খালেদা জিয়ার সাজায় দুদকের সন্তোষ
জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াসহ চার আসামিকে সাত বছর করে সশ্রম কারাদণ্ড দেওয়ার আদেশে শুকরিয়া আদায় করে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) আইনজীবী মোশাররফ হোসেন কাজল।
আজ সোমবার রায় ঘোষণার পর আদালতের বাইরে উপস্থিত সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে মোশাররফ হোসেন কাজল বলেন, ‘এই মামলায় আদালত খালেদা জিয়াকে সর্বোচ্চ শাস্তি দিয়েছেন। আমরা এতে শুকরিয়া আদায় করে সন্তোষ প্রকাশ করছি। কারণ, মামলা পরিচালনাকারী হিসেবে আমি অনেক বাধার সম্মুখীন হয়েছি। রায়ের পর মনে হয়েছে যেন প্রখর রোদের মধ্যে গোবি মরুভূমি পার হয়েছি।’
এ সময় আইনজীবী বলেন, ‘আজকের রায় ঘোষণার দিন খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা আদালতে উপস্থিত ছিলেন না। এর মাধ্যমে উচ্চতর ও বিচারিক আদালতের নির্দেশের প্রতি তারা অবজ্ঞা প্রদর্শন করেছেন।’
আইনজীবী আরো জানান, প্রসিকিউশন পক্ষের ৩২টি দাখিলকৃত সাক্ষ্যের আলোকে ১৯৪৭ সালের আইনের ৫-এর ২ এবং ১০৯ ধারার আলোকে আসামিদের বিরুদ্ধে চার্জ গঠন করা হয়েছিল। সাক্ষ্য প্রমাণের আলোকে আদালত ১৫টি পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে বলেছেন- রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ পদে থেকে এ ধরনের অবৈধ অর্থ উপার্জন, ক্ষমতার অপব্যবহার করে দলীয় ফান্ড ও বিভিন্ন ব্যক্তির থেকে টাকা নিয়ে এবং বিভিন্ন আসামির সহায়তা নিয়ে এমন কাজ আর কেউ যাতে না করে। আদালত এ সময় বার্তা দিয়ে বলেছেন, যারা ক্ষতায় আছেন তাদের জন্য এবং যারা ক্ষমতায় ছিলেন তাদের জন্যও আইন তার নিজস্ব গতিতে চলবে। এ জন্য এ ধরনের অপরাধ থেকে তাদের দূরে থাকার জন্য আদালত নির্দেশ দিয়েছেন।
‘খালেদা জিয়া প্রধানমন্ত্রী থাকাকালে তথ্য গোপন করে জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলার হিসাব পরিচালনা করেন। পাশাপাশি তিনি ওই ট্রাস্টের টাকা আত্মসাত করেন। এ ছাড়া পার্টি ফান্ড থেকেও দলের কোনো সিদ্ধান্ত ছাড়া তিনি টাকা গ্রহণ করেছিলেন। অর্থ আত্মসাতে খালেদা জিয়াকে তাঁর সচিব হারিছ চৌধুরী, হারিছ চৌধুরীর তখনকার একান্ত সচিব জিয়াউল ইসলাম মুন্না ও ঢাকার সাবেক মেয়র সাদেক হোসেন খোকার একান্ত সচিব মনিরুল ইসলাম খান সহায়তা করেন।’
মোশাররফ হোসেন কাজল বলেন, ‘মেট্রো মেকার্স নামের একটি প্রতিষ্ঠান জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্টের ফান্ডে এক কোটি ৩৫ লাখ টাকা প্রদান করেছে বলে জানানো হয়। তবে ওই প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা আদালতকে জানিয়েছেন তাঁরা এমন কোনো ফান্ডে টাকা অনুদান দেননি।’
আজ দুপুরে জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সাত বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। এ ছাড়া ১০ লাখ টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরো ছয় মাসের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।
আজ সোমবার পুরান ঢাকার কেন্দ্রীয় কারাগারের অস্থায়ী আদালতের বিশেষ জজ ড. আখতারুজ্জামান এ রায় ঘোষণা করেন। মামলার অপর তিন আসামিকেও একই দণ্ড দিয়েছেন আদালত।
এর আগে গত ৮ ফেব্রুয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় খালেদা জিয়াকে পাঁচ বছর কারাদণ্ডাদেশ দেন বিচারিক আদালত। রায় ঘোষণার পর পরই খালেদা জিয়াকে ওই দিন বিকেলে (৮ ফেব্রুয়ারি) নাজিমুদ্দিন রোডের পুরোনো কেন্দ্রীয় কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয়। বর্তমানে তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) চিকিৎসাধীন।
সাবেক প্রধানমন্ত্রী অসুস্থ থাকায় আজ রায়ের সময় আদালতে হাজির ছিলেন না। এমনকি এই মামলার পরিচালনার দায়িত্বে থাকা তাঁর কোনো আইনজীবীও যাননি রায় শুনতে। তবে দুর্নীতি দমন কমিশন ও রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীরা এ দিন আদালতে হাজির ছিলেন।
এই মামলার অন্য তিন আসামি হলেন—খালেদা জিয়ার সাবেক রাজনৈতিক সচিব হারিছ চৌধুরী, হারিছের তখনকার সহকারী একান্ত সচিব ও বিআইডব্লিউটিএর নৌনিরাপত্তা ও ট্রাফিক বিভাগের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক জিয়াউল ইসলাম মুন্না এবং ঢাকার সাবেক মেয়র সাদেক হোসেন খোকার একান্ত সচিব মনিরুল ইসলাম খান। এঁদের মধ্যে হারিছ চৌধুরী পলাতক রয়েছেন। বাকি দুই আসামি আদালতে উপস্থিত ছিলেন।
আদালত আজ এই তিনজনকেও অভিন্ন সাজা দিয়েছেন। এ ছাড়া মামলার পলাতক আসামি হারিছ চৌধুরীর বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে। পাশাপাশি আদালতে উপস্থিত দুই আসামিকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।
জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলার এজাহার থেকে জানা যায়, ২০০৫ সালে কাকরাইলে সুরাইয়া খানমের কাছ থেকে ‘শহীদ জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট’-এর নামে ৪২ কাঠা জমি কেনা হয়। কিন্তু জমির দামের চেয়ে অতিরিক্ত এক কোটি ২৪ লাখ ৯৩ হাজার টাকা জমির মালিককে দেওয়া হয়েছে বলে কাগজপত্রে দেখানো হয়, যার কোনো বৈধ উৎস ট্রাস্ট দেখাতে পারেনি।
জমির মালিককে দেওয়া ওই অর্থ ছাড়াও ট্রাস্টের নামে মোট তিন কোটি ১৫ লাখ ৪৩ হাজার টাকা অবৈধ লেনদেনের তথ্য পাওয়া গেছে।
২০১০ সালের ৮ আগস্ট জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্টের নামে অবৈধভাবে অর্থ লেনদেনের অভিযোগ এনে খালেদা জিয়াসহ চারজনের নামে তেজগাঁও থানায় দুর্নীতির অভিযোগে এ মামলা করেছিলেন দুর্নীতি দমন কমিশনের সহকারী পরিচালক হারুন-অর রশিদ।