‘সুষ্ঠু নির্বাচনের সামান্যতম পরিবেশ তৈরিতে ব্যর্থ নির্বাচন কমিশন’
নির্বাচন কমিশনের নির্দেশনা সত্ত্বেও দলের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা দিয়ে হয়রানি ও গ্রেপ্তার করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। তিনি বলেছেন, অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের সামান্যতম পরিবেশ তৈরিতে ব্যর্থ হয়েছে নির্বাচন কমিশন। নির্বাচন থেকে মাইনাস করার জন্যই বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে কারাগারে রাখা হয়েছে।
আজ মঙ্গলবার সকালে রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে রিজভী এ কথা বলেন।
রিজভী বলেন, ‘নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে বিএনপিসহ রাজনৈতিক দলগুলোর নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মিথ্যা ও বানোয়াট মামলা দেওয়া, গ্রেপ্তার ও হয়রানি বন্ধের নির্দেশ দেওয়া হলেও এখন পর্যন্ত দেশের বিভিন্ন এলাকায় নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে ভুয়া মামলা দায়ের করা হচ্ছে, গ্রেপ্তার করা হচ্ছে, তল্লাশির নামে বাড়িতে বাড়িতে হানা দিয়ে হুমকি দেওয়া হচ্ছে। অবাধ-সুষ্ঠু নির্বাচনের সামান্যতম পরিবেশ তৈরি করতে ব্যর্থ হয়েছে নির্বাচন কমিশন।’
ওই সংবাদ সম্মেলন নিয়ে গণমাধ্যমে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে রিজভী বলেন, ‘নির্বাচনে বিদেশি পর্যবেক্ষকরা যাতে না থাকতে পারেন, সে জন্য ৩০ ডিসেম্বর ২০১৮ ভোটের দিন নির্ধারণ করেছে ইসি। ২৫ ডিসেম্বর বড়দিন, থার্টিফার্স্ট ও ইংরেজি নববর্ষের কারণে বিদেশি পর্যবেক্ষক, বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত, হাইকমিশনার ও কর্মকর্তারা ছুটিতে থাকবেন। সুতরাং তাঁদের দৃষ্টির অন্তরালেই একটি বড় ভোট চুরির নির্বাচন অনুষ্ঠিত করতে সরকারের নির্দেশেই ৩০ ডিসেম্বর নির্বাচনের দিন ঘোষণা করেছে ইসি।’
রিজভী বলেন, ‘আমাদের আগের দাবি অনুযায়ী নির্বাচন এক মাস পেছাতে হবে। পুনরায় তফসিল ঘোষণা করতে হবে। এ ছাড়া নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণায় সব রাজনৈতিক দলকে সমান সুযোগ দিতে হবে।’
বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে কারাগারে পাঠানো নিয়ে দলের এই জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব বলেন, ‘আদালতের নির্দেশে বিএসএমএমইউতে ভর্তি করে সরকারের নির্দেশে চিকিৎসা না দিয়েই আবারও কারাগারে প্রেরণ করা হয়েছে। বর্তমানে তাঁর কোনো চিকিৎসা চলছে না। নিয়মিত যে থেরাপি দেওয়া হতো, তা থেকেও বঞ্চিত করা হয়েছে, বর্তমানে তিনি গুরুতর অসুস্থ।’
রিজভী আরো বলেন, ‘নির্বাচন থেকে মাইনাস করার জন্যই খালেদা জিয়াকে কারাগারে রাখা হয়েছে। এ পর্যন্ত তিনি (খালেদা জিয়া) যতগুলো নির্বাচনে যত আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন, সবগুলোতেই লাখ লাখ ভোটের ব্যবধানে বিজয়ী হয়েছেন, অনেকেই তা পারেননি, এ জন্যই তাঁর প্রতি এত প্রতিহিংসা।’
জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার প্রসঙ্গে রিজভী বলেন, ‘জনমতকে উপেক্ষা করে সীমিত আকারে ইভিএম ব্যবহারের ঘোষণা দিয়েছিলেন সিইসি। কিন্তু দুই দিন আগে নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) শাহাদৎ হোসেন ৮০ থেকে ১০০টি আসনে ইভিএম ব্যবহারের ঘোষণা দিয়েছেন, যা আরো গভীর চক্রান্ত বলেই সবাই বিশ্বাস করছে। ইভিএম শুধু দেশে দেশে বিতর্কিতই নয়, ইভিএমে ভোট কারচুপি হয় বলেই পৃথিবীর প্রায় সব দেশেই এটি নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।’
‘ভারতসহ যে দু-একটি দেশে সীমিত আকারে ব্যবহার করা শুরু হয়েছিল, সেখানেও জালিয়াতির কারণে ইভিএম ব্যবহারের বিরুদ্ধে ব্যাপক আন্দোলন গড়ে উঠেছে। ওই সব দেশে রাজনৈতিক দলের নেতারা ইভিএমের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান গ্রহণ করেছেন।’
ইভিএম আরো ব্যাপকভাবে ব্যবহারের সিদ্ধান্তকে ‘ভোট জালিয়াতির মহাপরিকল্পনা’ আখ্যা দিয়ে রুহুল কবির রিজভী বলেন, নির্বাচনে কোনো ইভিএম ব্যবহার করা চলবে না। নির্বাচন কমিশনের সচিব বলেছেন, ইভিএম সেন্টারে সেনাবাহিনী নিয়োগ থাকবে। তাঁর এ বক্তব্যে জনমনে বিভ্রান্তির সৃষ্টি হয়েছে। ইভিএম তো একটি স্বয়ংক্রিয় যন্ত্র, যা বহুদূর থেকে ম্যানিপুলেট করা যায়, তাহলে সেখানে সেনাবাহিনী নিয়োগ দিয়ে কী লাভ? বরং ম্যানুয়ালি ভোট গ্রহণের ক্ষেত্রে ব্যালট পেপার কেড়ে নেওয়া, জোর করে সিল মারা হয়, সুতরাং সেসব ঠেকাতে সেনাবাহিনীর প্রয়োজন। ’