সাত বছর পর মেয়র লোকমান হত্যার ‘পরিকল্পনাকারী’ গ্রেপ্তার
নরসিংদীর পৌর মেয়র ও শহর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক লোকমান হোসেন হত্যাকাণ্ডের পরিকল্পনাকারী হিসেবে চিহ্নিত আসামি মোবারক হোসেন মোবাকে গ্রেপ্তার করেছে নরসিংদী জেলা গোয়েন্দা পুলিশ।
গতকাল মঙ্গলবার রাত ১১টার দিকে রাজধানীর ডিওএইচএস এলাকার একটি বাসা থেকে মোবারককে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে তাঁকে নরসিংদী গোয়েন্দা পুলিশের হেফাজতে নিয়ে যাওয়া হয়। এরপর মোবারকের দেওয়া তথ্য মতে, তাঁর বাসা থেকে দুটি বিদেশি পিস্তল ও সাতটি গুলি উদ্ধার করে পুলিশ।
এই গ্রেপ্তার অভিযান চালান গোয়েন্দা পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) রুপম কুমার সরকার ও সহকারী উপপরিদর্শক জাকারিয়া।
এ সময় মোবারকের সঙ্গে রেহানুল ইসলাম ভূইয়া লেলিন নামের আরেকজনকে আটক করা হয়। তিনি অন্য আরেকটি মামলার গ্রেপ্তারি পরোয়ানাভুক্ত আসামি বলে জানিয়েছে পুলিশ।
এদিকে আজ বুধবার বিকেলে অস্ত্র আইনের মামলায় নরসিংদীর মুখ্য বিচারিক হাকিম রাকিবুল ইসলামের আদালতে মোবারককে হাজির করে ১০ দিনের রিমান্ডের আবেদন করে পুলিশ। পরে আদালত দুইদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
এদিকে, আগামীকাল ১ নভেম্বর মেয়র লোকমান হত্যাকাণ্ডের সাত বছর পূর্ণ হবে। স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী ও লোকমানের পরিবারের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ২০১১ সালের ১ নভেম্বর পৌর মেয়র লোকমান হোসেনকে জেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে গুলি করে হত্যা করে সন্ত্রাসীরা।
ওই ঘটনায় নিহতের ভাই কামরুজ্জামান বাদী হয়ে তৎকালীন ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী রাজিউদ্দিন আহমেদের ছোট ভাই সালাহউদ্দিন আহমেদ বাচ্চুসহ ১৪ জনকে আসামি করে হত্যা মামলা করেন। ওই মামলার অভিযোগপত্রে মোবারক হোসেন মোবাকে হত্যাকাণ্ডের পরিকল্পনাকারী হিসেবে বলা হয়। মোবারক ওই মামলার গ্রেপ্তারি পরোয়ানাভুক্ত আসামি।
জানা যায়, মোবারক হোসেন মোবা মেয়র লোকমান হোসেন হত্যাকাণ্ডের এক সপ্তাহ আগে মালয়েশিয়া চলে যান। এত দিন তিনি আত্মগোপন করেছিলেন। গত ২৫ অক্টোবর তিনি দুবাই থেকে দেশে ফিরেন।
নরসিংদী জেলা গোয়েন্দা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকতা (ওসি) গোলাম মোস্তফা বলেন, ‘মোবা এত দিন পলাতক ছিলেন। আমরা সবসময় উনাকে নজরদারিতে রাখছিলাম। এরই ধারাবাহিকতায় তথ্য প্রযুক্তির সহায়তা ও আমাদের সোর্সের দেওয়া তথ্যের মাধ্যমে রাজধানীর ডিওএইচএসের একটি বাসা থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়।’
নরসিংদীর পুলিশ সুপার সাইফুল্লাহ আল মামুন বলেন, ‘আইন অনুযায়ী মোবারকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ইতিমধ্যে তাঁর বিরুদ্ধে অস্ত্র আইনে মামলা করা হয়েছে। তাঁকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।’
এদিকে, মামলার বাকি ১৩ আসামির সবাই গ্রেপ্তার হলেও পরে জামিনে বেরিয়ে আসেন। পরে পুলিশ প্রায় আট মাস তদন্ত করে ২০১২ সালের ২৪ জুন সালাউদ্দিনসহ এজাহারভুক্ত ১১ আসামিকে মামলা থেকে বাদ দেয়।
পরে এই মামলার এজাহারভুক্ত তিন নম্বর আসামি শহর আওয়ামী লীগের সাবেক কোষাধ্যক্ষ মোবারক হোসেন মোবা, এজাহারভুক্ত দুই নম্বর আসামি নরসিংদী পৌরসভার সাবেক চেয়ারম্যান, জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সহসভাপতি আবদুল মতিন সরকার ও তাঁর ছোট ভাই শহর যুবলীগের সভাপতি আশরাফুল ইসলাম সরকারসহ ১২ জনকে আসামি করে অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ।
পুলিশের দেওয়া এই অভিযোগপত্রের প্রতি অনাস্থা জানিয়ে ২০১২ সালের ২৪ জুলাই নরসিংদীর মুখ্য বিচারিক হাকিম আদালতে নারাজি দেন মামলার বাদী কামরুজ্জামান কামরুল। আদালত ২৫ জুলাই নারাজি আবেদন খারিজ করে অভিযোগপত্র বহাল রাখেন। পরে ২৮ আগস্ট নারাজি আবেদন খারিজের বিরুদ্ধে জেলা ও দায়রা জজ আদালতে আপিল করেন বাদী। আদালত ২ সেপ্টেম্বর সেই আবেদন গ্রহণ করে ৪ নভেম্বর শুনানি শেষে ফের নারাজি আবেদন খারিজ করেন। এরপর উচ্চ আদালতে যান বাদী।
কামরুজ্জামান ওই অভিযোগপত্র বাতিল করে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) মাধ্যমে আবার তদন্তের দাবি জানিয়ে নিম্ন আদালতে বিচারকার্য স্থগিত রাখতে রিট পিটিশন দাখিল করেন। আদালত বাদীর আবেদনটি আমলে নিয়ে নিম্ন আদালতে বিচারকার্য স্থগিত করে দেন।
প্রয়াত মেয়র লোকমান হোসেনের ছোট ভাই নরসিংদী শহর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও নরসিংদী পৌর মেয়র কামরুজ্জামান বলেন, ‘আমার বড় ভাই লোকমান হোসেন হত্যাকাণ্ডের মূল পরিকল্পনাকারী মোবারক হোসেন মোবাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এটি নরসিংদীবাসীর জন্য কতটা আনন্দের তা বলে বোঝানো যাবে না। তাও আবার লোকমান ভাইয়ের সপ্তম মৃত্যুবার্ষিকীর দুইদিন আগে। এখন লোকমান হত্যার আসল খুনিদের নাম বেরিয়ে আসবে। মোবারককে ভালো করে জিজ্ঞাসাবাদ করলে তিনি সব তথ্য পুলিশকে দিবে। সঠিকভাবে তদন্ত করলে লোকমান হত্যার বিচার দ্রুত শেষ হবে এবং খুনিরা শাস্তি পাবে।’