বিশ্বের শ্রেষ্ঠ মায়ের তালিকায় নেত্রকোনার সীমা সরকার
১৮ বছরের প্রতিবন্ধী সন্তানকে কোলে করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ ও সেই ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হওয়ায় বিশ্বের ১০০ জন অনুপ্রেরণাদায়ী মা ও প্রভাবশালী নারীর তালিকায় ৮১তম স্থানে রয়েছেন নেত্রকোনার সীমা সরকার।
ছেলে হৃদয় সরকার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ায় ও তাঁর মা বিশ্বের শ্রেষ্ঠ মায়ের তালিকায় স্থান পাওয়ায় আনন্দিত ও গর্বিত তাঁর পরিবারসহ এলাকাবাসী।
প্রতিবন্ধী সন্তানকে উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত করার জন্য সরকারি সহযোগিতা ও বিশ্বের সব মাকে প্রতিবন্ধী সন্তানদের অবহেলা না করে তাঁদের মতো করে সেবা দান করে উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত করার আহ্বান জানান সীমা সরকার।
নেত্রকোনা পৌর শহরের কুরপাড় এলাকায় পরিবারসহ বাস করেন সমীরণ সরকার ও সীমা সরকার। নিম্ন মধ্যবিত্ত এই পরিবারের দুই ছেলের মধ্যে বড় ছেলে শারীরিক প্রতিবন্ধী হৃদয় সরকার। অদম্য ইচ্ছাশক্তি আর দৃঢ় মনোবল থাকলেই যে কোনো অসাধ্যকে সাধন করা যায় তাঁরই প্রমাণ করলেন মা ও ছেলে।
মায়ের স্বপ্ন ছিল জন্মগতভাবে শারীরিক প্রতিবন্ধী হৃদয়কে উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত করা। ছোটবেলা থেকেই সবার আদর যত্নে বড় হতে থাকে হৃদয়। আর পড়ালেখার জন্য কোলে পিঠে করে বিদ্যালয়ে নিয়ে যেতেন তাঁর মা। তারপর উচ্চ বিদ্যালয় থেকে কলেজ, কলেজ থেকে আজ বিশ্ববিদ্যালয়ে স্থান করে নিয়েছেন হৃদয়। কিছুদিন আগে মায়ের কোলে উঠে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে দেশের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ বিশ্ববিদ্যালয়ে ব্যাপক আলোচিত হয়েছেন হৃদয় ও তাঁর মা সীমা সরকার।
সম্প্রতি সারা বিশ্বের বিভিন্ন অঙ্গনের ১০০ জন অনুপ্রেরণাদায়ী মা ও প্রভাবশালী নারীর তালিকা প্রকাশ করে বিশ্বের প্রভাবশালী ব্রিটিশ সংবাদ মাধ্যম বিবিসি। বিশ্বের ৬০টি দেশের ১৫ থেকে ৯৪ বছর বয়সী নারীদের নিয়ে এই তালিকা তৈরি করা হয়। এবার সেই তালিকায় ৮১তম স্থানটি দখল করে নিয়েছেন সীমা।
শারীরিক প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থী হৃদয় সরকার জানান, ‘আমার মা বিশ্বের শ্রেষ্ঠ মায়ের স্বীকৃতি পাওয়ায় আমি গর্বিত। ছোট থেকেই যে স্বপ্ন ছিল, আজ সেই স্বপ্ন বাস্তবে পরিণত হতে যাচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়া শেষ করে উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত হতে চাই। পড়াশোনা শেষে দেশের প্রতিবন্ধী, অসহায় ও অসুস্থ মানুষের কল্যাণে কাজ করার জন্য সবার কাছে আশির্বাদ ও দোয়া চাই আমি।’
হৃদয় সরকারের বাবা সমীরণ সরকার বলেন, ‘মায়ের চেষ্টায় ছেলে হৃদয় বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ায় ও তাঁর মা বিশ্বের শ্রেষ্ঠ মায়ের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হওয়ায় আমি অনেক আনন্দিত।’
নেত্রকোনার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আরিফুল ইসলাম জানান, মা ও ছেলের এমন সফলতায় স্থানীয় প্রশাসন গর্বিত ও আনন্দিত।
সরকারিভাবে করণীয় যেকোনো সহযোগিতার আশ্বাস দিয়ে আরিফুল ইসলাম বলেন, একটি উদাহরণ হিসেবে তুলে ধরার মতো বিষয় হচ্ছে, সন্তানের অনুপ্রেরণাদায়ী মা বিশ্বের শ্রেষ্ঠ মায়ের স্বীকৃতি পাওয়া। আমি আশা করি প্রতিবন্ধী, অসহায় ও অসুস্থ কোনো সন্তান এখন আর কারো অবহেলার পাত্র হবে না।