকে চাঁদপুর-১ আসনে বিএনপির মনোনয়ন দেওয়ার দাবিতে তাঁর সমর্থকরা আজ শনিবার বিকেলে জাতীয় প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে। ছবি : এনটিভি
মিলনের কর্মী-সমর্থকরা অভিযোগ করেছে, এহছানুল হক মিলনের জায়গায় চাঁদপুর-১ (কচুয়া) আসনে ধানের শীষের মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য মো. মোশাররফ হোসেনকে। তিনি এলাকায় পরিচিত নন এবং দলের তৃণমূলের সঙ্গে তাঁর কোনো যোগাযোগ নেই। তাঁরা মোশাররফ হোসেনের পরিবর্তে এহছানুল হক মিলনকে মনোনয়ন দেওয়ার দাবি জানান।
বিএনপির কার্যালয়ের সামনে উপস্থিত ছিলেন কচুয়া থানা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক খায়রুল ইসলাম, যুবদলের সভাপতি ও আশরাফপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মাসুদ এলাহী এবং ছাত্রদলের সভাপতি ইসমাইল হোসেনসহ তাদের নেতাকর্মীরা। তারা তাদের দাবির সপক্ষে ‘প্রতিবাদ মিছিল’ লেখা একটি ব্যানার বিএনপির কার্যালয়ের ফটকে ঝুলিয়ে দেন।
এদিকে তালা খুলে দেওয়ার পর মিলনের সমর্থকরা জাতীয় প্রেসক্লাবের দ্বিতীয় তলার কনফারেন্স লাউঞ্জে সংবাদ সম্মেলন করেন। এতে লিখিত বক্তব্যে কচুয়া উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক খায়রুল আবেদিন স্বপন বলেন, নকলমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার কারিগর সাবেক শিক্ষাপ্রতিমন্ত্রী, দুইবারের সংসদ সদস্য ও বিএনপির নির্বাহী কমিটির আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ড. আ ন ম এহছানুল হক মিলন ৩৬টি মিথ্যা মামলার আসামি হয়ে আজ কারাগারে। তিনি এ দেশের শিক্ষাঙ্গনকে শুধু নকলমুক্তই নয় বরং তিনি জাটকা নিধন অভিযানেও বিশেষ ভূমিকা পালন করেছিলেন। ২০০১ সাল থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত তৎকালীন চারদলীয় জোট সরকারের আমলে সাফল্য উল্লেখ করার মতো একটি কাজও যদি হয়ে থাকে তাহল সেটা ড. মিলনের নকলবিরোধী অভিযান। পরবর্তীতে ১/১১ সরকার তাঁর বিরুদ্ধে কোনো দুর্নীতির মামলা করতে না পারলেও আওয়ামী লীগ সরকার তাঁর বিরুদ্ধে ৩৬টি মিথ্যা মামলা করেছে। এরপর তিনি ২০১০ ও ২০১১ সালে মোট ৪৪৯ দিন বিনা বিচারে কারাভোগ করেন।
খায়রুল আবেদিন স্বপন বলেন, এহছানুল হক মিলন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির পক্ষে মনোনয়ন প্রত্যাশী ছিলেন। তাঁর মনোনয়নপত্র চাঁদপুরের রিটার্নিং কর্মকর্তা বৈধ বলেও ঘোষণা করেন। কিন্তু অপ্রিয় হলেও সত্য আজ আমরা অত্যন্ত দুঃখ ভারাক্রান্ত হৃদয়ে জানাচ্ছি যে, মিলন ভাইকে অযৌক্তিক অজ্ঞাত ও অনভিপ্রেত কারণে বিএনপির পক্ষ থেকে তাঁর নির্বাচনী এলাকা চাঁদপুর-১ আসন থেকে চূড়ান্ত মনোনয়নপত্র দেওয়া হয়নি। মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে এক আদম ব্যাপারীকে (বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য ও মালয়েশিয়া বিএনপির সভাপতি মোশারফ হোসেন)। যা আমাদের জন্য অত্যন্ত লজ্জা এবং অপমানের। দলের শীর্ষ নেতৃবৃন্দ মিলন ভাইয়ের চূড়ান্ত মনোনয়নের ব্যাপারে আমাদের একাধিকবার নিশ্চিত করলেও গতকাল শুক্রবার দুপুরের পর থেকেই হঠাৎ দৃশ্যপট পাল্টে যায়, কিন্তু কেন এবং কার ইঙ্গিতে এই উদ্ভট পরিবর্তন। এহছানুল হক মিলনকে মনোনয়ন না দিলে আমরা একযোগে গণপদত্যাগ করব।
সংবাদ সম্মেলনে আরো উপস্থিত ছিলেন, বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক মহিলা বিষয়ক সম্পাদক নাজমুন্নাহার বেবি, কচুয়া উপজেলা যুবদলের সভাপতি মাসুদ ইলাহি সুবাস, সাধারণ সম্পাদক ফখরুল ইসলাম মিন্টুসহ দেড় শতাধিক নেতাকর্মী।