গাজীপুরে পোশাক কারখানায় শ্রমিকদের বিক্ষোভ, আহত ১৮
গাজীপুরে বকেয়া বেতন-ভাতা পরিশোধের দাবিতে এক পোশাক কারখানার শ্রমিকরা কর্মবিরতি ও বিক্ষোভ করেছে। এ সময় বিক্ষুদ্ধ শ্রমিকরা কারখানার বিভিন্ন মালামাল ও দরজা-জানালার কাঁচসহ কয়েকটি গাড়ির কাঁচ ভাঙচুর করে।
শ্রমিকদের সঙ্গে পুলিশের ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ায় ১৮ জন আহত হয়েছে। আজ সোমবার গাজীপুর সিটি করপোরেশনের লক্ষ্মীপুরা এলাকায় ওই ঘটনা ঘটে।
গাজীপুর শিল্পাঞ্চল পুলিশের পরিদর্শক মো. আমজাদ হোসেন ও স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, লক্ষ্মীপুরা এলাকার ‘ইন্ট্রামেক্স’ নামের পোশাক কারখানায় কর্মরত স্টাফদের পাঁচ মাসের এবং শ্রমিকদের সেপ্টেম্বর মাসের বেতন বকেয়া রয়েছে। কারখানা কর্তৃপক্ষ তাদের ওই পাওনা পরিশোধের একাধিক তারিখ দিলেও তারা তা পরিশোধ করেনি। সর্বশেষ শ্রমিকদের সেপ্টেম্বর মাসের বেতন গতকাল রোববার পরিশোধ করার প্রতিশ্রুতি দিলেও তা পরিশোধ করেনি কর্তৃপক্ষ। এ নিয়ে শ্রমিকদের মাঝে অসন্তোষ দেখা দেয়। শ্রমিকরা বিক্ষুব্ধ হয়ে রোববার কর্মবিরতি ও বিক্ষোভ করে। ওইদিন তারা কারখানার বিভিন্ন মালামাল ও দরজা-জানালার কাঁচ ভাঙচুর করে। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
এ ঘটনার জের ধরে শ্রমিকরা দ্বিতীয়দিনের মতো সোমবার সকালে কারখানায় গিয়ে তাদের পাওনাদি পরিশোধের দাবিতে কর্মবিরতি ও বিক্ষোভ করতে থাকে। তাদের সঙ্গে কারখানার কর্মচারীরাও যোগ দেয়। এ সময় তারা কারখানায় ভাঙচুর করে। পরে বিকেল তিনটার দিকে কারখানার ব্যবস্থাপনা পরিচালক কারখানায় আসেন। এ সময় পুলিশের মধ্যস্থতায় আলোচনার পর কারখানার ব্যবস্থাপনা পরিচালক কারখানার শ্রমিক-কর্মচারীদের পাওনাদি আগামী ২৪ অক্টোবর পরিশোধের ঘোষণা দেন। কিন্তু আন্দোলনরত শ্রমিক-কর্মচারীরা ওই ঘোষণা প্রত্যাখ্যান করে সোমবারের মধ্যে পরিশোধের দাবি জানিয়ে বিক্ষোভ শুরু করে। একপর্যায়ে আন্দোলনরতরা পুলিশ ও কারখানার মালিকের ওপর চড়াও হয়। এ সময় তাদের ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ লাঠিপেটা করলে শ্রমিকরা আরো উত্তেজিত হয়ে উঠে এবং বৃষ্টির মতো ইটপাটকেল নিক্ষেপ করতে থাকে।
একপর্যায়ে শ্রমিকরা কারখানা থেকে বের হয়ে ঢাকা-গাজীপুর সড়কে অবস্থান নেওয়ার চেষ্টা করলে পুলিশ তাদের বাধা দেয়। এতে পুলিশের সঙ্গে শ্রমিকদের ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া শুরু হয়। এ ঘটনায় পথচারী ও স্থানীয় ব্যবসায়ীরা আতঙ্কিত হয়ে এদিক ওদিক ছোটাছুটি শুরু করে।
বিক্ষুব্ধ শ্রমিক-কর্মচারীরা পার্শ্ববর্তী ঢাকা-গাজীপুর সড়কে চলাচলরত কয়েকটি গাড়ির কাচও ভাঙচুর করে। একপর্যায়ে গাজীপুর শিল্প পুলিশ বিকেলে শর্টগানের ৩১ রাউন্ড গুলি ও টিয়ার সেল ২২ রাউন্ড ছুড়ে আন্দোলনরতদের ছত্রভঙ্গ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এ ঘটনায় গাজীপুর মহানগর পুলিশের (জিএমপি) গাজীপুর সদর থানার উপপরিদর্শক (এস আই) বশির আহমেদসহ ১৮ জন আহত হয়েছে। আহতদের মধ্যে এস আই বশির আহমেদ ও কারখানার কোয়ালিটি কন্ট্রোলার আব্দুল আলিমের হাতে গুলি লাগে। লাঠিপেটায় আহত হন কারখানার প্যাকিংম্যান মারফত আলী (২৫), আয়রনম্যান মোবারক হোসেন (৩০)। তাঁরা সবাই শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
গাজীপুর শিল্প পুলিশের সহকারী পুলিশ সুপার মকবুল হোসেন জানান, গাজীপুর শিল্প পুলিশ শর্টগানের ৩১ রাউন্ড গুলি ও টিয়ার গ্যসের শেল ২২ রাউন্ড ছুড়ে ওই কারখানার উত্তেজিত শ্রমিক-কর্মচারীদের ছত্রভঙ্গ করে বিকেলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
কারখানার কোয়ালিটি ইন্সপেক্টর মো. আমান উল্লাহ ও শ্রমিক শহিদুল ইসলাম জানান, কারখানার স্টাফদের যাদের বেতন ১৫-২৫ হাজার টাকা তাদের পাঁচ মাস, যাদের বেতন ২৫-৪০ হাজার তাদের বেতন ছয় মাস এবং যাদের বেতন তারও উপরে তাদের সাত মাসের বেতন বকেয়া রয়েছে। শ্রমিকদের পাওনাদি পূর্ব নির্ধারিত গত ১০ তারিখে পরিশোধের কথা থাকলেও পরিশোধ করেনি। পরবর্তী সময়ে কারখানা কর্তৃপক্ষ একাধিকবার বকেয়া পাওনাদি পরিশোধের আশ্বাস দিলেও তা পরিশোধ করেনি। এতে শ্রমিক-কর্মচারীরা ক্ষুব্ধ হয়ে কর্মবিরতি ও বিক্ষোভ করেছে। শ্রমিকদের সঙ্গে কারখানার স্টাফরাও (কর্মচারী) একাত্মতা প্রকাশ করে আন্দোলনে যোগ দেয়।