পরিবহন ধর্মঘট : ভোর থেকে ভোগান্তি
আট দফা দাবি আদায়ের লক্ষ্যে আজ রোববার সকাল থেকে পরিবহন শ্রমিকদের ৪৮ ঘণ্টার ধর্মঘট চলছে। রাজধানী ঢাকাসহ দেশব্যাপী শুরু হওয়া এই ধর্মঘটে রাস্তাঘাটে গণপরিবহন না থাকায় চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন কর্মস্থলগামী মানুষ। বিশেষ করে নারী ও বৃদ্ধরা চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন।
সড়ক দুর্ঘটনার সব অপরাধ জামিনযোগ্য করা ও সড়কে পুলিশি হয়রানি বন্ধসহ আট দফা দাবিতে শ্রমিকরা পূর্বঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী এই ধর্মঘট পালন করছেন।
রাজধানী ঢাকার গাবতলী, মোহাম্মদপুর, মিরপুর, শাহবাগ, গুলিস্তানসহ বেশ কয়েকটি জায়গায় মানুষকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। রাজধানীর বিভিন্ন রাস্তার মোড়ে হাজারো মানুষের জটলা সকাল থেকে শুরু হয়। এর মধ্যে কিছু পরিবহন শ্রমিককেও দলবেঁধে অবস্থান নিতে দেখা যায়। যাঁরা গণপরিবহন না পেয়ে সিএনজিচালিত অটোরিকশা বা খোলা কার্ভাডভ্যানে গাড়িতে চড়ার চেষ্টা করছিলেন, তাঁদের ভয় দেখানোর চেষ্টা করছিলেন এসব শ্রমিক। গণপরিবহন না থাকায় হেঁটে ও রিকশায় গন্তব্যের দিকে রওনা দিয়েছেন অনেকে।
সরকারি পরিবহন সংস্থা বিআরটিসির বাসও ছিল তুলনামূলকভাবে অল্প। রাজধানীর রাস্তায় ব্যক্তিগত গাড়ি ছাড়া কোনো যানবাহন চলতে দেখা যায়নি। এতে দিনের শুরুতে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন অফিসগামী মানুষ ও স্কুল-কলেজগামী শিক্ষার্থীরা। পরিবহন না পেয়ে মানুষকে অপেক্ষায় থাকতে দেখা গেছে।
রোববার সকালে সায়েদাবাদ বাস টার্মিনাল থেকে কোনো বাস ছেড়ে যেতে দেখা যায়নি। ঢাকা-চট্টগ্রাম রুটের কোনো বাস এখান থেকে ছাড়েনি। রাজধানীর বিভিন্ন জায়গা ঘুরে দেখা গেছে, কোথাও গণপরিবহন বা কাভার্ডভ্যান চলছে না।
এদিকে, রাজধানীর বাইরেও শ্রমিকদের এই ধর্মঘটে ভোগান্তিতে পড়েছেন যাত্রীরা। মালামাল পরিবহনকারী ট্রাক ও কাভার্ডভ্যানও চলাচল না করায় বিপাকে পড়েছেন ব্যবসায়ীরা। চট্টগ্রামসহ রংপুর, নাটোর, ফরিদপুর, নেত্রকোনা, জয়পুরহাট, চুয়াডাঙ্গা ও সিরাজগঞ্জে অভ্যন্তরীণ রুটের কোনো পরিবহন চলাচল করছে না। এ ছাড়া এসব জায়গা থেকে দূরপাল্লার কোনো পরিবহনও ছেড়ে যায়নি।
শ্রমিকরা ‘বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের’ ব্যানারে রোববার সকাল ৬টা থেকে মঙ্গলবার সকাল ৬টা পর্যন্ত ৪৮ ঘণ্টা কর্মবিরতি পালনের ঘোষণা দিয়েছেন।
গতকাল শনিবার সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক ওসমান আলী বলেন, ‘আমাদের দাবি নিয়ে সরকারের সঙ্গে আলোচনা করতে আগ্রহী। যদি দাবি পূরণ করা হয়, তাহলে আমরা ধর্মঘট প্রত্যাহার করব।’
তাঁদের দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে—সড়ক দুর্ঘটনার সব অপরাধ জামিনযোগ্য করা, পাঁচ লাখ টাকা জরিমানার বিধান বাতিল করা, সড়ক দুর্ঘটনায় গঠিত যেকোনো তদন্ত কমিটিতে ফেডারেশনের প্রতিনিধি রাখা, ড্রাইভিং লাইসেন্স পাওয়ার জন্য সর্বনিম্ন শিক্ষাগত যোগ্যতা পঞ্চম শ্রেণি নির্ধারণ এবং সড়কে পুলিশের হয়রানি বন্ধ করা।
এর আগে গত ১২ অক্টোবর শ্রমিক ফেডারেশন সিদ্ধান্ত নেয়, সড়ক পরিবহন আইন সংস্কারসহ আট দফা দাবি ২৭ অক্টোবরের মধ্যে পূরণ না হলে ২৮ অক্টোবর থেকে দুদিনের কর্মবিরতিতে যাবেন শ্রমিকরা।