ভোটের লড়াইয়ে নেই যারা
সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াসহ বিএনপি ও জোটের অনেক হেভিওয়েট প্রার্থীর মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাই শেষে বাতিল করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। গতকাল রোববার যাচাই-বাছাই শেষে এসব মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়।
নির্বাচন কমিশন সচিবালয় সূত্র অনুযায়ী, সারা দেশের ৬৬ জন রিটার্নিং কর্মকর্তা যাচাই-বাছাই শেষে দুই হাজার ২৭৯টি মনোনয়নপত্র বৈধ এবং ৭৮৬টি মনোনয়নপত্র অবৈধ ঘোষণা করেন।
যাদের মনোনয়নপত্র বাতিল হয়েছে তারা রিটার্নিং কর্মকর্তার সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আজ সোমবার থেকে ৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত নির্বাচন কমিশনে আপিল করতে পারবেন। নির্বাচন কমিশন শুনানি করে আপিল নিষ্পত্তি করবে ৬ থেকে ৮ ডিসেম্বর।
সারা দেশে যে সংখ্যক মনোনয়নপত্র বাতিল হয়েছে তাতে দেখা গেছে বেশিরভাগই বিএনপির মনোনয়নপত্র। ২০ দলীয় জোটের সমন্বয়ক ও বাংলাদেশ লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) চেয়ারম্যান কর্নেল (অব.) অলি আহমদ বলেছেন, সরকারের বিজয়ের পথ সুগম করতেই ২০ দলীয় জোটের ৮০ প্রার্থীকে আজ মনোনয়ন বঞ্চিত করা হয়েছে।
যদিও এ ব্যাপারে নির্বাচন কমিশন সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ বলেছেন, ‘বাতিল হওয়া মনোনয়নপত্র স্থানীয় রিটার্নিং কর্মকর্তারা দেখেছেন, কমিশনের বিরুদ্ধে অভিযোগ কেন? আপিলের সুযোগ আছে, এটাই চূড়ান্ত নয়।’
মনোনয়নপত্র বাতিল হওয়া প্রার্থীদের মধ্যে রয়েছেন- বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মোরশেদ খান, মীর নাসির ও গিয়াসউদ্দিন কাদের চৌধুরী, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমানুল্লাহ আমান, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী, সাবেক মন্ত্রী ব্যারিস্টার আমিনুল হক, সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এ এম এস কিবরিয়ার ছেলে গণফোরাম নেতা রেজা কিবরিয়া এবং সদ্য বিএনপিতে যোগ দেওয়া গোলাম মাওলা রনি।
দুর্নীতির মামলায় সাজা হওয়ায় ঢাকা-২ আসনের বিএনপি প্রার্থী আমানের মনোনয়নপত্র বাতিল করেন রিটার্নিং কর্মকর্তা। ঢাকা-১ আসনের খন্দকার আবু আশফাক এবং ঢাকা-২০ আসনে বিএনপি প্রার্থী সুলতান আহমেদের মনোনয়নপত্র বাতিল করেছে ইসি।
ঋণখেলাপির কারণে টাঙ্গাইলে-৪ ও ৮ আসনে কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকীর মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন রিটার্নিং কর্মকর্তা শহিদুল ইসলাম।
পাশাপাশি ঋণখেলাপির কারণে টাঙ্গাইল-১ আসনে বিএপির প্রার্থী ফকির মাহাবুব আনাম স্বপন ও টাঙ্গাইল-৬ আসনে সাবেক প্রতিমন্ত্রী বিএনপিনেতা নুর মোহাম্মদ খানের মনোনয়নপত্রও বাতিল করা হয়।
চট্টগ্রাম-৮ আসনে কেন্দ্রীয় বিএনপিনেতা সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোরশেদ খানের মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়েছে। বিদ্যুৎবিল বকেয়া থাকায় তার মনোনয়ন বাতিল করা হয়েছে বলে নির্বাচন কমিশন সূত্রে জানা গেছে।
ঋণখেলাপির কারণে চট্টগ্রাম-২ ও ৭ আসনে বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা গিয়াস উদ্দীন কাদের চৌধুরী এবং চট্টগ্রাম-৬ আসনে তার ছেলে সমির কাদের চৌধুরীর মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়েছে।
চট্টগ্রাম-৪ আসনে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব আসলাম চৌধুরী, চট্টগ্রাম-৫ আসনে মীর নাসির ও তাঁর ছেলে মীর হেলাল এবং চট্টগ্রাম-৩ আসনে মোস্তফা কামাল পাশার মনোননয়পত্র ঋণখেলাপির কারণে বাতিল করা হয়েছে।
পটুয়াখালী-৩ আসনে আওয়ামী লীগের আলোচিত সাবেক সংসদ সদস্য সদ্য বিএনপিতে যোগ দেওয়া গোলাম মাওলা রনি ও বিএনপির শাহজাহান খানের মনোনয়পত্র বাতিল করা হয়। গত ২৬ নভেম্বর বিএনপিতে যোগ দিয়ে ওই আসনে মনোনয়নপত্র পান রনি।
ঋণখেলাপির কারণে হবিগঞ্জ-১ আসনে গণফোরাম নেতা রেজা কিবরিয়ার মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়েছে।
দুই মামলায় সাজা পাওয়ায় নাটোর-২ আসনে বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলুর মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়েছে। তবে একই আসনে তার স্ত্রী সাবিনা ইয়াসমিনের প্রার্থিতা বৈধ ঘোষণা করা হয়েছে। নাটোর-৪ আসনে জামায়াতনেতা দেলোয়ার হোসেনের মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়েছে।
রাজশাহী-১ আসনে বিএনপির সাবেক মন্ত্রী ব্যারিস্টার আমিনুল হকের মনোনয়নপত্র বাতিল করেছেন রিটার্নিং অফিসার।
ঋণখেলাপির কারণে কিশোরগঞ্জ-২ আসনে বিএনপির প্রার্থী মেজর (অব.) আখতারুজ্জামানের মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়েছে। এ ছাড়া কিশোরগঞ্জ-১ আসনে বিএনপির প্রার্থী এম শরিফুল ইসলাম ও খালেদা সাইফুল্লাহ, কিশোরগঞ্জ-৩ আসনে সাইফুল ইসলাম সুমন এবং কিশোরগঞ্জ-৪ আসনে সুরঞ্জন ঘোষের মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়েছে।
এদিকে বিএনপি অভিযোগ করেছে, মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের স্বাক্ষরের সত্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে মানিকগঞ্জে বিএনপির চারজন প্রার্থীর মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়েছে।
দুর্নীতির মামলায় সাজা পাওয়ায় ফেনী-১, বগুড়া-৬ ও বগুড়া-৭ আসনে খালেদা জিয়ার মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়েছে। ফলে তিনি একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে পারছেন না।