খালেদা জিয়াকে বন্দি রেখে সংলাপ ফলপ্রসূ হবে না
বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে কারাগারে রেখে সংলাপের আমন্ত্রণ একে অপরের সঙ্গে সাংঘর্ষিক বলে মন্তব্য করেছেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, খালেদা জিয়াকে কারাগারে রেখে সংলাপ ফলপ্রসূ হবে না। এতে সরকারের সংলাপের আন্তরিকতা প্রমাণ করে না।
আজ বুধবার দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সাজা বৃদ্ধির প্রতিবাদ ও মুক্তির দাবিতে আয়োজিত মানববন্ধন কর্মসূচিতে মির্জা ফখরুল এসব কথা বলেন।
বিএনপি নেতা বলেন, ‘খালেদা জিয়াকে অত্যন্ত সুপরিকল্পিতভাবে নির্বাচন থেকে দূরে রাখতে মিথ্যা মামলায় কারাগারে আটক করে রেখেছে। জামিন পেলেও তাঁকে মুক্তি দেওয়া হয়নি। সেই মামলার সাজা বৃদ্ধি করা হয়েছে। এমতাবস্থায় খালেদা জিয়াকে কারাগারে রেখে সংলাপ ফলপ্রসূ হবে না।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘একদিকে সরকার সংলাপের আমন্ত্রণ জানিয়েছে, অন্যদিকে খালেদা জিয়াকে বন্দি করে রেখেছে। এ দুটি একে অপরের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। এতে সংলাপের আন্তরিকতা প্রমাণ করে না।’
‘আপনারা যদি সত্যিই একটি সুষ্ঠু নির্বাচন চান, তাহলে সাত দফা দাবি পুরোপুরি মেনে নিতে হবে। সবার আগে দেশনেত্রী খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিতে হবে। তাঁর মুক্তি ছাড়া দেশে কোনো নির্বাচন অর্থবহ হবে না,’ যোগ করেন ফখরুল।
মির্জা ফখরুল বলেন, সরকার বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে অত্যন্ত সুপরিকল্পিতভাবে রাজনীতি থেকে দূরে সরিয়ে রাখতে এবং আসন্ন নির্বাচনে যাতে অংশ নিতে না পারে, সে জন্য মিথ্যা মামলা দিয়ে তাঁকে সাজা দিয়ে কারাগারে আটক রেখেছে। জামিন পেলেও তাঁকে জামিন দেওয়া হয়নি। একটার পর একটা মিথ্যা মামলা দিয়ে তাঁকে কারাগারে আটক রাখা হয়েছে।
‘আজকে এ থেকেই প্রমাণিত হয়, একদিকে সরকার সংলাপের আমন্ত্রণ পাঠিয়েছে, অন্যদিকে দেশনেত্রী খালেদা জিয়ার সাজা বৃদ্ধি করা—এ দুটো সাংঘর্ষিক। এটা কখনোই গণতান্ত্রিক কোনো আচরণের প্রতিফলন ঘটায় না। এতে সংলাপের যে আন্তরিকতা, সে আন্তরিকতা প্রমাণ করে না।’
ভোটাধিকার ও গণতান্ত্রিক অধিকার ফিরিয়ে আনতে বিএনপি আন্দোলন করছে জানিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘দেশনেত্রী খালেদা জিয়া এই বয়সে অসুস্থ অবস্থায় কারাবরণ করছেন শুধু গণতন্ত্র ও মানুষের অধিকার ফিরিয়ে দেওয়ার আন্দোলন করার জন্য। আমরা সরকারকে বলতে চাই, বাংলাদেশের মানুষ গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে। ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধ করেছি এই গণতন্ত্রের জন্য। আজকে এই গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে যারা আত্মাহুতি দিয়েছে, তাদের রক্তের বিনিময়ে ও দেশনেত্রী খালেদা জিয়াকে কারাগারে রেখে কোনো সংলাপ বা নির্বাচন ফলপ্রসূ হবে না।’
সরকারকে গণতন্ত্রের পথে ফিরে আসার আহ্বান জানিয়ে বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘গণতান্ত্রিক পরিবেশ তৈরি করুন। নির্বাচন দিচ্ছেন… কিন্তু সেই নির্বাচনে একতরফাভাবে হেলিকপ্টারে করে জনগণের কাছে যাচ্ছেন আর আমাদের নেত্রী কারাগারে, আমরা পালিয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছি, আমাদের কর্মীরা দাঁড়াতে পারছে না। এ অবস্থায় কখনো সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচন হতে পারে না। সে জন্য আমরা বলেছি, আমাদের সাত দফা দাবি পুরোটাই মেনে নিতে হবে। সবার আগে এই সরকারকে পদত্যাগ করতে হবে, সংসদ বাতিল করতে হবে এবং নির্বাচন কমিশনকে পুনর্গঠন করে অবাধ নির্বাচন দিতে হবে। জনগণের চাহিদা পূরণ করতে হবে। ইভিএম ব্যবহার করা যাবে না। সর্বপ্রথম খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিতে হবে। তাঁর মুক্তি না হলে কোনো নির্বাচন অর্থবহ হবে না।’
বিচার ব্যবস্থা সম্পূর্ণরূপে সরকারের করায়ত্ত হয়ে গেছে দাবি করে মির্জা ফখরুল আরো বলেন, ‘সাবেক বিচারপতি এস কে সিনহা সাহেব বলে গেছেন, বাংলাদেশের বিচার ব্যবস্থা সম্পূর্ণরূপে সরকারের করায়ত্ত। এখানে বিচার বিভাগের কোনো স্বাধীনতা নেই। এ জন্য তাঁকে জোর করে দেশ থেকে বের করে দেওয়া হয়েছে।’
মিজা ফখরুল নেতাকর্মীদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে চলমান সংগ্রামকে আরো সুসংহত করতে এবং খালেদা জিয়াকে মুক্ত করে সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচনের দাবি আদায়ে আন্দোলনে এগিয়ে আসতে হবে।
মানববন্ধনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘সরকার খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানকে বাদ দিয়ে ২০১৪ সালের মতো নির্বাচন করতে চায়। কিন্তু বিএনপিকে ছাড়া কোনো নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক হবে না, হতে দেওয়াও হবে না।’
জাতীয় ঐক্যফ্যন্টের সাত দফা দাবি মেনে নিয়ে একটি অবাধ নির্বাচনের আয়োজন করতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘তা না হলে সৃষ্ট অরাজকতার জন্য অস্থিতিশীলতার জন্য সরকার দায়ী থাকবে।’
মানববন্ধনে বিএনপি নেতাদের মধ্যে ড. আবদুল মঈন খান, ভাইস চেয়ারম্যান সেলিমা রহমান, বরকত উল্লাহ বুলু, মো. শাজাহান, আলতাফ হোসেন চৌধুরী, রুহুল আলম চৌধুরী, আবদুল আউয়াল মিন্টু, ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আমান উল্লাহ আমান, আবদুস সালাম, আবুল খায়ের ভূঁইয়া, যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুল হক মিলন, বিশেষ সম্পাদক আসাদুজ্জামান রিপন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
বিএনপি, জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়া, জেএসডি ও নাগরিক ঐক্য নিয়ে গত ১৩ অক্টোবর জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের আত্মপ্রকাশ ঘটে। সেদিন জাতীয় প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে করে এই ঘোষণা দেওয়া হয়। নতুন জোটের আহ্বায়ক করা হয় গণফোরামের সভাপতি ও সংবিধান বিশেষজ্ঞ ড. কামাল হোসেনকে। নতুন জোটের পক্ষে সাত দফা দাবি ও ১১ দফা লক্ষ্য ঘোষণা করেন নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না।
এই সাত দফা দাবির মধ্যে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের লক্ষ্যে সরকারের পদত্যাগ, জাতীয় সংসদ বাতিল, সব রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনা সাপেক্ষে নির্বাচনকালীন নির্দলীয়-নিরপেক্ষ সরকার গঠন এবং সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াসহ সব রাজবন্দির মুক্তি ও মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার নিশ্চিত করার পাশাপাশি গ্রহণযোগ্য ব্যক্তিদের সমন্বয়ে নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন ও নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার না করার নিশ্চয়তা প্রদানের কথাও বলা হয়েছে।
এসব দাবির পরিপ্রেক্ষিতে সরকারের সঙ্গে সংলাপের আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি দিয়েছিলেন ঐক্যফ্রন্টের আহ্বায়ক ড. কামাল হোসেন। তাঁর এই আহ্বানে সাড়া দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। সংলাপের আমন্ত্রণ জানিয়ে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের আহ্বায়ক ও গণফোরামের সভাপতি ড. কামাল হোসেনকে চিঠি দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা। এই পরিপ্রেক্ষিতে আগামীকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় গণভবনে এই সংলাপ হবে। ঐক্যফ্রন্ট এরই মধ্যে জানিয়েছে, তাদের ১৬ জনের একটি প্রতিনিধি দল সংলাপে অংশ নেবে। এই সংলাপ নিয়ে রাজনৈতিক মহলে আলোচনা তুঙ্গে রয়েছে।