আটকে গেল সাবিরার ভোট, রোববার পূর্ণাঙ্গ শুনানি
দুই বছরের বেশি সাজাপ্রাপ্ত ব্যক্তির দণ্ড স্থগিত করে আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার জন্য হাইকোর্টের একক বেঞ্চ যে আদেশ দিয়েছিলেন দুই দিনের মাথায় সেটি স্থগিত করে দিয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের চেম্বার বিচারপতি।
হাইকোর্টের আদেশ স্থগিত চেয়ে রাষ্ট্রপক্ষের করা আপিলের শুনানি শেষে আজ শনিবার আপিল বিভাগের চেম্বার বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী এ আদেশ দেন। আবেদনটি শুনানির জন্য নিয়মিত বেঞ্চে পাঠিয়েছেন তিনি। আগামীকাল রোববার আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে এর শুনানি অনুষ্ঠিত হবে বলে বার্তা সংস্থা ইউএনবির এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
এর আগে গত বৃহস্পতিবার যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান ও যশোর-২ আসনের বিএনপি প্রার্থী সাবিরা সুলতানার দুর্নীতির মামলায় পাওয়া দণ্ড ও সাজা স্থগিত করেন হাইকোর্ট।
ফৌজদারি কার্যবিধির ৪২৬ ধারা অনুযায়ী সাজা ও দণ্ড স্থগিত চেয়ে করা এক আবেদনের শুনানি নিয়ে বিচারপতি মো. রইস উদ্দিনের একক বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি সাবিরার ছয় বছরের দণ্ড ও সাজার কার্যকারিতা স্থগিত করার পর তাঁর আইনজীবী আমিনুল ইসলাম বলেছিলেন, ‘ফৌজদারি কার্যবিধির ৪২৬(১) ধারা অনুসারে আদালত সাবিরা সুলতানার সাজা ও দণ্ড স্থগিত করে। এখন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে তাঁর আর কোনো বাধা থাকল না।’
আমিনুল ইসলাম আরো বলেছিলেন, ‘আমরা শুনানিতে বলেছি যে, কোনো ব্যক্তির দণ্ড আপিল বিভাগে চূড়ান্তভাবে নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত তাঁকে দোষী সাব্যস্ত করে দণ্ডিত বলার অবকাশ নেই। সে কারণে আপিল বিচারাধীন থাকা অবস্থায় দণ্ডপ্রাপ্তদের ক্ষেত্রে সংবিধানের ৬৬(২) (ঘ) অনুচ্ছেদ প্রযোজ্য হবে না।’
যদিও বিএনপির পাঁচ নেতার সাজা স্থগিত চেয়ে এক আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে গত ২৭ নভেম্বর বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি কে এম হাফিজুল আলমের হাইকোর্ট বেঞ্চ একটি আদেশ দেন। আদেশে তাদের সাজা স্থগিতের আবেদন খারিজ করে দেন।
একই সঙ্গে আদালত পর্যবেক্ষণে বলেন, ‘নিম্ন আদালতে দুই বছরের বেশি দণ্ড হলে আপিল বিচারাধীন থাকা অবস্থায় কোনো ব্যক্তি নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না। তবে আপিল বিভাগে দণ্ড স্থগিত ও বাতিল হলেই কেবল অংশ নিতে পারবেন।’ কিন্তু পরে এই নেতারা আপিল আদালতে যান। সেখানেও হাইকোর্টের আদেশই বহাল থাকে।
এর পরই হাইকোর্টের একক বেঞ্চের আদেশ আসায় এ নিয়ে মতভেদ দেখা দেয়। এই পরিপ্রেক্ষিতেই হাইকোর্টের ওই আদেশ চ্যালেঞ্জ করে আজ চেম্বার আদালতে আপিলে যায় রাষ্ট্রপক্ষ।
মিথ্যা তথ্য ও জ্ঞাত আয়-বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) দায়ের করা মামলায় সাবিরা সুলতানাকে গত ১২ জুলাই ঢাকার বিশেষ আদালতের বিচারক শহিদুল ইসলাম দুর্নীতি দমন আইনের ২৬(২) ধারায় তিন বছর এবং ২৭(১) ধারায় তিন বছর কারাদণ্ড দেন। একইসঙ্গে পাঁচ হাজার টাকা অর্থদণ্ড ও অনাদায়ে আরও তিন মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেয়া হয়। পাশাপাশি সাবিরা সুলতানার এক কোটি ৭৮ হাজার ১৩৫ টাকা রাষ্ট্রের অনুকূলে বাজেয়াপ্ত করার আদেশ দেওয়া হয়।
যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান ও যশোর-২ আসনের বিএনপি প্রার্থী সাবিরা সুলতানা। ফাইল ছবি