জন্মস্থানে হুমায়ূন আহমেদকে স্মরণ
নন্দিত কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদের আজ ৭০তম জন্মদিন। ১৯৪৮ সালের আজকের এই দিনে নেত্রকোনা জেলার মোহনগঞ্জের শেখ বাড়িতে (নানার বাড়ি) জন্মগ্রহণ করেন তিনি। সারাদেশের মতোই জন্মস্থানেও দিনটি বিভিন্ন আয়োজন করে পালন করা হয়। আজ মঙ্গলবার সকাল থেকে শোভাযাত্রা ও কেক কাটার মধ্য দিয়ে স্মরণ অনুষ্ঠান শুরু হয়। অনুষ্ঠানটি আয়োজন করে হুমায়ূন আহমেদের জন্মবার্ষিকী উৎযাপন পরিষদ-২০১৮, মোহনগঞ্জ নেত্রকোনা।
অনুষ্ঠানের আহ্বায়ক রইস মনরম বলেন, ‘আজ সকাল সাড়ে ১০টায় আমরা স্থানীয় শহিদ মিনার থেকে আনন্দ র্যালির আয়োজন করি। এখানে স্থানীয় স্কুলের শিশুরা ছাড়াও রাজনৈতিক, সামাজিক গণ্যমান্য লোকেরা অংশগ্রহণ করেন। র্যালি শেষে আমরা শেখ বাড়িতে হুমায়ূন আহমেদের জন্মভিটায় গিয়ে কেক কাটি। এ সময় হুমায়ূন আহমেদের ছেলেবেলা নিয়ে আলোচনা হয়েছে।’
রইস মনরম আরো বলেন, ‘হুমায়ূন আহমেদের ছেলেবেলার গল্প শুনে আজকের শিশুরা উৎসাহ পাবে। এমন একজন বিখ্যাত মানুষের জন্ম মোহনগঞ্জে হয়েছে এটা জেনে শিশুরা নিজের মধ্যে উৎসাহ পায়। এ জন্যই আমরা শিশুদের নিয়ে এই দিনটি পালন করি। আমরা প্রতি বছর এই দিনটি শিশুদের নিয়ে পালন করে থাকি। কারণ আজকের শিশু আগামী দিনের ভবিষ্যৎ। আজকে তাদের বড় হওয়ার জন্য স্বপ্ন প্রয়োজন। হুমায়ূন আহমেদের কাছ থেকে তারা সেটা পেতে পারে।’
এই বাড়িতেই জন্মগ্রহ করেন হুমায়ূন আহমেদ। ছবি : সংগৃহীত
হুমায়ূন আহমেদের লেখায় বারবারই উঠে এসেছে শেখ বাড়ি, শিয়াল দানি খাল, ডিঙ্গাপোতা হাওরের নাম। এখানে কেটেছে তাঁর ছোটবেলার অনেক সময়। শিয়াল দানি খালের পাশে শেখ বাড়িতেই আজকের এই দিনে তিনি জন্মগ্রহণ করেন।
এ সময় আরো উপস্থিত ছিলেন নারী নেত্রী তাহমিনা সাত্তার, হুমায়ূন আহমেদের ছোট মামা অধ্যাপক মাহবুবুর নবী শেখ, সংস্কৃতিকর্মী সুলতান আহমেদ, বিমল চন্দ্র পাল, অমল চন্দ্র সরকার, কাজী রফিকুল ইসলাম, তাবিন্দা কামরুল নিপা, মোহম্মদ ইউসুফ, রফিকুল ইসলাম বাবলু, সাংবাদিক এমদাদুল ইসলাম খোকনসহ স্থানীয়রা।
আনন্দ শোভাযাত্রা করছে ‘হুমায়ূন আহমেদ জন্মবার্ষিকী উদযাপন পরিষদ- ২০১৮, মোহনগঞ্জ, নেত্রকোনা। ছবি : সংগৃহীত
হিমু, রূপা, মিসির আলী ও শুভ্র চরিত্রগুলোর স্রষ্টা এই লেখকের তিন শতাধিক প্রকাশিত গ্রন্থসংখ্যা রয়েছে। তাঁর লেখা অন্যতম উপন্যাসগুলো হলো ‘নন্দিত নরকে’, ‘মধ্যাহ্ন’, ‘জোছনা ও জননীর গল্প’, ‘মাতাল হাওয়া’ ইত্যাদি। ঔপন্যাসিক, ছোটগল্পকার ও গীতিকার হিসেবে হুমায়ূন আহমেদ যেমন জনপ্রিয়তা পেয়েছেন, তেমনি নাটক ও চলচ্চিত্র নির্মাণ করেও লাখো মানুষের হৃদয় জয় করে নিয়েছেন তিনি। তাঁর নির্মিত উল্লেখযোগ্য চলচ্চিত্র হচ্ছে ‘আগুনের পরশমণি’, ‘দুই দুয়ারী’, ‘শ্রাবণ মেঘের দিন’, ‘শ্যামল ছায়া’, ‘চন্দ্রকথা’, ‘ঘেটুপুত্র কমলা’ ইত্যাদি।
হুমায়ূন আহমেদের লেখা উল্লেখযোগ্য নাটকগুলো হলো ‘এই সব দিনরাত্রি’, ‘অয়োময়’, ‘কোথাও কেউ নেই’, ‘নক্ষত্রের রাত’, ‘আজ রবিবার’ ইত্যাদি।
পেশাজীবনে হুমায়ূন আহমেদ ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক। পরে অধ্যাপনা ছেড়ে দিয়ে লেখালেখিতে নিয়মিত হোন তিনি।
বাংলা সাহিত্যের কিংবদন্তি এই লেখক ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ২০১২ সালের ১৯ জুলাই ইন্তেকাল করেন।