পোশাক শ্রমিকদের মজুরি সর্বনিম্ন ১৬ হাজার করার দাবি
পোশাক শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি ১৬ হাজার টাকা করার দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ গার্মেন্টস শ্রমিক সংহতি। আজ শুক্রবার জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে বিক্ষোভ সমাবেশ করে সংগঠনটি।
সমাবেশে বক্তারা বলেন, মালিকপক্ষের চাপে গত ১৩ সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রীর বরাতে শ্রমপ্রতিমন্ত্রী পোশাক শ্রমিকদের সর্বনিম্ন মজুরি ৮ হাজার টাকা ঘোষণা করেন। অথচ পোশাক শ্রমিকরা গত ২ বছর ধরে মজুরি ১৬ হাজার টাকা করার দাবি জানিয়ে আসছে। এ টাকায় জীবনযাপন করা অসম্ভব। এ ছাড়া মাত্র একটি গ্রেডের মজুরি ঘোষণাকে নতুনভাবে শ্রমিকদের বিভ্রান্ত করার প্রচেষ্টা বলেও সংগঠনটির নেতারা মনে করেন। সংগঠনটির পাঠানো সংবাদবিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য দেওয়া হয়।
নেতারা বলেন, ‘গত পাঁচ বছরে মূল্যস্ফীতি এবং বাজারদর বিবেচনা করলে ঘোষিত টাকায় শ্রমিকদের প্রকৃত আয় বৃদ্ধি পায়নি। শ্রমিকদের বেসিক প্রস্তাব করা হয়েছে চার হাজার একশ টাকা যা গতবারের তুলনায়ও কম । তিন হাজার টাকা বেসিক মোট মজুরির ৫৬ দশমিক ৬০ শতাংশ। আর ঘোষিত চার হাজার একশ টাকায় হয় মোট মজুরির ৫১ দশমিক ২৫ শতাংশ। বেসিক কম হলে শ্রমিকদের অতিরিক্ত কাজসহ অন্য খাতেও আয় কমবে।’
নেতারা আরো বলেন, ‘বাসা ভাড়া দুই হাজার ৫০ টাকা, একটি হাস্যকর প্রস্তাব। এই টাকায় শ্রমিক এলাকায় পরিবার নিয়ে কোন ঘর নিয়ে থাকা সম্ভব না। ন্যূনতম চার হাজার টাকা দরকার বাসযোগ্য ঘরে থাকার জন্য। গত পাঁচ বছরে বাজারে জিনিসপত্রের দাম লাফিয়ে কয়েকগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। আট হাজার টাকায় শ্রমিকের পক্ষে ওই একই জিনিস এখন কেনা সম্ভব হবে না। অর্থাৎ প্রকৃত আয় কমেছে। আর এ কারণেই শ্রমিকরা ৮ হাজার টাকার প্রস্তাবনা গ্রহণ করেনি।’
নেতারা জানান, সপ্তম গ্রেডে মাত্র পাঁচ শতাংশ সহকারীরা কাজ করেন। বাকি পরিচালকসহ অন্য শ্রমিকদের মজুরি প্রস্তাবনায় না আনাটা শ্রমিকদেরকে ঠকানোর নতুন কৌশল বলে তাঁরা অভিহিত করেন।
বক্তারা বলেন, ‘রপ্তানি আয়ে শীর্ষ এই খাতে রপ্তানি আয় বেড়েছে গত পাঁচ বছরে প্রায় ২৫ শতাংশ। অথচ শ্রমিক সংখ্যা আগের মতোই আছে। শ্রমিকদের যথাযথ মজুরি দিলে উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি পাবে। আট হাজার টাকায় ক্যালোরির চাহিদা পুরণও সম্ভব না। অথচ মালিকদের চাপে সরকার শ্রমিকদের মজুরি তাদের কাঙ্খিত ১৬ হাজারের দাবির ধারে কাছেও করেনি। বেশির ভাগ শ্রমিক এর মজুরি এখনো ঘোষণাই করা হয়নি।’ আন্দোলন বন্ধ করতে নানা রকম ভয়ভীতি ও হুমকি দেখানো হচ্ছে বলেও তাঁরা জানান। তাঁরা এসব ভয়ভীতি উপেক্ষা করে ঐক্যবদ্ধ ও গণতান্ত্রিক আন্দোলন অব্যাহত রাখতে শ্রমিকদের আহ্বান জানান।
সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন গার্মেন্টস শ্রমিক সংহতির সভাপ্রধান তাসলিমা আখতার। এ ছাড়া বক্তব্য রাখেন ট্রেড ইউনিয়ন ফেডারেশনের সভাপতি শাহ আতিউল ইসলাম, গণসংহতি আন্দোলনের রাজনৈতিক পরিষদের অন্যতম নেতা ফিরোজ আহমেদ, নারী সংহতির সভাপতি শ্যামলী শীল, ছাত্র ফেডারেশনের সভাপতি গোলাম মোস্তফা।
সমাবেশে আরো বক্তব্য দেন গার্মেন্ট শ্রমিক সংহতির সাধারণ সম্পাদক জুলহাস নাইন বাবু, সহ-সম্পাদক অঞ্জন দাস, সাংগঠনিক সম্পাদক আমিনুল শামাসহ, মুসা কলিমুল্লাহ, সেলিনা আক্তার, শাহ আলম প্রমুখ।