কোটা বহালের দাবিতে শাহবাগে অবরোধ, যানজটে ভোগান্তি
প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির সরকারি চাকরিতে কোটা বাতিল করার সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে এবং সরকারি সব চাকরিতে ৩০ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধা কোটা বহালের দাবিতে আজ সকাল থেকে ফের রাজধানীর শাহবাগ মোড় অবরোধ করেছেন মুক্তিযোদ্ধার সন্তানরা।
মূলত মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সন্তান কমান্ডের ডাকে এই অবরোধ কর্মসূচি ঘোষণা করা হলেও এতে মুক্তিযোদ্ধাদের পরিবারের অনেকে অংশ নিয়েছেন। আজ সকাল থেকে রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ এই সড়ক-মোড় অবরোধের ফলে গাড়ি চলাচল অনেকটাই থমকে যায়। এর ফলে সকালবেলা অফিসমুখো মানুষদের ব্যাপক ভোগান্তির মধ্যে পড়তে হয়।
মুক্তিযোদ্ধার সন্তানরা সেখানে কোটা বহালের দাবিতে মাটিতে বসে স্লোগান দিচ্ছেন। পাশাপাশি সেখানে গণসংগীতও পরিবেশিত হচ্ছে। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে জমায়েতও বাড়ছে।
সকালে শাহবাগ মোড়ে গিয়ে দেখা যায়, শাহবাগ মোড়ে অবরোধ তৈরির কারণে মতিঝিল বা মৎস্য ভবন থেকে শিশু পার্ক হয়ে গাড়ি চলাচল করতে পারছে না। আবার সায়েন্স ল্যাব থেকে মতিঝিলমুখী গাড়িগুলো শাহবাগে এসে হোটেল রূপসী বাংলা হয়ে যাচ্ছে। কারওয়ান বাজার থেকে মতিঝিল, যাত্রাবাড়ীগামী গাড়িগুলোও শাহবাগ দিয়ে না যেতে পেরে রূপসী বাংলার পাশ দিয়ে চলে যাচ্ছে কাকরাইলের দিকে।
মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সন্তান কমান্ডের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ছয়টি দাবিতে তাঁরা সড়কে অবস্থান নিয়েছেন। তাঁদের দাবির মধ্যে রয়েছে—সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধ, বঙ্গবন্ধুকে কটাক্ষকারীদের বিচার, সরকারি চাকরিতে পরীক্ষার শুরু থেকেই মুক্তিযোদ্ধা কোটা বহাল রাখা, কোটা আন্দোলন চলাকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের বাসভবনে হামলাকারীদের দ্রুত গ্রেপ্তার ও বিচার দাবি ইত্যাদি।
বিক্ষোভকারীরা আরো বলেন, সরকার যেদিন কোটা বাতিলের প্রজ্ঞাপন জারি করবে, সেদিনই তাঁরা আইনি পদক্ষেপ নেবেন। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত তাঁদের এই আন্দোলন চলবে।
এর আগে গতকাল বুধবার দুপুরে সরকারি চাকরিতে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণিতে সব ধরনের কোটা বাতিলের সুপারিশ অনুমোদন করে মন্ত্রিপরিষদ। তবে তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণিতে কোটা আগের মতোই বহাল থাকছে। এ ব্যাপারে দুই-তিন দিনের মধ্যেই প্রজ্ঞাপন জারির কথা রয়েছে।
এর পর কোটা বাতিলের প্রতিবাদে মুক্তিযোদ্ধার সন্তানরা গতকাল বুধবার রাত ৮টার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি থেকে বিক্ষোভ মিছিল করতে করতে শাহবাগ গিয়ে অবরোধ করেন। তাঁদের অবরোধের ফলে শাহবাগে যান চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। অবরোধ হয় রাজশাহীতেও।
গত ১৭ সেপ্টেম্বর সরকারি চাকরিতে নবম থেকে ত্রয়োদশ গ্রেড পর্যন্ত, অর্থাৎ প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির চাকরিতে কোটা পদ্ধতি বাতিলের সুপারিশ করে মন্ত্রিপরিষদ সচিব শফিউল আলমের নেতৃত্বাধীন কমিটি। সচিব কমিটি মোট তিনটি সুপারিশ করেছিল। পরে তা অনুমোদনের জন্য প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পাঠানো হয়। প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদন শেষে তা আসে মন্ত্রিসভায়। মন্ত্রিসভায় অনুমোদনের পর তা প্রজ্ঞাপন জারির অপেক্ষায় রয়েছে।
বর্তমান সরকারি চাকরিতে বেতন কাঠামো অনুযায়ী মোট ২০টি গ্রেড রয়েছে। এর প্রথম গ্রেডে অবস্থান করেন সচিবরা। আর প্রথম বা দ্বিতীয় শ্রেণির কর্মকর্তা হিসেবে যাঁরা নিয়োগ পান, তাঁদের শুরুটা হয় নবম থেকে ত্রয়োদশতম গ্রেড থেকে। একজন গেজেটেড বা নন-গেজেটেড প্রথম শ্রেণির কর্মকর্তা নবম গ্রেডে নিয়োগ পেয়ে থাকেন।
এ ক্ষেত্রে মুক্তিযোদ্ধা, নারী, আদিবাসী, প্রতিবন্ধী, জেলা কোটাসহ নানা ধরনের কোটা রয়েছে। এর মধ্যে ৩০ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধা কোটা, ১০ শতাংশ জেলা কোটা, ১০ শতাংশ নারী কোটা, ৫ শতাংশ ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী কোটা ও শর্ত সাপেক্ষে ১ শতাংশ প্রতিবন্ধী কোটা, অর্থাৎ মোট ৫৬ শতাংশ কোটা সংরক্ষণের বিধান রয়েছে।
এই কোটা পদ্ধতি সংস্কারের দাবিতে আন্দোলন শুরু করেন শিক্ষার্থী ও চাকরিপ্রত্যাশীরা। তাঁদের দাবি ছিল, কোটা ১০ শতাংশে নামিয়ে আনা। কিন্তু সরকার প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির চাকরির ক্ষেত্রে ৫৬ শতাংশ কোটাই বাতিল করে দিয়েছে। তবে সচিব কমিটি তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির চাকরির জন্য কোটা বাতিলের ব্যাপারে কোনো সুপারিশ করেনি। ফলে এ ক্ষেত্রে বর্তমানে যে নিয়ম বহাল রয়েছে, তা-ই থাকবে।