নির্বাচন কমিশনে একক কর্তৃত্ব বন্ধে নির্দেশনা জারি
শুধু প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নুরুল হুদা ও কমিশন সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ নন, নির্বাচন কমিশনের সব কাজে এখন বাকি চার কমিশনারের কাছেও নথি উপস্থাপন করা হবে। ফলে সিইসি ও সচিবের একক কর্তৃত্ব আর থাকছে না।
গত সোমবার এ বিষয়ে এক নির্দেশনা জানানো হয়। একক কর্তৃত্ব নিয়ে কে এম নুরুল হুদার নেতৃত্বধীন ইসিতে প্রশ্ন ওঠায় এ আদেশ জারি করা হয়েছে। পরে আজ বুধবার এসব তথ্য জানা যায়।
নির্বাচন কমিশন সূত্রে জানা যায়, ইসি সচিবালয়ের অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে বা সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে সিইসি কে এম নুরুল হুদা ও ইসি সচিব হেলালুদ্দীন আহমদকে ছাড়া অন্য চার নির্বাচন কমিশনারদের জানানো হয় না। এতে সিইসি ও সচিবের একক কর্তৃত্ব নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন চার নির্বাচন কমিশনার।
এ বিষয়ে তাঁরা ‘ইসি সচিবালয়ের কার্যক্রমে বিধি-বিধানের ব্যত্যয় ঘটেছে’ উল্লেখ করে একটি আন-অফিসিয়াল নোটও (ইউও নোট) দিয়েছিলেন। ইউনোটটি সচিবকে দেওয়া হলে তাঁর একটি কপি সিইসিকেও দেওয়া হয়।
চার নির্বাচন কমিশনারের ইউও নোটে বলা হয়েছিল, ‘নির্বাচন কমিশন কার্যপ্রণালী বিধিমালার ৩ বিধির উপ-বিধি ৫ এ কমিশনের কাছে উপস্থাপিত বিষয়গুলো নিষ্পত্তির উল্লেখ করা হয়েছে। যে পদ্ধতিতেই নিষ্পত্তি করা হোক না কেন বিধির ৪ (৪) উপ-বিধি মতে সংখ্যাগরিষ্ঠের মতামতের ভিত্তিতে বিষয়াদি নিষ্পত্তি করার বিধান থাকলেও অনেক ক্ষেত্রে লঙ্ঘিত হয়েছে বলে প্রতীয়মান হয়।’
গত সোমবার ইসির জ্যেষ্ঠ সহকারী সচিব মো. শাহ আলম স্বাক্ষরিত অফিস আদেশে বলা হয়, ‘ইসি সচিবালয়ের সব কার্যক্রম পরিচালনায় বিভিন্ন বিধি-বিধান, রীতি, পদ্ধতি প্রচলিত রয়েছে। সচিবালয়ের কিছু কিছু কার্যক্রমে ইসি সচিবালয় আইন ও কার্যপ্রণালী বিধিমালা এর বিধি বিধানের ব্যত্যয় ঘটেছে। যা চারজন নির্বাচন কমিশনারের নজরে এসেছে। এ সংক্রান্ত বিধি-বিধান প্রতিপালন করে ইসি সচিবালয়ের সব কাজ পরিচালনার জন্যে নির্বাচন কমিশন নির্দেশনা দিয়েছেন।’
মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তা-কর্মচারী থেকে শুরু করে ইসি সচিবালয়ের অতিরিক্ত সচিব বরাবর পর্যন্ত এ নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
আইন-বিধি যুক্ত করে অফিস আদেশে বলা হয়েছে, ‘শাখা হতে কোনো বিষয়ে নথি উপস্থাপনকালে তা কোন পর্যায়ে নিষ্পত্তি হবে তা নথিতে উল্লেখ থাকতে হবে। নির্বাচন কমিশন বরাবর কোন নথি উপস্থাপন হবে তা কার্যপ্রণালী বিধির তফসিলে উল্লেখ রয়েছে। নির্বাচন কমিশন বরাবর উপস্থাপিত হবে এমন বিষয়াদির ক্ষেত্রে এ বিধির ৩(৫) অনুসরণ করতে হবে।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে নির্বাচন কমিশনার মো. রফিকুল ইসলাম এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের সামগ্রিক গুরুত্বপূর্ণ কর্মকাণ্ড সম্পর্কে যাতে আমাদের (চার নির্বাচন কমিশনার) জানানো হয় সেজন্য একটি ইউও নোট দিয়েছিলাম ইসি সচিবালয়কে। ওই ইউও নোটে চারজন নির্বাচন কমিশনার স্বাক্ষর করেছেন। নোটে আমরা ইসি সচিবালয়কে বিধি-বিধান অনুসরণের জন্য বলেছি। এখন তাঁরা আমাদেরকে সব তথ্যই জানাচ্ছে।’
ইসি সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ বলেন, ‘আমরা সচিবালয়ের সকল কার্যক্রম মাননীয় কমিশনারদেরকে জানাতে নির্দেশনা জারি করেছি। এখন সব বিষয়েই তাদেরকে জানানো হচ্ছে।’
জানা যায়, বেশ অনেকদিন ধরেই নির্বাচন কমিশনে বেশ কিছু বিষয়কে কেন্দ্র করে দ্বন্দ্ব শুরু হয়েছে। যার শুরু হয়েছে গণপ্রতিনিধিত্ব (আরপিও) সংস্কার সংক্রান্ত কমিশন বৈঠক থেকে। ওইদিন ইভিএমের বিরোধিতা করে নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার নোট অব ডিসেন্ট দিয়ে সভা বর্জন করেছিলেন। তারপর থেকে আজও একটি কমিশন সভা অনুষ্ঠিত হয়নি। এর ভেতরে আবার সম্প্রতি ইসি সচিবালয়ের কার্যক্রমে বিধি-বিধানের ব্যত্যয় ঘটেছে উল্লেখ করে নির্বাচন কমিশনাররা একটি আন-অফিসিয়াল নোট (ইউও নোট) দিয়েছিলেন। তবে এক মাস পর প্রধান নির্বাচন কমিশনারের কক্ষে অন্য চার কমিশনার দীর্ঘ সময় বৈঠক করেন। এবং বিভিন্ন বিষয় নিয়ে তাঁরা আলোচনা করেন বলেও জানা গেছে।