বাবার আসনে নৌকা পেলেন নিজাম, অন্যরা অপরিবর্তিত
আগামী ৩০ ডিসেম্বর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। নওগাঁর ছয়টি আসনেই পুরোদমে বইছে নির্বাচনী হাওয়া। ১৯৯১ সাল থেকে নওগাঁর অধিকাংশ আসন বিএনপির দখলে থাকলেও ২০০৮ সালের নির্বাচনে আসনগুলো চলে যায় আওয়ামী লীগের দখলে। এবারের নির্বাচন হবে নওগাঁর ছয়টি আসনে আওয়ামী লীগের টিকে থাকার লড়াই।
১১টি উপজেলা, তিনটি পৌরসভা ও ৯৯টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত নওগাঁ জেলা। একসময় গাঁজা চাষের জন্য বিখ্যাত ছিল নওগাঁ। ১৯৭৪ সালে জেনেভা কনভেনশনে মাদকদ্রব্যবিরোধী চুক্তির শর্ত অনুযায়ী ১৯৮৭ সালে বাংলাদেশ গাঁজা চাষ বন্ধ করে দেয়। ফলে নওগাঁ জেলার সব জমি চলে আসে ধান চাষের আওতায়। ৩০ বছরেই নওগাঁ জেলা খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ। এখন বলা হয়ে থাকে উদ্বৃত্ত খাদ্য উৎপাদনের জেলা নওগাঁ। বর্তমানে দেশের মোট খাদ্য চাহিদার ৪০ থেকে ৪২ শতাংশ নওগাঁ জেলা থেকে পূরণ করা হয়ে থাকে।
১৯৯১ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নওগাঁয় তিনটি আসন পায় বিএনপি, দুটি আওয়ামী লীগ ও একটি জামায়াতে ইসলামী। ১৯৯৬ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ছয়টি আসনেই নির্বাচিত হয় বিএনপি। ২০০১ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নওগাঁ-৫ (সদর) আসনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক, সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী প্রয়াত আবদুল জলিল। এ ছাড়া অন্য পাঁচটি আসন পায় বিএনপি। ২০০৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির দুর্গ ভেঙে চলে যায় আওয়ামী লীগের দখলে। ছয়টি আসনেই নির্বাচিত হন আওয়ামী লীগের প্রার্থী। ১০ বছর ধরে আওয়ামী লীগের দখলে আছে নওগাঁর ছয়টি সংসদীয় আসন।
এর মধ্যে ২০১৩ সালের ৬ মার্চ আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবদুল জলিল মৃত্যুবরণ করলে আসনটি শূন্য হয়। পরে উপনির্বাচনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নওগাঁ-৫ আসনের সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. আবদুল মালেক। এরপর ২০১৪ সালের নির্বাচনেও জয়ী হন তিনি। কিন্তু এবার তিনি মনোনয়ন পাননি। তাঁর পরিবর্তে নৌকার মনোনয়ন পেয়েছেন প্রয়াত আবদুল জলিলের ছেলে নিজাম উদ্দিন জলিল জন। তরুণ এই নেতা নওগাঁ জেলা আওয়ামী লীগের যুব ও ক্রীড়াবিষয়ক সম্পাদকের দায়িত্বে আছেন।
এ ছাড়া নওগাঁর পাঁচটি সংসদীয় আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী অপরিবর্তিত রয়েছে। এর মধ্যে নওগাঁ-১ (নিয়ামতপুর, পোরশা, সাপাহার) আসনে মনোনয়ন পেয়েছেন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাংসদ সাধন চন্দ্র মজুমদার। এর আগে এই আসন থেকে তিনি ২০০৮ ও ২০১৪ সালের নির্বাচনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।
নওগাঁ-২ (পত্নীতলা-ধামইরহাট) আসনে মনোনয়ন পেয়েছেন জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক সাংসদ শহীদুজ্জামান সরকার। এর আগে তিনি ১৯৯১, ২০০৮ ও ২০১৪ সালে এই আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। তিনি বর্তমানে জাতীয় সংসদে হুইপের দায়িত্বে আছেন।
নওগাঁ-৩ (মহাদেবপুর-বদলগাছী) আসনে মনোনয়ন পেয়েছেন মহাদেবপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সাংসদ ছলিম উদ্দিন তরফদার। তিনি ২০১৪ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তৎকালীন আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী ড. আকরাম হোসেন চৌধুরীর বিরুদ্ধে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করে বিপুল ভোটের ব্যবধানে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। এর পর দল থেকে তাঁকে বহিষ্কার করা হয়। বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করলে ২০১৭ সালের মে মাসে তিনি আবার আওয়ামী লীগে যোগ দেন।
নওগাঁ-৪ (মান্দা) আসনে মনোনয়ন পেয়েছেন প্রবীণ রাজনীতিবিদ পাট ও বস্ত্রমন্ত্রী মুহা. ইমাজ উদ্দিন প্রামাণিক। তিনি ১৯৭৩, ১৯৮৬, ২০০৮ ও ২০১৪ সালে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন না পেয়ে তিনি তৎকালীন আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী আবদুল লতিফ শেখের বিরুদ্ধে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। এরপর দল তাঁকে বহিষ্কার করে। পরে আবার আওয়ামী লীগে ফিরিয়ে আনা হয়।
নওগাঁ-৬ (রানীনগর-আত্রাই) আসনে মনোনয়ন পেয়েছেন জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক সাংসদ মো. ইসরাফিল আলম। এর আগে ঢাকা মহানগর শ্রমিক লীগের সাধারণ সম্পাদক থাকার সময়ে ২০০৮ ও ২০১৪ সালের নির্বাচনে এই আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন তিনি।
এবারের নির্বাচনে নওগাঁ জেলার ১১ উপজেলায় মোট ভোটার সংখ্যা ২০ লাখ দুই হাজার ৩৩৩ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার নয় লাখ ৯৪ হাজার ৮৭২ জন এবং নারী ভোটার ১০ লাখ সাত হাজার ৩৫৯ জন।