মুক্তিপণ না পাওয়ায় ৩ বছরের শিশুকে হত্যা
নারয়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলায় মুক্তিপণের টাকা না পেয়ে তিন বছর বয়সী শিশু জুঁইকে হত্যা করেছে অপহরণকারীরা। আজ শুক্রবার সকালে উপজেলার ভুলতা ইউনিয়নের টেকপাড়া গ্রামে নিজ বাড়ির পাশে বস্তাবন্দি অবস্থায় জুঁইয়ের মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। তার পুরো শরীর এ সময় স্কচটেপে মোড়ানো ছিল।
নিহত জুঁই টেকপাড়া গ্রামের কাপড় ব্যবসায়ী আনোয়ার হোসেনের মেয়ে।
জুঁইয়ের পরিবার ও আত্মীয়স্বজন জানান, গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল ৯টার দিকে বাড়ির পাশে খেলতে গেলে জুঁইকে অপহরণ করে দুর্বৃত্তরা। পরে দুপুর ২টার দিকে অপহরণকারীরা তার বাবার মোবাইলে ফোন করে ১০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে। শিশুটির পরিবার সে সময় তিন লাখ টাকা দিতে সম্মত হয়। আজ সকালে গাজীপুরের রাজেন্দ্রপুর রেলস্টেশনে গিয়ে সে টাকা দেওয়ার নির্দেশ দেয় অপহরণকারীরা।
এদিকে শিশু অপহরণ ও মুক্তিপণ দাবির ঘটনা রাতেই পুলিশকে জানায় জুঁইয়ের পরিবার। ধারণা করা হচ্ছে, কোনো মাধ্যমে সে খবর জানতে পেরে মোবাইল ট্র্যাকিংয়ের আশঙ্কায় শিশুটির পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ করে দেয় অপহরণকারীরা। এবং রাতের কোনো এক সময় শিশুটিকে হত্যা করে বাড়ির পাশে বস্তাবন্দি অবস্থায় ফেলে রেখে যায়। সকালে সে খবর পেয়ে রূপগঞ্জ থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে বস্তাবন্দি জুঁইয়ের মরদেহ উদ্ধার করে।
এ ঘটনায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে জুঁইয়ের পরিবার ও এলাকাবাসীর মাঝে। তাদের বাড়িতে গেলে দেখা যায়, জুঁইয়ের এক আত্মীয়া আহাজারি করতে করতে বলছেন, ‘নিতো গা দশ লাখ টাকা, তারপরও আমার ধনেরে আমার কাছে দিয়া যাইতো। আমি তো অস্বীকার যাই নাই। আমি রাতারাতি সব টাকা ব্যবস্থা কইরা লাইছিলাম।’
কারা ঘটাতে পারে এমন নৃশংস ঘটনা, এ পরিবারের সঙ্গে তেমন কারো শত্রুতার ইতিহাস আছে কিনা জানতে চাইলে জুঁইয়ের এক আত্মীয় বলেন, ‘তার (জুঁইয়ের পরিবারের) এমনিতে কোনো শত্রুতামি কারো সাথে ছিল না, তাঁর ফ্যামিলির…’
হত্যাকাণ্ড প্রসঙ্গে ওই আত্মীয় বলেন, ‘কিন্তু, তাঁর কাছে (জুঁইয়ের বাবা) যখন মুক্তিপণ দাবি করে এরপর থেইকা আমরা একটু বেশি খোঁজাখুঁজি শুরু করি, এবং আমাদের থানায় যাই, এবং থানা এবং আমাদের ফাঁড়ির সহায়তা নিয়া আমরা রাত্র ৩টা পর্যন্ত আমরা এইটা নিয়ে ঘোরাফেরা করি… তল্লাশি করি। পরবর্তীতে সকাল ৬টার দিকে, ফজরের পর দেখা গেছে একটা… বস্তাভর্তি একটা লাশ… বস্তাটা দেহা গেছে, বস্তাটা খোলার পরে দেহা গেছে এর (জুঁইয়ের) লাশ। তারা মুক্তিপণ দাবি করছে, কিন্তু আমরা বলি নাই যে- তোমাদের মুক্তিপণ দেব না, আমরা থানার সহযোগিতা নিয়া আমরা বলছি। কিন্তু সেইটা আর হইলো না, আমাদের লাশই পাইতে হইলো।’
মুক্তিপণ দিতে রাজি হওয়ার পরেও জুঁইকে জীবিত অবস্থায় উদ্ধার করতে না পারার শোক নিয়ে কাঁদতে কাঁদতে আরেক আত্মীয় বলেন, ‘এইখানে আপনার দশ লক্ষ টাকা দাবি করছিল। পরে আমরা দিতে চেয়েছিলাম। সময় দিছিল আজকে সকাল পর্যন্ত। এই সময়টা আর তো রইলো না। আমরা তিন লক্ষ টাকা দেওয়ার জন্য বলছিলাম। তো যে ফোন থেকে ফোন দেওয়া হইছিল, একবার ফোন দিয়ে ওটা সুইচ অফ করে রাখছে। তারপরে ওদের সাথে আর যোগাযোগ হয় নাই।’
এই হত্যাকাণ্ডের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করে কান্নাজড়িত কণ্ঠে জুঁইয়ের আরেক স্বজন বলেন, ‘এই সমাজে আর কোনো মায়ের বুক যেন এইভাবে খালি না হয়। আর কাউকে যাতে এইভাবে লাশ নিয়া… বাড়িতে নিয়া যাইতে না হয়। আজকে আমরা যে স্বজন হারিয়ে… আমরা যে ব্যথার্ত, এই ব্যথা যাতে… আর পৃথিবীতে কোনো মায়ের বাপের কষ্ট না হয়। আমরা হত্যাকারীর বিচার চাই এবং দৃষ্টান্তমূলক বিচার চাই। অবিলম্বে আমাদের সরকারের কাছে আবেদন থাকবে… সরকার আমাদেরকে সহযোগিতা করবে।’
এদিকে ওই ঘটনার পর জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পুলিশ আনোয়ার হোসেনের বাড়ির পাঁচ ভাড়াটে- সুলতান মিয়া, জিন্না মাদবর, জহিরুল, একরামুল ও তাঁর স্ত্রী সখিনা বেগমকে আটক করেছে।
রূপগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মনিরুজ্জামান জানান, হত্যাকারীদের গ্রেপ্তারে পুলিশের কার্যক্রম চলছে। আটক করা ব্যক্তিদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। এ ব্যাপারে তদন্তের পর যথাযথ আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান তিনি।