আটকে রেখে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড হতে পারে না : খালেদা জিয়া
‘আমাকে জেলে এবং আমাদের নেতাকর্মীকে আদালতে আটকে রেখে আরেক দলকে নির্বাচনের প্রচারণার সুযোগ দিয়ে নির্বাচনে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড হতে পারে না। নির্বাচনে সবাইকে সমান সুযোগ দিতে হবে।’
আজ বুধবার ঢাকার বিশেষ জজ আদালত ৯-এ নাইকো দুর্নীতি মামলার শুনানির সময় খালেদা জিয়া এসব কথা বলেন। বার্তা সংস্থা ইউএনবি এ তথ্য দিয়েছে।
নাইকো দুর্নীতি মামলা অভিযোগ গঠনের ওপর পরবর্তী শুনানি সংসদ নির্বাচনের পর আগামী বছর ৩ জানুয়ারি দিন ধার্য করেছেন আদালত।
এ মামলার অভিযোগ গঠনের ওপর আংশিক শুনানির পর আসামিপক্ষের সময় আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকার নবম বিশেষ জজ আদালতের বিচারক মাহমুদুল কবির বুধবার এ দিন নির্ধারণ করেন।
পুরান ঢাকার সাবেক কারাগারের ভেতর স্থাপিত অস্থায়ী আদালতে এ মামলার অভিযোগ গঠনের ওপর শুনানিতে হাজির হয়ে আদালতের কাছে সময় প্রার্থনা করেন কারাবন্দি বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া।
খালেদা জিয়া আদালতকে বলেন, ‘যদি আমাদের সময় না দেন তাহলে আদেশ দিয়ে বলে দিন, আমরা নির্বাচন করতে পারব না।’ এ মামলায় দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) প্রসিকিউটর মোশাররফ হোসেন কাজলের সময়ের আবেদনের বিরোধিতার পরিপ্রেক্ষিতে খালেদা জিয়া আদালতের কাছে দেড় মাস সময় প্রার্থনা করেন। মামলার অন্যতম আসামি ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদের অব্যাহতি আবেদনের ওপর আংশিক শুনানির পর বিচারক উভয়পক্ষের শুনানি শেষে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর শুনানির দিন ধার্য করেন।
দুপুর ১২টার দিকে এ মামলার কার্যক্রম শুরু হলে শুরুতেই এ আদালতের পরিবেশ নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেন খালেদা জিয়া। তিনি বলেন, ‘এই কারাগারের ভেতরে বিচার হয় কীভাবে? এখানে তো পরিবেশ নেই।’
এরপর মামলার অন্যতম আসামি ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ কারাগারের ভেতর আদালতের পরিবেশ ও আইনজীবীদের বসার মতো জায়গা নেই বলে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, ‘এই আদালতে বিচার করার মতো কোনো পরিবেশ নেই। আইনজীবীদের বসার মতো কোনো জায়গা নেই। শ্বাস প্রশ্বাস নেওয়ার মতো কোনো জায়গা নেই। নাইকো মামলাকে এত বড় করে দেখার কী আছে? রায়ে না হয় আমার সর্বোচ্চ ১০ বছর সাজা হবে। এখানে পুলিশের এত নিরাপত্তা কেন? সংবিধানে আছে-মানুষের মৌলিক অধিকার রক্ষা করতে হবে। একটি মামলার পাবলিক ট্রায়াল করতে যে পরিবেশের প্রয়োজন তা নেই। কীভাবে ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা হবে।’ বিষয়টি কর্তৃপক্ষের নজরে দেওয়ার জন্য বিচারকের প্রতি অনুরোধ জানান তিনি।
এ সময় বিচারকের উদ্দেশে মামলার প্রধান আসামি খালেদা জিয়া বলেন, ‘আমাদের মামলাগুলো এত দ্রুত বিচার হচ্ছে কেন? কেন এত দ্রুত বিচার শেষ করতে চাচ্ছেন? অন্য মামলায় তো এ রকম চেষ্টা দেখি না। নারায়ণগঞ্জের সেভেন মার্ডার মামলায়ও দ্রুত বিচার হয়নি। বহু গুরুত্বপূর্ণ মামলার শুনানি হচ্ছে না। কিসের জন্য আমাদের মামলা দ্রুত বিচার করা হয়? আদালতের ভেতরে মামলা পরিচালনা করার মতো কোনো পরিবেশ নেই। এজলাস কক্ষে এভাবে পুলিশ দিয়ে কেন আটকে রাখা হয়েছে। এভাবে থাকলে আমি আইনজীবীদের দেখতে পারি না। তাদের সঙ্গে কথা বলতে পারি না।’
এ পর্যায়ে বিচারক বলেন, ‘তাৎক্ষণিকভাবে এ বিষয়ে আমি কোনো সিদ্ধান্ত দিতে পারব না। তবে প্রসিকিউটরকে বলছি এ বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য।’
এ সময় খালেদা জিয়া বলেন, ‘একদল নির্বাচন করবে আর আমাদের আদালতে আটক রাখা হবে-এটা তো হতে পারে না। যেহেতু এখন সবাই মাঠে নির্বাচনের কাজ করছে, কেউ আমার জন্য, কেউ তার নিজের জন্য। যেখানে নির্বাচন নিয়ে সবাই ব্যস্ত, সেখানে আমাদের আদালতে আটকে রাখা হয়েছে। অনেক প্রতিকূলতার মধ্যে আমাদের এসব (নির্বাচনী) কাজ করতে হচ্ছে।’
খালেদা জিয়া বলেন, ‘আমাকে জেলে এবং আমাদের নেতা-কর্মীকে আদালতে আটকে রেখে আরেক দলকে নির্বাচনের প্রচারণার সুযোগ দিয়ে নির্বাচনে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড হতে পারে না। নির্বাচনে সবাইকে সমান সুযোগ দিতে হবে।’
খালেদা জিয়া আরো বলেন, ‘যেহেতু সামনে নির্বাচন, সবাই যে যার মতো এলাকায় চলে যাবে, কেউ আসতে পারবে না, আমি নিজেও আসতে পারব না। এখানে আসা আমার জন্য কষ্টকর হয়ে যায়। একদল নির্বাচনের নিয়ে ব্যস্ত থাকবে অন্যদল মামলা নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করবে। যদি আমাদের সময় না দেন তাহলে আদেশ দিয়ে বলে দিন, আমরা নির্বাচন করতে পারব না।’ তাই নির্বাচন শেষ না হওয়া পর্যন্ত এ মামলার শুনানি মুলতবি রাখার জন্য আদালতের কাছে সময় প্রার্থনা করেন তিনি।
এ সময় মওদুদ বলেন, ‘আদালত যেহেতু বিষয়টি উপলব্ধি করতে পেরেছেন তাই, আজ মামলার কার্যক্রম মুলতবি করে দিন। আমাদের দলের নোমিনেশন বিক্রি চলছে। আমি একজন প্রার্থী। তা ছাড়া আজ আমাকে ড. কামাল হোসেনের সঙ্গে নির্বাচন কমিশনে যেতে হবে। বিষয়টি নির্বাচনের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আমরা ম্যাডামের (খালেদা জিয়া) সঙ্গে দেখা করেছি, উনি বলেছেন, নির্বাচন করতে। নির্বাচন না হলে, আবার ২০১৪ সালের মতো অবস্থা হবে। তাই নির্বাচনের পর একটি তারিখ দিন।’
উভয়পক্ষের শুনানি শেষে আদালত ৩ জানুয়ারি পর্যন্ত শুনানি মুলতবি করেন। শুনানির সময় মামলার অপর আসামিদের মধ্যে তারেক রহমানের বন্ধু গিয়াস উদ্দিন আল মামুন, সাবেক জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী এ কে এম মোশাররফ হোসেন, ঢাকা ক্লাবের সাবেক সভাপতি সেলিম ভুঁইয়া, সাবেক সিনিয়র সহকারী সচিব সি এম ইউছুফ হোসাইন উপস্থিত ছিলেন।
জামিনে থাকা অপর আসামি জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সাবেক ভারপ্রাপ্তা সচিব খন্দকার শহীদুল ইসলাম অনুপস্থিত ছিলেন। এ ছাড়া আসামি নাইকোর দক্ষিণ এশিয়াবিষয়ক ভাইস প্রেসিডেন্ট কাশেম শরীফ, তখনকার প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী ও বাপেক্সের সাবেক মহাব্যবস্থাপক মীর ময়নুল হক পলাতক রয়েছেন।
এর আগে দুপুর ১২টার দিকে পুরান ঢাকার নাজিমউদ্দিন রোডের সাবেক কেন্দ্রীয় কারাগারের ভেতরে স্থাপিত ঢাকার বিশেষ জজ আদালতে ১৭ বছরের সাজাপ্রাপ্ত সাবেক এ প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াকে হুইল চেয়ারে করে হাজির করা হয়।
এ সময় আদালতে খালেদা জিয়ার পক্ষে আইনজীবী জয়নুল আবেদীন, মাহবুব উদ্দিন খোকন, মাসুদ আহমেদ তালুকদার, জয়নুল আবেদীন মেসবাহ, জাকির হোসেন ভূঁইয়াসহ অন্যরা উপস্থিত ছিলেন।