বাবা-ছেলেসহ চারজনের ফাঁসি, ২১ জনের যাবজ্জীবন
কিশোরগঞ্জের করিমগঞ্জ উপজেলায় জোড়া খুনের দায়ে বাবা-ছেলেসহ চারজনের ফাঁসির রায় দিয়েছেন আদালত। এছাড়া ২১ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডাদেশ দেওয়া হয়েছে। যাবজ্জীবন পাওয়া সব আসামিকে পাঁচ লাখ টাকা করে অর্থদণ্ড দিয়েছেন আদালত।
আজ মঙ্গলবার দুপুরে জেলার তৃতীয় অতিরিক্ত দায়রা জজ আদালতের বিচারক মো. আবু তাহের এ রায় দেন।
রায় ঘোষণার সময় দণ্ড পাওয়া ২৫ আসামিই এজলাসে উপস্থিত ছিলেন। রায়ের পরপরই সব আসামিকে কারাগারে পাঠিয়ে দেওয়া হয়।
ফাঁসির আদেশ পাওয়া আসামিরা হলেন মিজানুর রহমান ও তাঁর ছেলে আলামিন এবং নাজমুল ও স্বপন মিয়া।
অন্যদিকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডাদেশ পাওয়া আসামিরা হলেন গিয়াস উদ্দিন সরকার ও তাঁর তিন ছেলে সেলিম, আজাদ ও শামীম, দিদার, হাবীবুর রহমান, দুলাল মিয়া, ইসরাইল, জসিম উদ্দিন, রফিকুল ইসলাম, ইসলাম উদ্দিন, শাহাব উদ্দিন, আশরাফ উদ্দিন, কাঞ্চন মিয়া, কাঞ্চন, আলম, লোকমান, সোহেল, হারুন, রুকন উদ্দিন ও রতন। তাঁরা সবাই কিশোরগঞ্জের করিমগঞ্জ উপজেলার দেহুন্দা ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামের বাসিন্দা।
মামলার বিবরণে জানা যায়, ২০১২ সালের ২৪ আগস্ট আসামিরা করিমগঞ্জ উপজেলার দেহুন্দা গ্রামে কুবাদ মিয়া (৪০) ও তাঁর চাচাতো ভাই জাকারুলকে (২০) ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাত ও মারপিট করে গুরুতর আহত করে। পরে হাসপাতালে নেওয়ার পর তাঁদের মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় কুবাদ মিয়ার স্ত্রী সুজাতা আক্তার বাদী হয়ে করিমগঞ্জ থানায় ২৭ জনকে আসামি করে হত্যা মামলা করেন।
পরে তদন্ত শেষে ২০১৪ সালের ২১ আগস্ট গোয়েন্দা পুলিশের উপ-পরিদর্শক (এসআই) মোহাম্মদ মুর্শেদ জামান ২৫ জনকে আসামি করে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন।
এসআই মুর্শেদ জামান অভিযোগপত্রে জানান, ২০১২ সালের ২৩ আগস্ট রাতে নিহত কুবাদ মিয়ার ভাতিজা সাইফুল ও ভাতিজি জামাই নুরুল্লাহ দেহুন্দা গ্রামের কাঞ্চনের দোকানে চা খেতে যান। এ সময় নুরুল্লাহর মুঠোফোনটি দোকান থেকে হারিয়ে যায়। খোঁজাখুঁজি করেও না পেয়ে দোকানের মালিক কাঞ্চন তাঁদেরকে পরদিন আসতে বলেন। পরদিন ২৪ আগস্ট সকালে সাইফুল ও নুরুল্লাহ জাকারুলসহ আরো কয়েকজনকে নিয়ে কাঞ্চনের দোকানে যান। এ সময় কাঞ্চনের সঙ্গে তাদের বাকবিতণ্ডা হয়। একপর্যায়ে কাঞ্চন ও তাঁর লোকজন তাদের ওপর হামলা চালান। হামলায় আহত অন্যরা পালিয়ে গেলেও কাঞ্চনের লোকজন জাকারুল ও নুরুল্লাহকে একটি কলাবাগানে নিয়ে আটকে রাখেন ও মারধর করেন।
এ খবর পেয়ে কুবাদ মিয়াও কয়েকজনকে সঙ্গে নিয়ে তাদেরকে উদ্ধার করতে যান। সেখানে পৌঁছামাত্র কাঞ্চন মিয়ার লোকজন চারদিক থেকে তাদেরকে ঘিরে ফেলে এবং ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাতসহ বেদম মারপিট করে। এতে কুবেদ মিয়া গুরুতর আহত হন। আহত হন তাঁর সঙ্গে থাকা আরো কয়েকজন। পরে স্থানীয় লোকজন কুবাদ মিয়া ও জাকারুলসহ আহতদের উদ্ধার করে করিমগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায়। অবস্থার অবনতি ঘটলে কুবাদ মিয়া ও জাকারুলকে কিশোরগঞ্জ সদর জেনারেল হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। পরে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠালে রাতে তাদের মৃত্যু হয়।
এ মামলায় রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী হিসেবে ছিলেন অ্যাডভোকেট শাহ আজিজুল হক, আতাউর রহমান, এপিপি আব্দুস সালাম। আসামিপক্ষের আইনজীবী হিসেবে ছিলেন অ্যাডভোকেট মহিউদ্দিন আহমেদ ও আলী আজগর স্বপন।