১৭ জনের জীবন বাঁচানো সুমন-শাহনাজকে পুরস্কার
পাবনার চলনবিলে নৌকাডুবির ঘটনায় জীবন বাজি রেখে ১৭ জনের জীবন বাঁচিয়েছিলেন দুজন সাহসী মানুষ। সেই সাহসী কিশোর মো. সুমন হোসেন ও গৃহবধূ শাহনাজ খাতুনকে পুরস্কৃত করল পাবনা জেলা প্রশাসন।
আজ সোমবার সকালে পাবনা জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে শাহনাজকে ২৫ হাজার টাকা পুরস্কার দেওয়া হয়। এ ছাড়া কিশোর সুমনকে মাধ্যমিক পর্যায়ে প্রতি মাসে এক হাজার টাকা ও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ে প্রতি মাসে দেড় হাজার টাকা করে দেওয়া হবে বলে জানানো হয়। প্রাইম ব্যাংকের সহায়তায় পাবনা জেলা প্রশাসন এই সাহসিকতার পুরস্কার দেয়।
সুমনের বয়স ১৩ থেকে ১৪ বছর। পাবনার চাটমোহর উপজেলার হান্ডিয়াল দ্বিমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণির ছাত্র সে। প্রচণ্ড সাহসিকতা ও পরোপকারের জন্য এলাকায় তার যথেষ্ট সুনাম রয়েছে। মানুষের বিপদে সবসময় পাশে থাকে সে। এ নিয়ে মাঝেমধ্যে মা-বাবার বকুনিও খেতে হয় তাকে।
গত ৩১ আগস্ট শুক্রবার সন্ধ্যায় চলনবিলে পাবনার চাটমোহর উপজেলার পাইকপাড়ায় তার চোখের সামনেই ঘটে নৌকাডুবির ঘটনা। এতে পাঁচজনের মৃত্যু হয়। তবে সুমন ও শাহনাজের সাহসিকতায় প্রাণে বেঁচে যান শিশু, নারী পুরুষসহ ১৭ জন। সুমন একাই ১০ জনকে তার ডিঙ্গি নৌকায় তুলে তীরে পৌঁছে দেয়।
কিশোর সুমন বলে, একটি ভালো কাজ করে সে এখন এলাকার হিরো। ওইদিন সন্ধ্যার দিকে চাটমোহরের পাইকপাড়া এলাকায় বিলের মধ্যে সে নৌকা চালাচ্ছিল। এ সময় সে দেখতে পায় একটি বড় ছৈওয়ালা নৌকার ওপরে কয়েকজন নারী ও পুরুষ মোবাইল ফোনে ছবি তুলছে। হঠাৎ তার চোখের সামনেই নৌকাটি ডুবে যায়। এ সময় দ্রুত ডিঙ্গি নৌকা নিয়ে একে একে ১০ জনকে উদ্ধার করে তীরে পৌঁছে দেয় সে।
অন্যদিকে, শাহনাজ খাতুন একজন সাধারণ গৃহিণী। স্বামী দিনমজুর। বিলে ঘটে যাওয়া নৌকাডুবিতে তিনি নৌকা চালিয়ে একাই সাতজনকে উদ্ধার করেন। তবে অন্য পাঁচজনকে উদ্ধার করতে না পারায় তাঁদের উভয়ের মনে কষ্ট রয়েছে।
পাবনা জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে কিশোর সুমন হোসেন ও গৃহবধূ শাহনাজ খাতুনকে পুরস্কৃত করার সময় উপস্থিত অতিথিরা। ছবি : এনটিভি
পাবনার জেলা প্রশাসক মো. জসিম উদ্দিন সুমন ও শাহনাজের সাহসিকতায় মুগ্ধ হয়ে তাদের শিক্ষা সহায়তা প্রদানসহ তাৎক্ষণিক পুরস্কার দেন।
এ সময় জেলা প্রশাসক বলেন, সুমন ও শাহনাজ মানবসেবার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। তারা নিজেদের জীবন বাজি রেখে ১৭ জন মানুষের জীবন বাঁচিয়েছে। তাই তারা বীর। তাদের সম্মান জানাতে পেরে আমরা গর্বিত।
অনুষ্ঠানে জেলা প্রশাসক ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন পাবনা জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা কাজী আতিউর রহমান, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মো. শাফিউল ইসলাম, প্রাইম ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মো. গোলাম রব্বানী প্রমুখ।