রায়ের সময় ছিলেন না খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা
জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় রায়ের সময় আদালতে উপস্থিত ছিলেন না খালেদা জিয়ার কোনো আইনজীবী। আজ মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে রায় দেওয়ার সময় দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ও রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীরা হাইকোর্ট বেঞ্চে উপস্থিত থাকলেও খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা অনাস্থা জানিয়ে আদালত বর্জন করেন।
এমনকি খালেদা জিয়ার সাজা পাঁচ বছর থেকে বাড়িয়ে ১০ বছর কারাদণ্ডের আদেশ দেওয়া হলেও তাঁর আইনজীবীরা কোনো ধরনের প্রতিক্রিয়াও জানাননি।
এ বিষয়ে খালেদা জিয়ার আইনজীবী অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘আমরা সিনিয়র আইনজীবীদের সঙ্গে বসে আলোচনা করে রায়ের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিয়ে কথা বলব।’
সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি ও বিএনপি নেতা অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন আরো বলেন, ‘আমরা এখন কোনো কথাই বলতে চাচ্ছি না। আমি বারের প্রেসিডেন্ট। আমাদের সিনিয়র আইনজীবীরা রয়েছেন। তাঁদের সঙ্গে বসে আলোচনা করে দুপুরে প্রতিক্রিয়া জানাব।’
অন্যদিকে রায়ে আপাতত সন্তোষ প্রকাশ করেছেন দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) আইনজীবী অ্যাডভোকেট খুরশীদ আলম খান। বিচারিক আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে খালাস চেয়ে করা আপিলের রায় ঘোষণার পর তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় তিনি এ সন্তোষ প্রকাশ করেন।
এর আগে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় আপিলের শুনানি হওয়া হাইকোর্ট বেঞ্চের ওপর অনাস্থা জানিয়ে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার পক্ষে করা আবেদন গ্রহণ করেনি সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ।
মঙ্গলবার সকাল ৯টার দিকে প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগ অনাস্থা আবেদন গ্রহণ না করে তা খারিজের আদেশ দেন। খালেদা জিয়ার আইনজীবী জয়নুল আবেদীন এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
আদালতে খালেদা জিয়ার ওই আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন তাঁর আইনজীবী এ জে মোহাম্মদ আলী ও জয়নুল আবেদীন। সঙ্গে ছিলেন ব্যারিস্টার এ এম মাহবুব উদ্দিন খোকন, মীর হেলাল, বদরুদ্দোজা বাদল ও নওশাদ জমির প্রমুখ।
আপিল বিভাগে শুনানিকালে খালেদা জিয়ার আইনজীবী এ জে মোহাম্মদ আলী জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় হাইকোর্ট বেঞ্চের (বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমান) প্রতি অনাস্থা জানান। এ সময় প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন তাঁকে উদ্দেশ করে বলেন, ‘আপনারা প্রোপার ওয়েতে (চেম্বার আদালত হয়ে তারপর আপিল বিভাগে) আসেন।’
তখন এ জে মোহাম্মদ আলী বলেন, ‘এমন অনেক নজির (চেম্বার আদালত না হয়ে সরাসরি আপিল বিভাগে আসার) আছে। আগেও এসেছি।’
তবে এরপরও খালেদা জিয়ার অনাস্থা আবেদন গ্রহণ না করে তা ফিরিয়ে দেন আপিল বিভাগ।
পরে আদালত থেকে বেরিয়ে জয়নুল আবেদীন সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা আপিল বিভাগে একটি আবেদন (জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় অর্থের উৎস নিয়ে অধিকতর সাক্ষ্য চেয়ে আবেদন) নিয়ে গিয়েছিলাম। যদিও আদালত আবেদন সরাসরি খারিজ না করে নিষ্পত্তি করে দিয়েছেন। এ সময় আপিল বিভাগ হাইকোর্টকে আমাদের আবেদনটি আজকের মধ্যে নিষ্পত্তি করতে বলেন। আমরা ভেবেছি যে হাইকোর্ট আবেদনটি শুনে আজকে আদেশ দেবেন। কিন্তু হাইকোর্টের কার্যতালিকায় দেখলাম, মামলাটি আজ হাইকোর্টে (বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চে) রায়ের জন্য আছে। আমরা এ অবস্থায় বুঝতেই পারলাম না যে, আমাদের সেই আবেদনের (জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় অর্থের উৎস নিয়ে অধিকতর সাক্ষ্য চেয়ে আবেদন) আদেশ কী হলো? এতে আমরা বুঝতে পারলাম, হাইকোর্ট একতরফাভাবে সব করে যাচ্ছে। আমরা এ জন্য সংক্ষুব্ধ হয়ে আপিল বিভাগে আজ আবেদন করে বলেছি, যেহেতু এই হাইকোর্ট আপনাদের আদেশ পালন না করেই মামলাটি রায়ের জন্য রেখেছে তাই আমরা মনে করি আপিল বিভাগে যথার্থ বিচার পাব। এই কথা বলে আমরা একটি আবেদন নিয়ে গিয়েছিলাম।’
জয়নুল আবেদীন বলেন, ‘এ জে মোহাম্মদ আলী আবেদনটি আপিল বিভাগে উপস্থাপনের চেষ্টা করে আদালতকে বলেছেন, অতীতেও এমন নজির (হাইকোর্টের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে আবেদন) আছে। তারপরও আপিল বিভাগ আমাদের আবেদনটি নেননি। এখানেও আমাদের একটি ব্যথা। আমাদের সব জায়গাতেই ব্যথা। এখানেও আমরা বিচার পাইনি।’
এখন পরবর্তী আইনি পদক্ষেপ কী হবে তা জানতে চাইলে জয়নুল আবেদীন বলেন, ‘আমাদের অনেক সিনিয়র আইনজীবী আছেন। তাঁদের সঙ্গে কথা বলেই পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেব।’