মনোনয়ন বাতিলের পর কাগজও দিচ্ছেন না রিটার্নিং কর্মকর্তা : রিজভী
মনোনয়ন বাতিল করার পরদিন সোমবারও প্রার্থীদের আপিল করার জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র দিতে পারেননি রাজশাহীর রিটার্নিং কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসক এস এম আবদুল কাদের। আজ সোমবার সন্ধ্যা পর্যন্ত অপেক্ষা করেও কাগজ পাননি বাতিল হওয়া প্রার্থীদের লোকজন।
এর ফলে রাজশাহী-১ আসনে বিএনপি মনোনীত প্রার্থী ব্যারিস্টার আমিনুল হক ও রাজশাহী-৫ আসনে দলের প্রার্থী সাবেক সাংসদ নাদিম মোস্তফাসহ অন্যরা নির্ধারিত ৫ ডিসেম্বর বুধবারের মধ্যে ঢাকায় এসে নির্বাচনে কমিশনে আপিল করতে পারবেন কি না এ নিয়ে সংশয় সৃষ্টি হয়েছে।
এ ব্যাপারে রিটার্নিং কর্মকর্তা এস এম আবদুল কাদের বলেন, ‘আমরা এটা নিয়ে কাজ করছি। আশা করছি খুব দ্রুত দিতে পারব।’
রাজশাহীর ঘটনা নিয়ে সোমবার রাতে রাজধানীর নয়াপল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করেন বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। তিনি বলেন, গতকাল (রোববার) মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাইয়ের দিন রাজশাহীর রিটার্নিং অফিসারের দায়িত্বপ্রাপ্ত ডিসি বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান, সাবেক মন্ত্রী ও খ্যাতিমান আইনজীবী এবং রাজশাহী-১ আসনে বিএনপি মনোনীত প্রার্থী ব্যারিস্টার আমিনুল হক সাহেবের মনোনয়নপত্র বাতিল করেছেন। সম্পূর্ণ বেআইনি ও রাজনৈতিক হীন উদ্দেশ্যেই তাঁর মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়েছে। মনোনয়নপত্র বাতিলের পর আপিলের জন্য বাতিলের সিদ্ধান্তের প্রয়োজনীয় কাগজপত্র রিটার্নিং অফিসার ব্যারিস্টার আমিনুল হক সাহেবকে হস্তান্তর করছেন না। তবে আগামীকালও কাগজপত্র দেওয়া হবে কি না এ বিষয়ে সন্দেহ করার যথেষ্ট কারণ আছে। আগামীকালও যদি উক্ত কাগজপত্র না দেওয়া হয় তাহলে ঢাকায় এসে আপিল করা তাঁর জন্য দুঃসাধ্য হয়ে পড়বে। ব্যারিস্টার আমিনুল হক সাহেবের মনোনয়নপত্র বাতিলের সিদ্ধান্তের কাগজপত্র আটকে রাখা গভীর চক্রান্ত ছাড়া আর কিছুই নয়। কোনোভাবেই ব্যারিস্টার আমিনুল হককে আটকাতে না পেরে বানোয়াট কাহিনী রচনা করে তাঁর মনোনয়নপত্র বাতিল করে এখন বাতিলের সিদ্ধান্তের প্রয়োজনীয় কাগজপত্রও না দেওয়ার উদ্দেশ্যই হলো-তিনি যেন আপিল দায়েরের মাধ্যমে তাঁর বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্ট রিটার্নিং অফিসার আনীত কাল্পনিক অভিযোগ খণ্ডন করতে না পারেন। রাজশাহী বিএনপির জনপ্রিয় রাজনীতিবিদদের আসন্ন নির্বাচন থেকে সরিয়ে দেওয়ার জন্য আমি রাজশাহীর রিটার্নিং অফিসারের সরকারি নির্দেশ পালনের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি।
রিজভী আরো বলেন, একইভাবে রাজশাহী-৫ আসনে সাবেক সংসদ সদস্য ও বিএনপি জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য নাদিম মোস্তফাও আসন্ন সংসদ নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছিলেন, কিন্তু তারও মনোনয়নপত্র রিটার্নিং অফিসার বাতিল করেছেন। নাদিম মোস্তফা মনোনয়নপত্র বাতিলের সিদ্ধান্তের জাবেদা নকল তুলতে তাৎক্ষণিক আবেদন করেছিলেন। কিন্তু রিটার্নিং অফিসার টালবাহানা করে আজও জাবেদা নকল সরবরাহ করেননি। আগামীকাল কখন সেটি পাওয়া যাবে এবং কখন সে রাজশাহী থেকে ঢাকা রওনা হবে সেটিরও কোনো নিশ্চয়তা নেই। রিটার্নিং অফিসার খুব নিখুঁতভাবে পাটিগণিতের অঙ্ক কষেই বিএনপি নেতাদের মনোননয়নপত্র বাতিল করেছেন এবং বাতিলের সিদ্ধান্তের জাবেদা নকলও আটকে রাখছেন। উদ্দেশ্য একটাই, বিএনপির প্রার্থীরা যেন নির্ধারিত সময়ের মধ্যে আপিল করতে না পারেন।
বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব বলেন, সামগ্রিক পরিস্থিতি বিবেচনায় রিটার্নিং অফিসাররা সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের ক্ষেত্রে আন্তরিক নন। তারা সরকারের মুখ চেয়েই কাজ করছে। তারা ইনক্লুসিভ নির্বাচন অপেক্ষা আওয়ামী রাজনৈতিক স্বার্থের দিকেই মনোযোগী বেশি। তারা মানুষের ক্ষোভের আঁচ টের পাচ্ছেন না। এই রিটার্নিং অফিসারদের কারণেই এদেশের ক্ষণজন্মা দেশপ্রেমিক স্বাধীনতার ঘোষক সাবেক রাষ্ট্রপতি শহীদ জিয়াউর রহমান বীর উত্তমের পরিবারের কাউকে নির্বাচন করতে দেওয়া হচ্ছে না। এই রিটার্নিং অফিসাররাই শহীদ জিয়ার সহধর্মীনি ‘গণতন্ত্রের মা’ দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মনোনয়নপত্র বাতিল করেছে। আমরা দেশবাসী এই অন্যায়, এই অবিচার কখনোই ভুলবো না। জনগণের স্মৃতির পর্দা ঝাপসা নয়। অপমানিত জনগণ একদিন সকল অন্যায় কড়ায়-গন্ডায় আদায় করে নিবে।