খালেদা জিয়ার আপিলের রায় কবে, জানা যাবে আজ
জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় খালাস চেয়ে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াসহ অন্য দুই আসামির আপিল ও সাজা বৃদ্ধি চেয়ে দুদকের আবেদনের রায় কবে ঘোষণা করা হবে, তার জন্য আজ দিন নির্ধারণ করা হবে।
আজ বুধবার বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ দিন নির্ধারণ করে এ বিষয়ে আদেশ দেবেন। বিকেল সাড়ে ৩টায় এ বিষয়ে আদেশের জন্য রাখা হয়েছে।
অন্যদিকে খালেদা জিয়ার পক্ষে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলার অর্থের উৎসের বিষয়ে অতিরিক্ত সাক্ষ্য চেয়ে আবেদনের আদেশ না পেয়ে আপিল বিভাগে আবেদন করা হয়েছে।
আজ বুধবার চেম্বার বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীর আদালতে দুপুর দেড়টায় শুনানি হতে পারে বলে জানিয়েছেন খালেদা জিয়ার আইনজীবী ব্যারিস্টার নওশাদ জমির। তিনি বলেন, ‘আমরা চেম্বার আদালতের পর হাইকোর্টে যাব। তবে আমরা আর শুনানিতে অংশ নিচ্ছি না।’
এর আগে মঙ্গলবার এ মামলায় দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ও রাষ্ট্রপক্ষ শুনানি শেষ করে। শুনানিতে দুদক আইনজীবী, বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার পাঁচ বছরের সাজা বৃদ্ধি করে যাবজ্জীবন চান। তবে অ্যাটর্নি জেনারেল পাঁচ বছরের সাজাই বহাল চেয়েছেন। পরে আদালত এ বিষয়ে আদেশের জন্য আজ দিন ধার্য করেন। তবে কোন বিষয়ে আদেশের জন্য রাখা হয়েছে, তা উভয় পক্ষের আইনজীবীরা পরিষ্কার করে কিছু বলতে পারেননি।
ওই দিন বেলা ১১টায় খালেদা জিয়ার আইনজীবী এ জে মোহাম্মদ আলীসহ অন্যরা আদালত থেকে বেরিয়ে যান। বিএনপির চেয়ারপারসনের বিরুদ্ধে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার অর্থের উৎসের বিষয়টি স্পষ্ট করার জন্য অতিরিক্ত সাক্ষ্য গ্রহণ চেয়ে গত সোমবার একটি আবেদন করেন এ জে মোহাম্মদ আলী। ওই আবেদনের ওপর শুনানি শেষে হাইকোর্ট তা নথিভুক্ত করার আদেশ দেন। আদেশে বলা হয়, মূল আপিলের যুক্তিতর্ক শেষে এই আবেদনের বিষয়ে আদেশ দেওয়া হবে।
মঙ্গলবার যুক্তিতর্ক শুরু হওয়ার আগেই এ জে মোহাম্মদ আলী ওই আবেদনের ওপর আদেশ চাইলে আদালত যুক্তিতর্ক শেষে আদেশ দেওয়া হবে বলে জানান। তিনি এ সময় বলেন, ‘তাহলে এই আদেশটিই (নথিভুক্ত করে রাখার আদেশ) দেন, আমরা এর বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে যাব।’ বিচারক তখন বলেন, ‘সে আপনারা যেতে পারেন।’
এ ছাড়া ৩১ অক্টোবরের মধ্যে আপিল নিষ্পত্তির একটা বাধ্যবাধকতা রয়েছে। পরে এ জে মোহাম্মদ আলী বলেন, ‘তাহলে আপিল বিভাগের সিদ্ধান্ত আসা পর্যন্ত মামলার কার্যক্রম মুলতবি রাখা হোক।’ এ পর্যায়ে আদালত তা প্রত্যাখ্যান করলে মোহাম্মদ আলী যুক্তিতর্কে অংশগ্রহণ থেকে বিরত থাকার সিদ্ধান্ত জানিয়ে আদালত ত্যাগ করেন।
পরে অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন, আবদুর রেজাক খান, ব্যারিস্টার এম মাহবুব উদ্দিন খোকন, ব্যারিস্টার নওশাদ জমির, আমিনুল ইসলাম, বদরুদ্দোজা বাদল, এ এইচ এম কামরুজ্জামান, ব্যারিস্টার রাগীব রউফ চৌধুরী, মো. আখতারুজ্জামানসহ অন্য আইনজীবীরা আদালত থেকে বেরিয়ে যান।
গত ৮ ফেব্রুয়ারি বকশীবাজারে কারা অধিদপ্তরের প্যারেড গ্রাউন্ডে স্থাপিত ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৫-এর বিচারক ড. মো. আখতারুজ্জামান মামলাটিতে খালেদা জিয়ার পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেন। একই সঙ্গে খালেদার ছেলে ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসন তারেক রহমান, মাগুরার সাবেক এমপি কাজী সালিমুল হক কামাল, ব্যবসায়ী শরফুদ্দিন আহমেদ, ড. কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী ও মমিনুর রহমানকে ১০ বছর করে কারাদণ্ড দেন আদালত।
রায় ঘোষণার ১১ দিন পর ১৯ ফেব্রুয়ারি বিকেলে রায়ের সার্টিফায়েড কপি বা অনুলিপি হাতে পান খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা। এরপর হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় ২০ ফেব্রুয়ারি তারা এ আবেদন করেন। ২২ ফেব্রুয়ারি খালেদা জিয়ার আপিল শুনানির জন্য গ্রহণ এবং অর্থদণ্ড স্থগিত করে নথি তলব করেন। এরপর ৭ মার্চ অপর আসামি মাগুরার সাবেক এমপি কাজী সালিমুল হক কামালের আপিলও শুনানির জন্য গ্রহণ করেন হাইকোর্ট।
পরে ২৮ মার্চ খালেদার সাজা বাড়ানোর জন্য দুদকের করা আবেদনে রুল দেন হাইকোর্ট। ১০ মে আরেক আসামি শরফুদ্দিনের আপিল শুনানির জন্য গ্রহণ করেন আদালত। এখন তিন আসামির আপিল ও দুদকের আবেদনের রুল আদালতে শুনানি হয়। মামলায় খালেদা জিয়াকে ১২ মার্চ হাইকোর্ট চার মাসের জামিন দেন। পরবর্তী সময়ে কয়েক দফা তাঁর জামিনের মেয়াদ বাড়ানো হয়। গত ২৩ অক্টোবর পযন্ত খালেদা জিয়ার জামিন হলেও পরে আর মেয়াদ বাড়ানো হয়নি। আগামী ৩১ অক্টোবরের মধ্যে আপিলটি নিষ্পত্তির নির্দেশনা রয়েছে।