প্রস্তুত বিএসএমএমইউ, সিদ্ধান্ত নেয়নি কারা কর্তৃপক্ষ
কারাবন্দি বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার চিকিৎসার জন্য প্রস্তুত রয়েছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) কর্তৃপক্ষ। তবে কখন তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে আসা হবে, সে ব্যাপারে এখনো সিদ্ধান্ত নেয়নি কারা কর্তৃপক্ষ। গতকাল বৃহস্পতিবার রাতেই এ-সংক্রান্ত কাগজপত্র পেয়েছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।
আজ শুক্রবার সকালে এ বিষয়ে বিএসএমএমইউ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আবদুল্লাহ আল হারুন এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘হাইকোর্টের নির্দেশনা রাতে আমরা পেয়েছি। খালেদা জিয়ার চিকিৎসার জন্য আমাদের প্রস্তুতি রয়েছে। তবে কারা কর্তৃপক্ষ কখন আনবে, এ বিষয়টি এখনো আমাদের জানানো হয়নি।’
নতুন করে পাঁচ সদস্যের মেডিকেল বোর্ড গঠন করার বিষয়ে হাসপাতাল পরিচালক বলেন, ‘এখনো নতুন মেডিকেল বোর্ড গঠন করা হয়নি। তবে আশা করছি, দ্রুত নতুন করে মেডিকেল বোর্ড গঠন করা হবে।’
এদিকে, সাবেক প্রধানমন্ত্রীকে কারাগার থেকে কখন হাসপাতালে আনা হতে পারে—এমন প্রশ্নের জবাবে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারারক্ষী জাহাঙ্গীর আলম এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘হাইকোর্টের আদেশ গতকাল রাতে পৌঁছেছে। তবে রায় পৌঁছার পর কারাগারের অনেক কাজ রয়েছে। আজকে হাসপাতালে নেওয়ার বিষয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।’
এ ব্যাপারে বিএনপির আইনবিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার কায়সার কামাল এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘আমরা আদালতের আদেশ বিশেষ বার্তা প্রেরকের মাধ্যমে রাতেই কারা কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠিয়েছি। তাঁরা সেটি গ্রহণ করেছেন। আশা করছি, এ নির্দেশনার আলোকে খালেদা জিয়ার সঙ্গে পরামর্শক্রমে কারা কর্তৃপক্ষ দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ নেবে।’
গতকাল বৃহস্পতিবার কারাবন্দি বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে দ্রুত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে ভর্তি এবং স্বল্প সময়ের মধ্যে নতুন করে পাঁচ সদস্যের মেডিকেল বোর্ড গঠন করে চিকিৎসা দিতে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।
এই মেডিকেল বোর্ডে নতুন করে তিনজন চিকিৎসক অন্তর্ভুক্ত করতে বলা হয়েছে। তবে তাঁরা বিএনপিপন্থী চিকিসকদের সংগঠন ড্যাব ও আওয়ামীপন্থী চিকিৎসকদের সংগঠন স্বাচিপের কেন্দ্রীয় বা জেলা পর্যায়ের সদস্য হতে পারবেন না।
মেডিকেল বোর্ডের অপর দুই সদস্য হিসেবে আগের বোর্ডের সদস্য বঙ্গবন্ধু মেডিকেলের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ডা. আবদুল জলিল চৌধুরী ও ডা. বদরুন্নেসাকে রাখার নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।
আদেশে আরো বলা হয়েছে, খালেদা জিয়া তাঁর পছন্দমতো ফিজিওথেরাপিস্ট, গাইনোকলজিস্ট ও টেকনোলজিস্ট নিতে পারবেন। এ ছাড়া প্রয়োজনে খালেদা জিয়া মেডিকেল বোর্ডের অনুমতিক্রমে এর বাইরে থেকেও চিকিৎসক আনতে পারবেন।
খালেদা জিয়া যেহেতু একজন সাবেক প্রধানমন্ত্রী, তাই তাঁকে জেল কর্তৃপক্ষ এবং বঙ্গবন্ধু মেডিকেল হাসপাতালের কর্তৃপক্ষকে যথাযথ সম্মানের সঙ্গে মানসম্মত চিকিৎসা দিতে বলেছেন আদালত।
এর আগে দেশের বিশেষায়িত কোনো হাসপাতালে খালেদা জিয়ার চিকিৎসা চেয়ে হাইকোর্টে রিট আবেদন জানান খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা। গত ৯ সেপ্টেম্বর রিটটি দায়ের করা হয়। রিটের শুনানিতে আইনজীবীরা বলেন, পাঁচ সদস্যের চিকিৎসকদের মধ্যে তিনজনই আওয়ামী লীগপন্থী চিকিৎসকদের সংগঠন স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের (স্বাচিপ) কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য। তাই তাঁদের কাছ থেকে খালেদা জিয়া নিরপক্ষে চিকিৎসা পাবেন না বলে আইনজীবীরা আদালতকে অবহিত করেন। এরপর দুদিনব্যাপী শুনানি শেষে আদালত গতকাল রায় ঘোষণা করেন।
গত ৮ ফেব্রুয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় খালেদা জিয়াকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড ও আর্থিক জরিমানা করা হয়। রায় ঘোষণার পরপরই খালেদা জিয়াকে পুরোনো কেন্দ্রীয় কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয়। বর্তমানে তিনি সেখানেই আছেন।