চোখ গণভবনে, আলোচনায় সংলাপ
আগামী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন জোটের সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর আনুষ্ঠানিক সংলাপ আজ থেকে শুরু হচ্ছে। প্রথম দিন বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে সংলাপে অংশ নিতে যাচ্ছেন বিএনপিসহ চারটি রাজনৈতিক দলের মোর্চা আলোচিত জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতারা।
এই সংলাপকে ঘিরে এরই মধ্যে সারা দেশে রাজনৈতিক অঙ্গনে এক ধরনের নির্বাচনী হাওয়া লেগেছে। বিশেষত নির্বাচন, নির্বাচনী প্রক্রিয়া, নির্বাচনী পরিবেশসহ অন্যান্য বিষয় ঘিরে দীর্ঘদিন ধরে যে রাজনৈতিক সংকট বিরাজ করছে সরকার ও রাজপথে থাকা বিরোধী দলগুলোর মধ্যে; সংলাপের মধ্য দিয়ে সেই সমস্যা সমাধানের পথ বের হবে কি না—সে প্রশ্নই এখন ঘুরেফিরে আসছে সাধারণ মানুষের মধ্যে। সংলাপ সফল হবে, নাকি শুধু আলোচনার নামান্তর হবে—এ নিয়ে উত্তেজনাও আছে রাজনৈতিক দল ও বিশ্লেষকদের মধ্যে।
আজ সন্ধ্যায় গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের ১৬ জন এবং আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ১৪ দলের ২১ নেতা গণভবনে সংলাপে বসছেন।
এরই মধ্যে গতকাল বুধবার আজকের সংলাপ নিয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ‘আমাদের পক্ষ থেকে আমরা অত্যন্ত আন্তরিকতা ও খোলা মন নিয়ে সংলাপে বসব। সংলাপের মাধ্যমে গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের একটি পথ তৈরি হবে। সংলাপের বিষয়টি আন্তর্জাতিক মহলও বেশ ভালোভাবে নিয়েছে। তারা খুশি।’ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগে প্রধানমন্ত্রী আরো কয়েকটি রাজনৈতিক দলের সঙ্গেও সংলাপে বসবেন বলে এরই মধ্যে জানানো হয়েছে।
আবার বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর গতকাল দুপুরেই এক অনুষ্ঠানে বলেছেন, ‘একদিকে সরকার সংলাপের আমন্ত্রণ জানিয়েছে, অন্যদিকে খালেদা জিয়াকে বন্দি করে রেখেছে। এ দুটি একে অপরের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। এতে সংলাপের আন্তরিকতা প্রমাণ করে না। আপনারা যদি সত্যিই একটি সুষ্ঠু নির্বাচন চান, তাহলে সাত দফা দাবি পুরোপুরি মেনে নিতে হবে। সবার আগে দেশনেত্রী খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিতে হবে। তাঁর মুক্তি ছাড়া দেশে কোনো নির্বাচন অর্থবহ হবে না।’
গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেন গতকালই এক অনুষ্ঠানে এ বিষয়ে বলেছেন, ‘জনগণের ঐক্যের ফলে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে সংলাপের পরিবেশ তৈরি হয়েছে। এই সংলাপের সফলতা ঐক্যবদ্ধভাবে ধরে রাখতে হবে। যাতে কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর কাছে সংলাপের সফলতা জিম্মি হতে না পারে।’
সংলাপ শেষে গণভবনে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতাদের নৈশভোজের জন্যও আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। যদিও ফ্রন্টের নেতা মাহমুদুর রহমান মান্না গতকাল সন্ধ্যায় জানিয়েছেন, তাঁরা সংলাপে যাচ্ছেন, তবে নৈশভোজে অংশ নিচ্ছেন না।
বিএনপি, জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়া, জেএসডি ও নাগরিক ঐক্য নিয়ে গত ১৩ অক্টোবর জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের আত্মপ্রকাশ ঘটে। সেদিন জাতীয় প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে করে এই ঘোষণা দেওয়া হয়। নতুন জোটের আহ্বায়ক করা হয় গণফোরামের সভাপতি ও সংবিধান বিশেষজ্ঞ ড. কামাল হোসেনকে। নতুন জোটের পক্ষে সাত দফা দাবি ও ১১ দফা লক্ষ্য ঘোষণা করেন নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না।
এই সাত দফা দাবির মধ্যে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের লক্ষ্যে সরকারের পদত্যাগ, জাতীয় সংসদ বাতিল, সব রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনা সাপেক্ষে নির্বাচনকালীন নির্দলীয়-নিরপেক্ষ সরকার গঠন এবং সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াসহ সব রাজবন্দির মুক্তি ও মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার নিশ্চিত করার পাশাপাশি গ্রহণযোগ্য ব্যক্তিদের সমন্বয়ে নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন ও নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার না করার নিশ্চয়তা প্রদানের কথাও বলা হয়েছে।
এসব দাবির পরিপ্রেক্ষিতে সরকারের সঙ্গে সংলাপের আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি দিয়েছিলেন ঐক্যফ্রন্টের আহ্বায়ক ড. কামাল হোসেন। তাঁর এই আহ্বানে সাড়া দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। সংলাপের আমন্ত্রণ জানিয়ে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের আহ্বায়ক ও গণফোরামের সভাপতি ড. কামাল হোসেনকে চিঠি দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা। এই পরিপ্রেক্ষিতে আজ সন্ধ্যায় গণভবনে এই সংলাপ হবে।
এরই ধারাবাহিকতায় আগামীকাল শুক্রবার সন্ধ্যায় আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলের সঙ্গে গণভবনে সংলাপে বসবে সাবেক রাষ্ট্রপতি ডা. এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন বিকল্পধারা।
এর পর ৫ নভেম্বর সংলাপ হবে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ও সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের নেতৃত্বাধীন জাতীয় পার্টির নেতাদের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনার।