দীর্ঘদিনের দূরত্ব, চাইলে আবারও সংলাপ হবে : ওবায়দুল কাদের
একজন প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সংলাপকে বাংলাদেশের ‘ইতিহাসে নজিরবিহীন ঘটনা’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেছেন, ‘জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট চাইলে ছোট পরিসরে আবারও সংলাপ হতে পারে, প্রধানমন্ত্রীর দরজা সব সময় খোলা।’
আজ শুক্রবার সকালে মুন্সীগঞ্জের শ্রীনগর উপজেলা দোগাছির সার্ভিস এরিয়া-১ এলাকায় পদ্মা সেতুর ভিজিটরস সেন্টার উদ্বোধন শেষে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এ কথা বলেন।
গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট এবং আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ১৪ দলের নেতারা গণভবনে সংলাপে অংশ নেন। সংলাপ থেকে বেরিয়ে ঐক্যফ্রন্টের নেতারা বলেছেন, সংলাপে তাঁরা কোনো সমাধান পাননি।
আজ সকালে গণমাধ্যমকর্মীরা বিষয়টি আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের সামনে উত্থাপন করেন। এ সময় তিনি বলেন, ‘সংলাপের বিষয়ে আমরা আশাবাদী। অপজিশন কীভাবে রিঅ্যাক্ট করে, এটা তাদের ব্যাপার। আমি তো মনে করি না, এখানে ব্যর্থতার কিছু আছে। শুরুটা ভালো হয়েছে। তাদের সাত দফার তিনটি বিষয়ে আমাদের কোনো বাধা-আপত্তি থাকবে না।’
সেতুমন্ত্রী বলেন, ‘শেখ হাসিনা স্পষ্ট করে বলেছেন, এ বিষয়ে আমাদের কোনো আপত্তি নেই। দীর্ঘদিনের লং গ্যাপ, ডিসটেন্স। এই লং ডিসটেন্স এটাকে রাতারাতি, ওভারনাইট ম্যাজিক্যাল ট্রান্সফরমেশন সম্ভব না, ক্লোজ করাও সম্ভব না। কিন্তু গতকাল কিছু বিষয়ে ইতিবাচক অগ্রগতি হয়েছে। বিএনপি নেতাকর্মীদের যাদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা ও মামলা আছে, ক্রিমিনাল অফেন্স ছাড়া শুধু রাজনৈতিক কারণে তাদের বিরুদ্ধে মামলা হয়, তাহলে তাদের আমার কাছে তালিকা পাঠাতে বলেছি। এ তালিকা অনুযায়ী সুষ্ঠু তদন্ত করা হবে।’
ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘সংলাপ ৮ নভেম্বর পর্যন্ত হবে। আলোচনা হয়। কেউ কেউ দু-তিনবার বক্তব্য রেখেছেন। ভালো আলোচনা হয়েছে। তাঁরা চাইলে আবারও আলোচনা হতে পারে। দূরত্বটা বহু দিনের। টানাপড়েনের ক্ষেত্রে ২১ আগস্ট, ১৫ আগস্ট আছেই। সেনসিটিভ কিছু ইস্যু। ১৫ আগস্টের প্রতি আমাদের আবিষ্টতা আছে। ২১ আগস্ট বিএনপি আমলে নৃশংস ঘটনা ঘটে, বেগম আইভি রহমানসহ ২২টি প্রাণ ঝরে গেছে। তারপরও আমরা কম্প্রোমাইজ করেছি। পলিটিকস শুড বি কম্প্রোমাইজড অ্যাডজাস্ট। আমরা জানি, ’৭৫-এর ১৫ আগস্ট বর্বরোচিতভাবে জাতির পিতা হত্যা করা হয়েছে। সেখানে হত্যাকারীকে যারা পুরস্কৃত করেছেন এবং যারা তাদের পঞ্চম সংশোধনী করে হত্যাকারীদের বিচার হবে না, এই রকম বিষয় অন্তর্ভুক্ত করেছিল সংবিধানে। তারপরও আমরা পলিটিকস করি, একটি ওয়ার্কিং আন্ডারস্ট্যান্ডিং থাকা আবশ্যক।’
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আরো বলেন, ‘খালেদা জিয়ার সন্তান কোকোর মৃত্যুর পর শেখ হাসিনা ছুটে গিয়েছিলেন কোকোর মাকে সান্ত্বনা দিতে। কিন্তু সেখানে মূল ফটক, ভেতরের দরজা বন্ধ। প্রধানমন্ত্রী অপমানজনকভাবে ফিরে আসলেন। বেগম জিয়া দেখা করলেন না। শুধু দেখা করাই নয়, দরজাই বন্ধ করে দিলেন। সেখান থেকে সম্পর্কের তিক্ততা কোথায় গিয়ে পৌঁছাতে পারে এবং আমাদের আচ্ছন্নতা কোথায় গিয়ে পৌঁছাতে পারে। ১৫ ও ২১ আগস্ট এসব তিক্তবিরক্ত বিষয় ঘটে গেছে।’
‘বাংলাদেশের ইতিহাসে সর্বপ্রথম একজন প্রধানমন্ত্রী অপজিশনের সঙ্গে সংলাপ করেছেন। এটি বাংলাদেশে নজিরবিহীন ঘটনা। ঐক্যফ্রন্টের সংলাপে সাড়া দেওয়া। আমরা দলের লোকজন এই বিষয়টি ভাবতে পারেনি। আমাদের মধ্যে ভিন্নমত ছিল বিএনপির ব্যাপারে, থাকাটাও খুব স্বাভাবিক। তারপরও আমরা প্রধানমন্ত্রীর সিদ্ধান্ত মেনে নিয়েছি। আমাদের সবার আস্থা আছে নেত্রীর ওপর। তিনি যা করবেন, জাতীয় স্বার্থে করবেন। তিনি নিজের ওপর কী অপমান, তার জীবনের ওপর অ্যাটেম্প এগুলো ভুলে গিয়ে জাতীয় স্বার্থকে, গণতন্ত্রের ধারাকে অব্যাহত রাখার ওপর সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিয়েছেন। তারা যদি চান ছোট পরিসরে আবারও আলোচনা হতে পারে। এ ব্যাপারে তাদের সিদ্ধান্তের ওপর শেখ হাসিনা ছেড়ে দিয়েছেন, তাঁরা যদি চান তাহলে আমাদের জানাতে পারেন। প্রধানমন্ত্রী বলছেন, আমার দরজা খোলা, তারা যদি আবার আসতে চান।’
বিএনপি, জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়া, জেএসডি ও নাগরিক ঐক্য নিয়ে গত ১৩ অক্টোবর জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের আত্মপ্রকাশ ঘটে। নতুন জোটের সাত দফা দাবির মধ্যে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের লক্ষ্যে সরকারের পদত্যাগ, জাতীয় সংসদ বাতিল, সব রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনা সাপেক্ষে নির্বাচনকালীন নির্দলীয়-নিরপেক্ষ সরকার গঠন এবং সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াসহ সব রাজবন্দির মুক্তি ও মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার নিশ্চিত করার পাশাপাশি গ্রহণযোগ্য ব্যক্তিদের সমন্বয়ে নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন ও নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার না করার নিশ্চয়তা প্রদানের কথাও বলা হয়েছে। এসব দাবির পরিপ্রেক্ষিতে সরকারের সঙ্গে সংলাপ হয় ঐক্যফ্রন্টের।
সেই সংলাপ থেকে বেরিয়ে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘আমরা দীর্ঘ সময় আমাদের দাবিগুলো নিয়ে আলোচনা করেছি। বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মামলার বিষয় তুলে ধরে তাঁর মুক্তির দাবিও করেছি। কিন্তু সে বিষয়ে আমরা সেখানে কোনো সদুত্তর পাইনি।’
বিএনপির মহাসচিব আরো বলেন, ‘সংসদ ভেঙে দেওয়াসহ আমাদের দাবিগুলো নিয়ে আলোচনা করেছি। কিন্তু সেখানে কোনো সুনির্দিষ্ট কোনো সমাধান পাইনি। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, এসব বিষয় নিয়ে আরো আলোচনা হবে।’
অন্যদিকে ড. কামাল হোসেন বলেছেন, ‘আমরা তিন ঘণ্টা গণভবনে ছিলাম। সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা থেকে রাত সাড়ে ১০টা পর্যন্ত টানা আলোচনা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী সংলাপের শুরুতে লম্বা বক্তব্য দিয়েছেন; কিন্তু আমরা সেখান থেকে কোনো সমাধান খুঁজে পাইনি।’
এরপর ৫ নভেম্বর সংলাপ হবে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ও সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের নেতৃত্বাধীন জাতীয় পার্টির নেতাদের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনার।