হলি আর্টিজানে গ্রেপ্তার হয়েছিলেন, এবার তাদেরই আত্মসমর্পণ
দীর্ঘ ৪০ ঘণ্টা জঙ্গি বিরোধী অভিযানের পর নরসিংদীর ‘নিলুফা ভিলা’ থেকে আত্মসমর্পণ করেছেন দুই নারী। তাঁদের নাম খাদিজা আক্তার মেঘনা (২৪) ও মৌ (২০)। এঁরা নব্য জেএমবির সদস্য বলে দাবি করেছে পুলিশ।
আজ বুধবার দুপুর আড়াইটার দিকে নরসিংদী সদর উপজেলার মাধবদী বড় মসজিদের সামনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিটের প্রধান ডিআইজি মনিরুল ইসলাম।
মনিরুল ইসলাম জানান, আত্মসমর্পণকারী নারীরা নব্য জেএমবির সদস্য। তাঁরা মানারাত ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির ফার্মেসি বিভাগের শিক্ষার্থী ছিলেন। ২০১৬ সালে হলি আর্টিজান বেকারিতে হামলার পর মিরপুর মডেল থানায় তাঁরা গ্রেপ্তার হয়েছিলেন। পরে প্রায় এক মাস কারাবন্দি থাকার পর তাঁরা জামিনে ছাড়া পান।
গত সোমবার রাত ১০টায় মাধবদীর সাততলা বাড়ি ‘নিলুফা ভিলা’ ও শেখেরচর ভগিরথপুরের এলাকায় একটি পাঁচতলা বাড়ি ঘিরে রাখে পুলিশ, সোয়াত ও সিটিটিসির সদস্যরা। পরে জঙ্গি সদস্যদের গ্রেপ্তারে শুরু হয় অপারেশন গর্ডিয়ান নট।
প্রথমে অভিযান শুরু হয় শেখেরচর ভগিরথপুর এলাকার বাড়িটিতে। অভিযানের একপর্যায়ে বাড়িটিতে দুজন নিহত হন। নিহতরাও নব্য জঙ্গি বলে দাবি করেছে পুলিশ।
নরসিংদীর মাধবদীর সাততলা বাড়ি ‘নিলুফা ভিলা’। ছবি : এনটিভি
আজ সম্মেলনে ওই নিহতদের নামও জানান সিটিটিসি প্রধান মনিরুল ইসলাম। তাঁদের নাম আবু আব্দুল্লাহ আল বাঙ্গালী (২৬) ও মনি (২০)। তাঁরা সম্পর্কে স্বামী-স্ত্রী ছিলেন বলেও তিনি জানান।
এ ঘটনার পর গতকাল মনিরুল ইসলাম বলেছিলেন, ‘আমরা তাদের আত্মসমর্পণ করতে বলেছিলাম। কিন্তু তারা আমাদের ওপর গুলি চালায়। পরে শুরু হয় বন্দুকযুদ্ধ। এখন তারা পুলিশের গুলিতে মারা গেছে, নাকি নিজেরা বিস্ফোরণ ঘটিয়ে মারা গেছে তা এখনও নিশ্চিত হওয়া যায়নি। আস্তানা থেকে একটি আগ্নেয়াস্ত্র এবং চারটি অবিস্ফোরিত বোমা উদ্ধার করা হয়েছে।’
পরে বিকেল ৪টার দিকে ওই আস্তানার অভিযান শেষ হয়। কিন্তু রাত হয়ে যাওয়ায় গতকাল নিলুফা ভিলায় অভিযান চালায়নি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা।
পরে আজ সকালে মাধবদীর সাততলা বাড়ি নিলুফা ভিলায় অভিযান চালানো হয়। জানা যায়, সকাল সাড়ে ৯টার দিকে সোয়াতের একটি দল বাড়িটিতে প্রবেশ করে। সিটিটিসির পক্ষ থেকে জানানো হয়, প্রথমে আত্মসমর্পণের জন্য জঙ্গিদের আহ্বান জানানো হবে। সাড়া না পেলে আইনানুগ ব্যবস্থায় অপারেশন চালানো হবে।
পরে দুপুর আড়াইটার দিকে এই ফ্ল্যাটে থাকা নারীরা আত্মসমর্পণ করলে শেষ হয় অপারেশন গর্ডিয়ান নট। তাদের বিরুদ্ধে মাধবদী থানায় সন্ত্রাস বিরোধী আইনে মামলা করা হবে বলে জানিয়েছেন সিটিটিসি প্রধান। দুই আস্তানার জঙ্গিদের মধ্যে যোগসাজস রয়েছে বলেও তিনি জানান। আগামী জাতীয় সংসদ নিবার্চন ও শারদীয় দুর্গাপূজার উৎসবকে ঘিরে তাদের বড় ধরনের জঙ্গি হামলার উদ্দেশ্য ছিল বলে দাবি সিটিটিসির।
মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা নেগোসিয়েশনের ওপরই জোর দিয়েছি, যেহেতু দুজনই নারী। শেষ পর্যন্ত আমাদের যে অনুমান এবং ইন্টেলিজেন্ট সঠিক হয়েছে। আজকে তাঁরা চেষ্টা করেছে ব্লাস্ট (বিস্ফোরণ) করার। একটা ব্লাস্ট হয়েছিলও। কিন্তু আমরা সোয়াতের তত্ত্বাবধায়নে, আমাদের বোম্ব ডিসপোজাল টিম এবং অন্য যারা আছে নেগোসিয়েশনে ভালো, তাঁরা শেষ পর্যন্ত এই দুই নারী জঙ্গিকে আত্মসমর্পণে রাজি করায়।’ এ অভিযানে পুলিশের কোনো সদস্য হতাহত হয়নি বলেও তিনি জানিয়েছেন।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা জানান, নিলুফা ভিলার তৃতীয় তলায় ‘মিফতাহুল জান্নাহ মহিলা মাদ্রাসা’ নামে একটি মাদ্রাসা রয়েছে। ভবনটির সপ্তম তলায় জঙ্গিদের অবস্থান চিহ্নিত করে পুলিশ। গত ৩ অক্টোবর এখানে ফ্ল্যাট ভাড়া নেন আত্মসমর্পণকারীরা। ছোট গদাইরচর গাংপাড় এলাকার জঙ্গিদের সঙ্গে এখানকার জঙ্গিদের সঙ্গে শেখেরচর আস্তানার জঙ্গিদের যোগসাজস ছিল।
এদিকে, জঙ্গি আস্তানার খবর ছড়িয়ে পড়ার পর এলাকার মানুষের মধ্যে আতঙ্ক দেখা দেয়। এলাকাটিতে স্থানীয় প্রশাসন ১৪৪ ধারা জারি করায় পুলিশের তৎপরতা ছিল বেশি। সকাল থেকেই জঙ্গি আস্তানার আশাপাশের দোকানপাট বন্ধ হয়ে যায়। আশেপাশের বাসার অনেকে জিম্মি হয়ে পড়েন। যারা ভোরে বাসা থেকে বের হন তাদের অনেকে বাসায় প্রবশে করতে পারছিলেন না।
স্থানীয়রা যায়, নিলুফা ভিলার ওই ফ্ল্যাটটি ছয় মাস আগে হাফিজ ভূঁইয়া নামের এক ব্যক্তি ভাড়া নেন। তিনি নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজার উপজেলার বাসিন্দা। গত সোমবার রাতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা সেখানে গেলে পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে বাসার ভেতরের বাতি বন্ধ করে দেওয়া হয়।