আমরা তাদের মুখোশ দেখতে চাই : সৈয়দ শাফায়েত
জাতীয় চার নেতা হত্যা মামলায় পলাতক আসামিদের ফিরিয়ে এনে রায় কার্যকর করার দাবি জানিয়েছেন শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলামের ছেলে মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ শাফায়েত ইসলাম।
জেলহত্যা দিবস উপলক্ষে আজ শনিবার ঢাকার পুরোনো কেন্দ্রীয় কারাগারে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও জাতীয় চার নেতার প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা জানানো শেষে সৈয়দ শাফায়েত এ দাবি জানান।
১৯৭৫ সালের আজকের দিনে জাতীয় চার নেতা- সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দিন আহমেদ, ক্যাপ্টেন মনসুর আলী ও এ এইচ এম কামরুজ্জামানকে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের ভেতর নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় এই চার নেতা বঙ্গবন্ধুর অনুপস্থিতিতে নেতৃত্ব দিয়ে দেশের বিজয় ছিনিয়ে আনেন। তারা মুজিবনগর সরকার গঠনে বিশেষ ভূমিকা রেখেছিলেন। মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্ব দেওয়া এই সরকারের ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতি ছিলেন সৈয়দ নজরুল ইসলাম। সেই সঙ্গে তাজউদ্দিন আহমেদ প্রধানমন্ত্রী, ক্যাপ্টেন মনসুর আলী অর্থমন্ত্রী এবং এ এইচ এম কামরুজ্জামান স্বরাষ্ট্র, ত্রাণ ও পুনর্বাসনমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
আজ বাবার কবরে শ্রদ্ধা জানাতে গিয়েছিলেন জাতীয় নেতা সৈয়দ নজরুল ইসলামের ছেলে মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ শাফায়েত ইসলামসহ আওয়ামী লীগের নেতারা।
বাবার হত্যাকারীদের শাস্তির দাবি জানিয়ে সৈয়দ শাফায়েত ইসলাম বলেন, ‘ঘাতকদের শাস্তি হয় নাই, বিদেশে অবস্থান করছে। তাদের যেকোনোভাবেই হোক, দেশে এনে বিচার করা হোক। পর্দার অন্তরালে কারা ছিল, খলনায়ক কারা, আমরা তাদের মুখোশ দেখতে চাই। আমরা তাদের জানতে চাই এবং জাতি এদের বিচার চায়।’
এদিকে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের পক্ষে আজ কারাগারে জাতীয় চার নেতার প্রতি ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল, স্থানীয় সংসদ সদস্য হাজি সেলিম, সাবেক সংসদ সদস্য ও বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএ) সভাপতি ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন, আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলসহ অন্যরা।
পরে কারাগারের যে সেলে জাতীয় চার নেতাকে হত্যা করা হয়েছিল সেখানে মিলাদ মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ তাঁর পরিবারের সদস্য এবং জাতীয় চার নেতার মাগফিরাত কামনা করে দোয়া করা হয়।
জাতীয় চার নেতাকে হত্যার ঘটনায় ২০০৪ সালের ২০ অক্টোবর ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালত আসামি রিসালদার মোসলেম উদ্দিন (পলাতক), দফাদার মারফত আলী শাহ (পলাতক) ও দফাদার আবুল হাশেম মৃধাকে (পলাতক) মৃত্যুদণ্ড দেন। এ ছাড়া বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলায় মৃত্যুদণ্ড পাওয়া চার আসামি সেনা কর্মকর্তা সৈয়দ ফারুক রহমান, সুলতান শাহরিয়ার রশিদ খান, বজলুল হুদা ও এ কে এম মহিউদ্দিন আহমেদসহ ১২ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন বিচারিক আদালত। আর সাবেক মন্ত্রী কে এম ওবায়দুর রহমান, শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন, নুরুল ইসলাম মঞ্জুর ও তাহেরউদ্দিন ঠাকুরকে খালাস দেওয়া হয়।
বিচারিক আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করা হলে ২০০৮ সালে হাইকোর্ট মোসলেমের মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখলেও মৃত্যুদণ্ড পাওয়া দুই আসামি মারফত আলী ও হাশেম মৃধাকে খালাস দেন। এ ছাড়া যাবজ্জীবন কারাদণ্ড পাওয়া ফারুক, শাহরিয়ার রশিদ, বজলুল হুদা ও এ কে এম মহিউদ্দিন আহমেদকেও খালাস দেন হাইকোর্ট।
পরে হাইকোর্টের এ রায়ের বিরুদ্ধে সরকার আপিল করলে ২০১৩ সালের ৩০ এপ্রিল আপিল বিভাগ হাইকোর্টের দেওয়ার রায় বাতিল করে বিচারিক আদালতের রায় বহাল রাখেন।
ওই রায়ের প্রায় পৌনে তিন বছর পর ২০১৫ সালের ১ ডিসেম্বর জেলখানায় জাতীয় চার নেতা হত্যা মামলায় দুই আসামির মৃত্যুদণ্ড বহাল রেখে আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ রায় সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হয়।