গায়েবি মামলায় ঠিকাদার, ব্যবসায়ীও আসামি!
ঝালকাঠিতে নাশকতার অভিযোগে নতুন করে দুটি মামলা হয়েছে। এর মধ্যে একটি সদর থানায়, অপরটি নলছিটি থানায়। এসব মামলায় অধিকাংশ আসামি করা হয়েছে স্থানীয় বিএনপির নেতাকর্মীদের। তবে দুজন ঠিকাদার ও ব্যবসায়ী দাবি করেছেন, তাঁরা কোনো রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত না থাকলেও তাঁদের নাম এসেছে আসামির তালিকায়।
গত শুক্রবার রাতে নলছিটি থানায় এবং গত ৩১ অক্টোবর রাতে ঝালকাঠি কোতোয়ালি থানায় মামলা দুটি করা হয়। মামলা দুটির এজাহারও প্রায় একই রকমের। শুধু আসামি, ঘটনাস্থল ও ঘটনার সময় আলাদা।
রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত না থাকা সত্ত্বেও দুই ঠিকাদার মো. মাহফুজ খান ও মো. নাসির উদ্দিন খানকে আসামি করা হয়েছে বলে তাঁরা অভিযোগ করেছেন। বিরোধী শক্তিকে নির্বাচনের আগে মাঠে নামতে বাধাগ্রস্ত করার জন্য কাল্পনিক অভিযোগে এ মামলা করা হয়েছে বলে বিএনপি নেতারা দাবি করেছেন।
একটি মামলার বিবরণীতে বলা হয়, ‘নলছিটি উপজেলার সুবিদপুর ইউনিয়নের তালতলা বাজারসংলগ্ন ইলেন ভুট্টো বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয় মাঠে বিএনপি-জামায়াতের নেতাকর্মীরা গত ২ নভেম্বর সন্ধ্যায় খালেদা জিয়ার মুক্তি ও তারেক রহমানের নামে দায়ের করা মামলা প্রত্যাহারের দাবিসহ দেশে অরাজকতা, নাশকতা ও নৈরাজ্য সৃষ্টির লক্ষ্যে দেশের অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিনষ্ট এবং গণতান্ত্রিক সরকারের ভাবমূর্তি নষ্ট করার জন্য গোপন বৈঠক করে। বৈঠক শেষে তারা সরকারের বিরুদ্ধে স্লোগান দিয়ে সুবিদপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের কার্যালয় ভাঙচুর করে। পরে তারা ইউনিয়ন ভূমি অফিস ও ইউনিয়ন পরিষদের সরকারি স্থাপনা ভাঙার এবং ক্ষতির উদ্দেশ্যে রওনা হয়। এতে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ সভাপতি গিয়াস উদ্দিনসহ দলীয় নেতাকর্মীরা বাধা দিলে বিএনপি-জামায়াত নেতাকর্মীরা দেশি অস্ত্র ও লাঠিসোটা নিয়ে তাদের ওপর হামলা চালায়।’
এ ঘটনায় গিয়াস উদ্দিন বাদী হয়ে শুক্রবার রাতে নলছিটি থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। এতে বিশিষ্ট ঠিকাদার ও এম খান গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. মাহফুজ খান, উপজেলা বিএনপির সভাপতি আনিসুর রহমান খান হেলাল, সাবেক সভাপতি নূরুল আলম গিয়াস, পৌর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সরোয়ার হোসেন তালুকদারসহ ১০ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত আশি-পঁচাশি জনকে আসামি করা হয়।
এদিকে গত ৩১ অক্টোবর ঝালকাঠি সদর থানায় প্রায় একই ধরনের অভিযোগে আরেকটি মামলা করা হয়। সদর উপজেলার বিনয়কাঠি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলাম খান বাদী হয়ে এ মামলাটি দায়ের করেন। এতে ঝালকাঠির বিশিষ্ট ঠিকাদার মো. নাসির উদ্দিন খান ও সদর উপজেলা বিএনপির সভাপতি সরদার এনামূল হক এলিনসহ আটজনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত সত্তর-আশিজনকে আসামি করা হয়।
মামলার বিবরণে বলা হয়, ‘গত ৩১ অক্টোবর সকাল সাড়ে ১০টার দিকে বিনয়কাঠি সরদার মার্কেটের সামনে কেন্দ্র ঘোষিত বিএনপির মানববন্ধন কর্মসূচি সফল করার উদ্দেশ্যে বিএনপি-জামায়াতের নেতাকর্মীরা দেশি অস্ত্র ও লাঠিসোটা নিয়ে বর্তমান সরকারবিরোধী স্লোগান দেওয়াসহ ধংসাত্মক কার্যকলাপ করার জন্য দলবদ্ধ হয়ে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ কার্যালয় ভাঙচুর করে। তারা ইউনিয়ন ভূমি অফিস, ইউনিয়ন পরিষদ ও সরকারি স্থাপনা ভাঙার উদ্দেশে রওনা হয়। এ সময় তাদের বাধা দিলে সাইফুল ইসলামসহ স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের মারধর করা হয়।’
ঝালকাঠি জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মনিরুল ইসলাম নূপুর বলেন, আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে নতুন করে আর কোনো মামলা হবে না বলে প্রধানমন্ত্রী সংলাপে বলেছেন। কিন্তু তার বাস্তবায়ন হচ্ছে না তৃণমূলে। এখনো নেতাকর্মীদের নামে ‘গায়েবি’ মামলা হচ্ছে। বিরোধী শক্তিকে নির্বাচনের আগে মাঠে নামতে বাধাগ্রস্ত করার জন্য কাল্পনিক অভিযোগে এ মামলা করা হয়েছে। মামলায় বিএনপি নেতাদের সঙ্গে দুই ঠিকাদারকে আসামি করা হয়েছে, তারা কেউই বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে জড়িত নয়। এ ধরনের মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানাচ্ছি।
ঝালকাঠি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শোনিত কুমার গায়েন বলেন, ‘বাদীর অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে ১৯৭৪ সালের বিশেষ ক্ষমতা আইনে মামলাটি লিপিবদ্ধ করা হয়েছে।’
নলছিটি থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আবদুল হালিম তালুকদার বলেন, ‘আসামিদের গ্রেপ্তারের জন্য পুলিশ তৎপর রয়েছে।’
নলছিটির বিশিষ্ট ব্যবসায়ী মো. মাহফুজ খান বলেন, ‘আমি কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত নই। নিজের ব্যবসা-বাণিজ্য নিয়ে ব্যস্ত থাকি। বিএনপি নেতাদের সঙ্গে আমার কোনো যোগাযোগও নেই। হয়রানি করার জন্য মিথ্যা অভিযোগে মামলায় আমার নাম দেওয়া হয়েছে। মামলায় যে ঘটনাস্থল দেখানো হয়েছে, সেখানে আমি গত দশ বছরেও একবার যাইনি। ষড়যন্ত্রমূলক এ মামলা থেকে আমি অভ্যাহতি চাই।’
ঝালকাঠির ঠিকাদার মো. নাসির উদ্দিন খান বলেন, ‘আমাকে ষড়যন্ত্রমূলকভাবে মিথ্যা অভিযোগের একটি মামলায় আসামি করা হয়েছে, এটা নিন্দনীয়। আমি কোনো রাজনীতি করি না। রাজনৈতিক মামলায় দলের লোকজন আসামি হবে, সেখানে আমার নাম থাকার কথা নয়।’