হ্যাকার ঠেকাতে পাসওয়ার্ড আইডি পরিবর্তন
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম থেকে শুরু করে একেবারে ব্যাংক অ্যাকাউন্ট পর্যন্ত হ্যাকিং এক আতঙ্কের নাম। তাই, ওয়াইফাই, ফেসবুক, গুগুল, ব্যাংক অ্যাকাউন্টসহ গুরুত্বপূর্ণ সাইট বা অ্যাকাউন্টে শুরুতে দেওয়া পাসওয়ার্ড ও ইউজার আইডির নাম-পাসওয়ার্ড পরিবর্তন করা গুরুত্বপূর্ণ। এ ছাড়া মানতে হবে প্রতিটি মাধ্যমের নিয়ম কানুনগুলোও।
গতকাল শুক্রবার বিকেলে ‘প্রেজেন্টেশন ক্লাবের’ আয়োজনে ‘সাইবার সিকিউরিটি ইন বাংলাদেশ’ শীর্ষক এক সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়। সেমিনারে এসব পরামর্শ দেন আন্তর্জাতিক সাইবার নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ ও যুক্তরাষ্ট্রে ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস মেশিন (আইবিএম) এর কর্মকর্তা ড. মাহমুদুর রহমান।
মাহমুদুর রহমান জানান, ওয়েবসাইটে ঢুকে হোক অথবা ডিভাইস থেকে এগুলো পরিবর্তন করে নিলে বাংলাদেশে সাইবার ক্রাইম অর্ধেক কমিয়ে আনা সম্ভব। তিনি বলেন, ‘গুরুত্বপূর্ণ কোনো ওয়েবসাইটের একটি অ্যাকাউন্টও যদি কোনো হ্যাকার নিয়ন্ত্রণে নিয়ে নিতে পারে, তবে পুরো ওয়েবসাইট ঝুঁকিতে থাকে। কারণ আপনার যোগাযোগ, ফটো, ভিডিও, অবস্থান, স্বাস্থ্য ও আর্থিক তথ্যের মতো বিষয়গুলো তারা নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে নেয়।’
অনলাইন থেকে আয়ের যেমন সুযোগ রয়েছে, তেমনি তথ্য বেহাত হওয়ার ঝুঁকিও রয়েছে বলে জানান ড. মাহমুদুর রহমান। এ ব্যাপারে তিনি বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া শিক্ষার্থীরা অনলাইন থেকে বিভিন্নভাবে আয় করতে পারে। তবে সেই ক্ষেত্রে নিয়ম মেনে কাজ করতে হবে। যেমন, আমি যদি ইউটিউব থেকে আয়ের কথা বলি, ইউটিউব কর্তৃপক্ষের চাওয়া অনুযায়ী ভিডিও কপি না দেওয়া। চুক্তিভিত্তিক লাইক বা ভিউ না বাড়ানো। কারণ ইউটিউব লাইক পাওয়ার পর বুঝতে পারে যে এটা সত্যিকার লাইক, নাকি ভুয়া। লাইক বা সাবস্ক্রাইবের ক্ষেত্রে তারা দেখে কোন এলাকা থেকে লাইক পড়েছে বা দেখেছে। তারপর তারা কয়েকটি ক্যাটাগরিতে সতর্ক করে দেয়। রেড সিগনালে পড়ে গেলে বুঝতে হবে আইডি বন্ধ হয়ে যাবে। এভাবে সব ওয়েবসাইটেই নজরদারি থাকে। তারপরও হ্যাকার বা সাইবার ক্রাইমের সঙ্গে জড়িতরা তাদের অপরাধ কর্ম চালিয়ে যায়। তাই সাধারণ ব্যবহারকারীকে সর্তকতার সঙ্গে ব্যবহার করতে হবে।’
এ সময় ব্যাংক অ্যাকাউন্টের নিরাপত্তার জন্যও পরামর্শ দেন এই সাইবার বিশেষজ্ঞ।
ড. মাহমুদুর রহমান বলেন, ‘আইওটির মাধ্যমে বাংলাদেশের ব্যাংক এবং অন্য ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের তথ্য সুরক্ষার জন্য নিরাপত্তা বেষ্টনী তৈরি করা যেতে পারে। যার ফলে এসব প্রতিষ্ঠানের গুরুত্বপূর্ণ ডেটা ও অ্যাপ্লিকেশন সুরক্ষিত থাকবে। আপনি আপনার বাড়ির সুরক্ষা নিশ্চিত করতে পারেন। যাতে করে আপনার বাড়িতে চোর ঢুকতে না পারে। কিন্তু এর নেতিবাচক দিক হচ্ছে, আপনার সকল তথ্য ওয়েবসাইটে থাকছে। আপনার দৈনন্দিন কাজে ফিটনেস ট্র্যাকার ডিভাইসে জিপিএস ট্র্যাকার থাকলে হ্যাকাররা আপনার অবস্থান সম্পর্কে জানতে পারে। এর মাধ্যমে হ্যাকাররা আইডি নিয়ন্ত্রণে নিতে পারলে অন্য ডিভাইসও নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসতে পারে। কারণ আইওটি নেটওয়ার্কে ডিভাইসগুলো চেইনের মতো কাজ করে।’
সাইবার বিশেষজ্ঞ বলেন, ‘২০১৬ সালের সেপ্টেম্বরে মিরাই বটনেট অ্যাটাক হয়েছিল। মিরাই বটনেট নামে ওই অ্যাটাকে হ্যাকারদের একটা দল বিশ্বের বেশ কিছু দেশে বিপুল ডিভাইস নিয়ন্ত্রণে নিয়ে নেয়। এ রকম হতে পারে ওয়াইফাই পাসওয়ার্ডের ক্ষেত্রেও। আপনি যখন ওয়াইফাই নিচ্ছেন, তখন সব তথ্য দেওয়া লাগছে। সেই তথ্য পরিবর্তন না করলে তা হ্যাকারদের হাতে চলে যাচ্ছে। হ্যাকারদের হাতে সম্পূর্ণ তথ্য থাকায় তারা পুরো ওয়েবসাইটকে জব্দ করতে পারে।’
এই সেমিনারে প্রেজেন্টেশন ক্লাবের সভাপতি রাইসুল হক চৌধুরী সভাপতিত্ব করেন। আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন প্রেজেন্টেশন ক্লাবের সহসভাপতি মোনাসিব রোমেলসহ অন্যরা। এ সময় বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানটির প্রচার সহযোগী ছিল লক্ষ্য নিউজ প্রেজেন্টেশন একাডেমি।