পরিচালকের মায়ের মৃত্যু নিয়ে হাইকোর্টের রুল জারি
বাংলাদেশি চলচ্চিত্র পরিচালক রফিক শিকদারের মায়ের কিডনি হারানো ও মৃত্যুর ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারকে কেন এক কোটি টাকা ক্ষতি পূরণ দেওয়া হবে না জানতে চেয়ে রুল জারি করেছেন হাইকোর্ট। কিডনি অপারেশনের সঙ্গে জড়িত চিকিৎসকের পেশাগত লাইসেন্স বাতিল করার নির্দেশ কেন দেওয়া হবে না তাও জানতে চাওয়া হয় রুলে।
স্বাস্থ্য সচিব, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) ভিসিসহ আটজনকে আগামী চার সপ্তাহের মধ্যে এই রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।
একটি রিটের শুনানি নিয়ে গত সোমবার বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী ও বিচারপতি মো. আশরাফুল কামালের সমন্বয়ে গঠিত হাই কোর্ট বেঞ্চ এ রুল জারি করে। রিটের পক্ষে আদালতে শুনানি করেন আইনজীবী এম আসাদুজ্জামান।
রফিক শিকদারের মা রওশন আরা মারা যান ৩১ অক্টোর রাত ১০টায়। রফিক শিকদারের অভিযোগ, চিকিৎসক প্রতারণা করে মায়ের দুটো কিডনিই বিক্রি করে দেন, যে কারণে মৃত্যু হয় রওশন আরার। এমনকি তিনি তিনদিন আগে মারা যান এবং তাঁকে লাইফ সাপোর্টে রেখে চিকিৎসকরা দ্বিতীয়বারের মতো প্রতারণা করেছে বলেও অভিযোগ করেন রফিক শিকদার।
রওশন আরা একটি কিডনিতে সমস্যা নিয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে গত ৫ সেপ্টেম্বর ভর্তি হন। অস্ত্রোপচারের কথা বলে দুটি কিডনিই অপসারণ করার কথা বলছেন রফিক শিকদার। এদিকে শুরু থেকেই বিষয়টি অস্বীকার করছেন চিকিৎসকরা।
অপারেশনের পর থেকেই রফিক শিকদার অভিযোগ করে আসছিলেন, তাঁর মায়ের কিডনি সরিয়ে ফেলেছেন চিকিৎসকরা। এরই মধ্যে লিখিত এক বক্তব্যের মাধ্যমেও এর বিচার দাবি করেন তিনি। রফিক শিকদার সেখানে প্রধানমন্ত্রীর কাছে দাবি করেন, ডাক্তার হাবিবুর রহমান দুলাল ও তাঁর সহযোগীদের যেন বিচারের আওতায় আনা হয়।
এফডিসিতে সংবাদ সম্মেলনে রফিক শিকদার লিখিত বক্তব্যে বলেন, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, আপনার কাছে প্রশ্ন, কে বড়? আমার অসহায় মা নাকি অধ্যাপক হাবিবুর রহমান দুলাল? আপনি কার? শোষকের নাকি শোষিতের? নিশ্চয়ই আপনি শোষিতের পক্ষে। ডাক্তার সাহেব কত টাকার বিনিময়ে আমার বোকাসোকা মায়ের কিডনিটি অন্যত্র বিক্রি করেছেন, তা জানার চেষ্টা করবেন কি? আমার মায়ের সঙ্গে করা এই অন্যায়ের বিচার শেষ পর্যন্ত পাব কি? সুবিচার ও আপনার প্রতীক্ষায় রইলাম। অন্যথায় জিতে যাবে ডাক্তার। ডাক্তার জিতলে হেরে যাবে মানবতা।’
কিডনি জটিলতার কারণে গত ৫ সেপ্টেম্বর রাজধানীর বিএসএমএমইউ হাসপাতালে চলচ্চিত্র পরিচালক রফিক শিকদারের মা রওশন আরার অস্ত্রোপচার করেন কিডনি ট্রান্সপ্ল্যান্ট বিভাগের প্রধান হাবিবুর রহমান দুলাল। কিন্তু অস্ত্রোপচারের পর রোগীর দেহে জটিলতা সৃষ্টি হলে রফিক শিকদার নিশ্চিত হন, তাঁর মায়ের দুটো কিডনি ফেলে দেওয়া হয়েছে।
চলচ্চিত্র পরিচালক রফিক শিকদার আরো বলেন, ‘গত ৫ সেপ্টেম্বর বঙ্গবন্ধু মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রফেসর হাবিবুর রহমান দুলারের তত্ত্বাবধানে হাসপাতালের দশম তলার অপারেশন থিয়েটারে মায়ের অপারেশন সম্পন্ন হয়। কিন্তু রাত ১২টার দিকে কর্তব্যরত ডাক্তার আমাকে বলেন, অপারেশনের পর থেকে আপনার মায়ের ডান পাশের কিডনিটি কাজ করেছে না। দ্রুত উনাকে আইসিইউতে নেওয়ার ব্যবস্থা করুন। সঙ্গে তিনি এটাও বলেন, আমাদের হাসপাতালে আইসিইউ খালি নেই। কোনো প্রাইভেট হাসপাতালের আইসিইউতে নেওয়ার ব্যবস্থা করুন। একদিন পর ইনসাফ আল-বারাকাহ কিডনি অ্যান্ড জেনারেল হাসপাতালের ডাক্তার হুমায়ুন রশিদ কবীর সেলিম মায়ের কিডনির অবস্থা পর্যালোচনার জন্য ল্যাবএইড হাসপাতাল থেকে সিটিস্ক্যান করতে বলেন। পরে ল্যাবএইড হাসপাতালে সিটিস্ক্যান করার পর রিপোর্ট মারফত মায়ের পেটে কিডনির অস্তিত্ব নেই বলে জানতে পারি। অবস্থা বেগতিক দেখে বিআরবি হাসপাতালের নেফ্রোলজি বিভাগের প্রধান ডাক্তার এম এ সামাদের দ্বারস্থ হই। মেডিকেল রিপোর্ট দেখার পর পর্যালোচনা করে এবং পুনরায় আলট্রাসনোগ্রাম করে মায়ের পেটে কোনো কিডনির অস্তিত্ব না থাকার বিষয়টি নিশ্চিত করেন।’
‘পরে জানা যায়, পাথর অপসারণ করতে গিয়ে আমার মায়ের দুটো কিডনিই কেটে ফেলেছেন চিকিৎসক হাবিবুর রহমান দুলাল। এ নিয়ে বিভিন্ন সংবাদপত্রে নিউজ হলে অভিযুক্ত চিকিৎসক হাবিবুর রহমান দুলাল দাবি করেন, রফিক শিকদারের মায়ের কিডনিটি প্রকৃতিগতভাবেই জোড়া লাগানো ছিল। যে কারণে নষ্ট কিডনিটি ফেলতে গিয়ে অপারেশনকৃত স্থানে প্রচুর রক্তক্ষরণ শুরু হয়, যা পরে বন্ধ করা সম্ভব হয়নি। যে কারণে রোগীর ডান দিকের সুস্থ কিডনিটিও ফেলে দিতে হয়েছে। অথচ অপারেশনের আগে সিটিস্ক্যান রিপোর্ট, আলট্রাসনোগ্রামের একাধিক রিপোর্ট বলছে, আমার মায়ের দুটো কিডনিই আলাদা আলাদা স্থানে আবদ্ধ ছিল।’
আর এ বিষয়ে ডাক্তার হাবিবুর রহমান দুলালের সঙ্গে মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি।
তবে এর আগে একাধিক মিডিয়াকে ডাক্তার হাবিবুর রহমান দুলাল বলেন, ‘অভিযোগ তো মিথ্যা নয়, আমরা বললাম এটা আমরা বাঁ দিকে অপারেশন করেছি, বাঁ কিডনি ফেলার জন্য এটা সিদ্ধান্ত ছিল। জন্মগতভাবে বাঁ কিডনির সমস্যা ছিল, এর সঙ্গে ডান দিকের কিডনি এমনভাবে পেঁচানো ছিল যে এবং ওই অবস্থা ব্লিডিং হচ্ছিল, যা কোনোভাবে বোঝা সম্ভব হচ্ছিল না, ফলে অপারেশনের সময় ডান কিডনিটাও উঠে চলে আসে।’
পরে ওই ঘটনায় অভিযুক্ত চিকিৎসক হাবিবুর রহমান দুলাল ও তাঁর সহযোগীর বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপসহ প্রয়োজনীয় ক্ষতিপূরণ চেয়ে হাই কোর্টে রিট দায়ের করা হয়।